বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সারা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত। এযাবৎকাল মানুষ কক্সবাজার বলতে তার ঐ বিশাল সৈকতকেই বুঝতো। আর আশেপাশের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ছিল হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন ইত্যাদি। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে মেরিন ড্রাইভ রোডটা হওয়ার পরে তার আশেপাশে অনেক নতুন নতুন দর্শনীয় স্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে মানুষ ঘুরতে পছন্দ করে, হাতে টাকা থাকলে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ে অজানার উদ্দেশ্যে। এই অজানাকে জানা এবং নতুন নতুন ট্যুরিস্ট এট্রাকশন খুঁজে বের করার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে যেটা বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আগে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা -এই পাঁচটি জিনিস ছিল মৌলিক চাহিদা। আর এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে ঘুরে বেড়ানো। মানুষের হাতে টাকা আসলে অন্য কিছু হোক না হোক বেড়াতে যেতেই হবে। অবশ্য এই বেড়ানোর উপকারীতাও অনেক। এতে করে শরীর, মন ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
আজ আমরা জানবো কক্সবাজারের একটা প্রায় নতুন পরিচিত লাভ করা জায়গা সম্পর্কে, যার নাম 'পাটুয়ারটেক বিচ'। এটা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় পড়েছে। স্থানীয় ভাষায় এটাকে 'পাথর রাণী পাটুয়ারটেক' বলা হয়ে থাকে। কেননা এখানে সেন্ট মার্টিনের মতো প্রচুর প্রবাল পাথর রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের মেইন রোড থেকে নিচে নেমে বিচের দিকে আগালেই পুরো বিচ জুড়ে হাজারো প্রবাল পাথর দেখতে পাবেন, এবং এক মুহুর্তের জন্য মনে হবে আপনি সেন্ট মার্টিনে আছেন। এখানে বিচের উপরে রাস্তার গা ঘেঁষে বেশকিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেখানে আপনি সকাল, দুপুর বা বিকেলের খাবার পাবেন। তবে ট্যুরিস্ট স্পট বলে খাবারের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের চেকপোস্টও রয়েছে যারা এখানকার পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তাছাড়া এই মেরিন ড্রাইভ ধরে প্রচুর মাদক পাচার ও চোরাচালান হয়, যা মূলত মায়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে কক্সবাজার শহরে ঢোকে, পরে সেটা ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলো আটকানোর জন্যই পুরো মেরিন ড্রাইভের অনেকগুলো জায়গায় এমন পুলিশ চৌকি দেখতে পাবেন। তারা টেকনাফের দিক থেকে আসা প্রত্যেকটা গাড়ি ও সন্দেহভাজন মানুষজনকে তল্লাশি করেন।
এই পাটুয়ারটেক বিচে যেতে হলে আপনাকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়ে অবস্থিত ডলফিন স্কয়ার থেকে গাড়ি নিতে হবে। এখান থেকে কিছু মিনিবাস টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সেগুলোতে টিকেট কেটে যেতে পারেন, অথবা সাথে যদি বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্য থাকে তাহলে একটা জীপ গাড়ি (স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে চাঁন্দের গাড়ি) ভাড়া করেও যেতে পারেন, অথবা সিএনজি বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করেও নিয়ে যেতে পারেন। এখানে বলে রাখি সিএনজি বা অটোরিকশায় পাটুয়ারটেক পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নিবে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে, ড্রাইভারদের সাথে ভাড়া নিয়ে বেশ দরকষাকষি করা লাগে। মেরিন ড্রাইভ ধরে সোজা যেতে যেতে যেসব জায়গা গুলোকে পেছনে ফেলে যাবেন তা হলো: হিমছড়ি, রেজুখাল, সোনাপাড়া সৈকত, ইনানী সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি। এই ইনানী বিচ থেকে আরও প্রায় ৭ কিলোমিটার সামনে গেলেই তবে পাটুয়ারটেক বিচের দেখা পাবেন। ইনানী থেকে পাটুয়ারটেক যাওয়ার পথে লাল কাঁকড়া বিচ সহ আরও কিছু ছোট-বড় রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের দেখা মিলবে। এভাবেই এক সময় পাটুয়ারটেক বিচে পৌঁছে যাবেন।
এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অবর্ননীয় ও নয়নাভিরাম সুন্দর। একপাশে বিশাল বিস্তীর্ণ সমুদ্রের জলরাশি, ঠিক তার অপরপাশে সুবিশাল পাহাড় একেবারে মেরিন ড্রাইভ রাস্তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। এই পাহাড় আর সমুদ্রের মেলবন্ধন আসলেই দেখার মতো, এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আপনাকে সেখানে যেতে হবে। এটা দৃশ্য বলে বা লিখে বোঝানো যাবেনা। আজকাল এখানেও নানা বয়সী পর্যটকের আনাগোনা দেখা যায়। কেউ সাগরতীরে পাথরে উপরে বসে সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করছে, কেউ তীরে আছড়ে পড়া বড় বড় ঢেউয়ে নিজের পা ভেজাচ্ছে, কেউ দলবেঁধে বা একাকী ছবি তোলায় ব্যস্ত, কেউ তাদের কেবল হাঁটতে শেখা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে বিচে হেঁটে বেড়াচ্ছে। এরকম নানাবিধ চিত্র সেখানে দেখা যায়। দূরে সমুদ্রের গভীরে অনেকগুলো মাছ ধরার ট্রলার দেখতে পাবেন, বিচের তীরেও কিছু জেলে সম্প্রদায়ের মানুষকে জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্যও দেখা মিলতে পারে।
