ফিচার | রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাল-হকিকত | উখিয়া, কক্সবাজার (১ম পর্ব) | ১০% @btm-school

in hive-185999 •  2 years ago 

20220626_121212.jpg

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পূর্ণবাসন সমস্যা বর্তমান বিশ্বে একটা বেশ বড় এবং আলোচিত সমস্যা। এই সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিল যখন ২০১৪-১৫ সালের দিকে বা তারও আগে থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক সেখানকার রাখাইন মুসলিম কমিউনিটির জনগণ (যাদেরকে রোহিঙ্গা বলা হয়) ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে বাঁচার জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকেই দলে দলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি জীবনের তাগিদে নাফ নদী সাঁতরে বাংলাদেশ উপকূলে চলে আসতে থাকেন। মানবিক দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশ সরকার সেসময় তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের জন্য কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বেশ অনেকগুলো শরণার্থী শিবির তৈরি করা হয়।

উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ টা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির রয়েছে। বর্তমানে সরকারী হিসাবে সবগুলো শিবির মিলিয়ে সেখানে প্রায় ১২ লাখের উপরে রোহিঙ্গা জনগণ রয়েছে। অত্যাধিক জন্মাহারের কারণে সেখানে তাদের জনসংখ্যা প্রতিবছর আরও দেড় লাখের মত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এই অতিরিক্ত 'বোঝা' নিয়ে বিপাকে পড়েছে। জাতিসংঘ ও বিশ্ব কমিউনিটির সহযোগিতায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদেরকে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মায়ানমারের পক্ষ থেকে তেমন কোন আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা।

20220626_120808.jpg

২০১৮ সালের শেষের দিকে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম বারের মত চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেসময় তারা ফিরে যেতে রাজি হয়নি ফলে তাদের কাউকেই রাখাইনে পাঠানো যায়নি। মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি আবারও প্রত্যাবাসনের জন্য হাজার খানেক পরিবারের নামের তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে পাঠায়। কিন্তু রোহিঙ্গারা পুনরায় মায়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং তারা কিছু দাবি জানিয়েছে, যেমন: রোহিঙ্গাদেরকে আরাকানের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাস করতে হবে; তাদের সবাইকে নাগরিকত্ব ও পরিচয়পত্র দিতে হবে; তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া জমিজমা যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে হবে; তাদের নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে; আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করতে হবে ইত্যাদি।

কিন্তু তাদের দাবীগুলো সেই অবস্থাতেই আছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারে সরকারের পট পরিবর্তন হয়েছে, সামরিক জান্তা সেখানকার ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তাদের শান্তিতে নোবেল পাওয়া মানবতার নেত্রী অং সান সুচীকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারকে লাগাতার চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনকিছুতেই রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছেনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বোঝা আরও কিছু বছর বহন করে যেতে হবে, এত সহজে এর সমাধান হবেনা।

20220626_120550.jpg

আজকের পর্ব এপর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে আমরা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে আরও চমকপ্রদ তথ্য জানতে পারবো। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

পোস্টটি খুবই সুন্দর।
এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সমস্যাটার সমাধান হওয়া ভীষণ দরকার।

জী দাদা ধন্যবাদ।
কিন্তু বিশ্ব মোড়লেরা তো বিষয়টি নিয়ে ভাবছেনা!

আপনার লেখা অসাধারণ। অনেক বাস্তব সম্মত। চালিয়ে যান।

আপনাকে ধন্যবাদ ভাই,
দোয়া করবেন এবং পাশে থাকবেন।

বর্তমানে এটি চট্টগ্রাম তথা পুরো বাংলাদেশের একটা প্রধান সমস্য হয়ে দারিয়েছে। সামনে হয়ত এর ফল আরও খারাপ হবে

আপনি ঠিক বলেছেন।
সেরকমটিই সবাই ধারণা করছেন।
বাংলাদেশের জন্য সামনে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করবে এই রোহিঙ্গারা।