সত্য ঘটনা | ভয়ংকর ডাকাতের কবলে একটি রাত (২য় পর্ব) | ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago  (edited)

Pirate-2.jpg
Source

(গত পর্বের পর)
এতক্ষণে লোকগুলোর ব্যবহার, আচার-আচরণ এবং বাসের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে আমাদের কারো বুঝতে বাকি রইলো না যে এরা ডাকাত দল। বাসের সবাই আমরা ভয়ে আল্লাহর নাম নিতে শুরু করলাম। বাসে কিছু মহিলা যাত্রী ছিলেন তারা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। ইতোমধ্যে আমাদের বাসের ড্রাইভারকে সরিয়ে ডাকাত দলেরই একজন ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো এবং সে বাস চালাতে থাকলো। এরপর দেখলাম ডাকাতেরা প্রতি ১-২ সিট পরপর দুই সিটের মাঝের খালি জায়গায় একজন করে দাঁড়িয়ে পড়লো। সবার হাতেই কিছুনা কিছু হাতিয়ার রয়েছে যেমন: চকচকে চাকু, লম্বা ছুরি, ধারালো দা, পিস্তল ইত্যাদি। সেগুলো দিয়ে ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলল। এসি বাস হওয়ায় বাসের জানালা আগে থেকেই বন্ধ ছিল, পর্দাগুলো ডাকাতেরা নিজেরাই টেনে টেনে বন্ধ করে দিল। ভেতরের সব লাইট বন্ধ করে দিল, বাইরে পূর্ণমা রাত ছিল বলে বেশ আলো আসছিল বাসের ভেতরে। রাস্তায় আরও অনেক বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার চলছে, কিন্তু বাইরে থেকে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই যে আমাদের বাসের ভেতরে কি হচ্ছে।

ডাকাতদের প্রায় সবাই অল্প বয়সী ছোকরা টাইপের, বয়স বড়জোর ২৫-৩৫ এর মধ্যে হবে। একেবারে সামনের দিকে যে ডাকাতটা ছিল সে সবার প্রথমে আমার কাছে আসলো। বলল জীবনের মায়া থাকলে কাছে যাকিছু আছে সব দিয়ে দিতে। আমি আর টু শব্দটি না করে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দিয়ে দিলাম। এরপর ঐ ডাকাত আমাকে সিট থেকে উঠে দাঁড় করায়ে সার্স করলো। আমার পকেট থেকে মোবাইল টা (২৫ হাজার টাকা দাম) নিল, হাত থেকে ঘড়িটা খুলে নিল (আমার বিয়ের ঘড়ি), আমার পায়ের কাছে থাকা আমার অফিসিয়াল ব্যাগটা খুলে চেক করলো। ব্যাগ খুলেই দেখতে পেল তার মধ্যে ল্যাপটপ, ব্যাস ব্যাগের চেইন বন্ধ করে ব্যাগটা সোজা তার ঘাড়ে ঝোলালো। এরপরও সে আমার সিটের পাশের চিপায়, সিটের নিচে, মাথার উপরে বাঙ্কারে চেক করলো, যদি সেখানে আমি কিছু লুকিয়ে রাখি। অবশেষে আমার কাছে আর কিছু না পেয়ে পরের সিটে চলে গেল।

এক মুহুর্তের জন্য জাস্ট থমকে গেলাম। ঐ ব্যাগে আমার কত ইমপর্ট্যান্ট জিনিসপত্র ছিল। অফিসের ল্যাপটপ ছাড়াও কিছু দরকারি কাগজপত্র, আমার ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডগুলো রাখার জন্য ছোট একটা চামড়ার ব্যাগ ছিল কার্ডসহ সেটাও ঐ ব্যগে রাখা ছিল, আমার ছেলের চুল কাটাবো বলে ঢাকা থেকে ফিলিপসের একটা ট্রিমার কিনেছিলাম ৪০০০/- টাকা দিয়ে সেটাও ঐ ব্যাগেই ছিল, ২-৩ টা পেনড্রাইভ ছিল, আর কিছু কাপড়-চোপড় ছিল। তাদের সামনে যে একটা কথা বলবো সেই সাহসটুকু হয়নি। কারণ দেখলাম পেছনের দিকে কেউ জিনিসপত্র দিতে না চাইলে অথবা কথা বলতে গেলে তাদেরকে এলোপাতাড়ি ছুরি মারছে। এভাবে আমাদের বাসে অন্তত ১২-১৫ জনকে তারা ছুরি মেরে আহত করে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ী এই জায়গাটুকুর মধ্যেই মাত্র ঘন্টা খানেকের ব্যাবধানে সবার কাছ থেকে যাকিছু ছিল তার সবকিছুই নিয়ে রাস্তার পাশে বাসটা ব্রেক করে অন্ধকারে জঙ্গলের মধ্যে তারা হারিয়ে গেল।

বাসের ভেতরে একজন যাত্রী আর্মির সৈনিক ছিলেন। তিনি একটু ডাকাতদের সাথে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে দেখেছিলাম ৪-৫ জন ডাকাত মিলে ওনার উপর একত্রে আক্রমন করলো। ওনার হাতে, পায়ে ও গলায় ছুরি মেরেছিল। আমাদের পুরো বাসের ফ্লোর এবং সিঁড়িগুলো মানুষের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। পরে সকালে ওনাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল।

আজকের পর্বের এখানেই সমাপ্তি হলো। পরবর্তী এবং শেষ পর্বে আপনারা জানতে পারবেন এই লোমহর্ষক ডাকাতির পরের ঘটনাবলী এবং কিভাবে আমি গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম সেসব তথ্য।

সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাইয়া এক পর্বে শেষ করলে কি এমন ক্ষতি হতো।
কাহিনী টা এত ইন্টারেস্টিং যে পরবর্তী পর্বের জন্যে আর ওয়েট করে থাকতে পারছি না।

আপনাদের এমন উৎসাহ ধরে রাখার জন্যই তো এত পর্বে ভাগ করলাম, তাছাড়া এক পর্বে দিলে অনেক বড় হয়ে যেত। আমার লেখার সাইজ তো জানেনই! 😁

আর কি করা যাবে যেটা হচ্ছে সেটাকেই মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।😥

হ্যাঁ, সেটাই।

আপনার ডাকাতির এই গল্প আমি আর আব্বু একসাথে পড়েছি । পড়া শেষে আমরা বলছি আল্লাহ্‌ জানে কেমনে উদ্ধার হইসে এত বড় বিপদ।

শুনে খুবই ভালো লাগলো।
আল্লাহর রহমতে বেঁচে ফিরেছিলাম।
আজকেই আসবে এই সিরিজের শেষ পর্ব, সেখানেই জানতে পারবেন বাকি ঘটনাবলী।

শুনে খুবই ভাললাগলো ভাই

ধন্যবাদ, আপনার জীবনেও যদি এমন কোন চাঞ্চল্যকর ঘটনা থাকে তাহলে সেটা নিয়ে লিখতে পারেন।

ইনশাআল্লাহ, লিখবো ভাইয়া