এখানে একটা বিড়ম্বনা রয়েছে, তা হলো ফটোগ্রাফার। এই ফটোগ্রাফাররা দলে দলে যেচে এসে আপনার ফটো তুলে দিতে চাইবে। যদি আপনার নিজের ক্যামেরা বা ভালো মোবাইল ফোন সাথে থাকে তাহলে তাতেই ছবি তোলার কাজটা সেরে নিবেন। সাথে যদি কোন লোক না থাকে বা আপনি একা হন তাহলে নিজে নিজে সেলফি তুলবেন অথবা আপনারই মতো কোন একজন ভদ্রলোক পর্যটককে অনুরোধ করবেন আপনার কিছু ছবি তুলে দিতে। একান্তই যদি ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলতেই হয় তাহলে আগেভাগে তাদের সাথে দরদাম ফাইনাল করে নিবেন, তাছাড়া তারা আপনাকে যেকোনো প্রকারে ঠকিয়ে দিবে। কেননা তারা প্রথমত দাম চায় প্রচুর, এরপর আপনি হয়তো বলে নিয়েছিলেন যে বাছাই করে সুন্দর ছবিগুলোই আপনি নিবেন এবং সেগুলোর পেমেন্ট দিবেন, কিন্তু ছবি তোলা শেষে দেখা গেল তার ক্যামেরায় যতগুলো ছবি সে তুলেছে তার সবই আপনাকে গছিয়ে দিলো এবং সবগুলোরই পেমেন্ট করতে বলল। তাদের আবার কঠিন সিন্ডিকেট, একজনকে ডাক দিলে সবাই এসে হাজির হবে এবং শেষমেষ আপনার থেকে সবগুলো ছবিরই দাম আদায় করে ছাড়বে, সুতরাং এদের থেকে একশ হাত দূরে থাকবেন। তবে, এদের মধ্যে দুয়েকজন অবশ্যই ভালো মানুষ রয়েছে, কিন্তু আপনি সহজে তাদেরকে খুঁজে পাবেন না।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়ে রাখি, নিজেদের প্রাইভেট গাড়ি বা ভাড়া করা রিজার্ভ গাড়ি সাথে না থাকলে সন্ধ্যার আগে আগে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিবেন। কেননা সন্ধ্যার পরে মেরিন ড্রাইভে যানবাহনের সংকট থাকে, শহরে ফেরার মতো কোন গাড়িই খুঁজে পাবেন না, সিএনজি বা অটোরিকশা কেউ এত দূরের পথ আসতে চাইবেনা। তাছাড়া রাতের অন্ধকারে মেরিন ড্রাইভে প্রচুর ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে, কখন হঠাৎ অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আপনার গাড়ি গতিরোধ করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে যাবে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না। সাধারণত সন্ধ্যার পরে মেরিন ড্রাইভে গাড়ির সংখ্যা ভয়াবহ রকমের কমে যায়। এ সময় সুযোগ বুঝে স্থানীয় পাহাড়ি জনগণের মধ্যে কিন্তু দুস্কৃতকারী এসব দুস্কর্মে লিপ্ত হয়৷ তাই পরামর্শ থাকবে সন্ধ্যার আগে আগে দিনের আলো থাকতে থাকতেই শহরে বাসায় বা হোটেলে ফিরে যাবেন।
এই ছিল মোটামুটি পাটুয়ারটেক বিচে বেড়ানোর গল্প। সময় ও সুযোগ পেলে সবাই নিয়ম করে বেরিয়ে পড়ুন। ঘর থেকে বের হয়ে দেখুন আমাদের দেশটা কত সুন্দর। আর কোথাও বেড়াতে গেলে সবাই একটা বিষয় মাথায় রাখবো সেটা হচ্ছে কোনভাবেই আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করবোনা। ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক সমুদ্রে বা পানিতে ফেলবোনা, অযথা কোন প্রাণীকে আঘাত করবোনা, প্রকৃতিকে তার নিজস্ব নিয়মেই চলে দিবো।
সবাই ভালো থাকবেন, সবার জন্য শুভকামনা!
খুব শীঘ্রই আবার নতুন কোন জায়গা সম্পর্কে লেখা নিয়ে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ, সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর পরিবেশ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হুম, অনেক চমৎকার।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পাটুয়ারটেক বিচ সম্পর্কে জানতে পেরে অনেক ভালো লাগলো। ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক স্বপ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরেদেখার, কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি যাবো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অবশ্যই, সময় করে একদিন চলে আসেন।
আমাদের দেশেও দেখার মতো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অবশ্যই যাবো একদিন না একদিন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
👍👍
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তৌহিদ ভাই, আপনার প্রতিটা লেখা প্রাণ ছুঁয়ে যায়। অসাধারণ। এগিয়ে যান। পাশে আছি আজীবন। ভাল থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আপনাদের সহযোগীতা পেলে আমরা সবাই মিলে একত্রে অনেকদূর যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমিও পটুয়ারটেক বিচ এ যেতে চাই
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হা হা হা, এটা পাটুয়াখালি নয় ম্যাডাম, পাটুয়ারটেক হবে।
বুঝছি, পুরোটা মনোযোগ দিয়ে পিড়েন নি! 😁
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পড়েছি বাট গালতিসে মিস্টেক হো গায়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মালুম হে!
কয়ি বাত নেহি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit