ঢাকা শহরের প্রায় মাঝ বরাবর ফার্মগেটের অবস্থান। ফার্মগেটের পূর্বে তেজগাঁও, পশ্চিমে মানিক মিয়া এভিনিউ তথা খামারবাড়ি-সংসদ ভবন। উত্তরে বিজয় স্মরণী-ক্যান্টনমেন্ট ও দক্ষিণে কাওরান বাজার। ফার্মগেট এমন একটা বাসস্ট্যান্ড যেখান থেকে আপনি ঢাকা শহরের যেকোন জায়গায় যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন। ফার্মগেটকে আমি চিনি ২০০৫ সাল থেকে। সেসময় কলেজের পাঠ চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আশায় ফার্মগেটের ইউ.সি.সি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন থেকেই আমার ফার্মগেটের সাথে জানাশোনা।
আজ আমি কথা বলবো ফার্মগেটের বিখ্যাত বড় ওভারব্রিজটা নিয়ে। যদিও মেট্রোরেলের কাজের জন্য বর্তমানে সেই ওভারব্রিজটা সেখানে নাই। তবে ভবিষ্যতে হয়তো আবারও যথাস্থানেই ওভারব্রিজটা আমরা দেখতে পাবো। ওভারব্রিজটা ছিল লাল রংয়ের, তিন দিকে তিনটা মাথা ছিল তার। ফার্মগেট থেকে চারিদিকে অনেকগুলো রাস্তার সংযোগস্থলেই ওভারব্রিজটা ছিল। এর একমাথা ছিল পশ্চিমে খামারবাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তার গোঁড়ায় সেজান পয়েন্ট মার্কেটের সামনে। আরেক মাথা ছিল দক্ষিণে গিভেন্সী হোটেলের একটু আগে ফটোকপি ও নোটারীর দোকানগুলোর সামনে। আরেক মাথা ছিল পূর্বে তেজগাঁওয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তার গোঁড়ায়।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতো। পূর্বপাশের মানুষ পশ্চিমে যেত, পশ্চিম পাশের মানুষ পূর্বে বা দক্ষিণ পাশে যেত। এভাবে প্রায় ২৪ ঘন্টাই ওভারব্রিজটা বিজি থাকতো। ওভারব্রিজটার উপর নানা দরকারি জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে নানা রকম হকার বসে থাকতো। সেখানে পাওয়া যেতোনা এমন কোন জিনিস নাই। ইয়ারফোন, পাওয়ারব্যাংক থেকে শুরু করে মাস্ক, টুপি, বইপত্র, মোবাইল কাভারসহ আরও অনেক কিছু। তাছাড়া এই ওভারব্রিজের এমাথা থেকে ওমাথায় বেশ কয়েকজন ফকির-মিসকিনও বসে-দাঁড়িয়ে থাকতো সারাদিন ধরে।
মাঝেমধ্যে ওভারব্রিজের নিচে প্রচুর জ্যাম লেগে যেত। চারিদিক থেকে হজারো গাড়ি এসে এই ওভারব্রিজের নিচেই জমা হতো। ফার্মগেটের যাত্রীরা সব এখানেই নামতো। আবার এখান থেকেই বিভিন্ন বাসে যাত্রীরা উঠে নানাদিকে চলে যেত। এজন্য এই ওভারব্রিজটার নিচে সবসময়ই মানুষ, হকার ও গাড়ীর ভিড় লেগে থাকতো। কোন মিছিল বা সমাবেশ হলেও এই ওভারব্রিজের নিচেই সবাই জড়ো হতো। একবার স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে নামলো এবং এই ওভারব্রিজের নিচে এসে সবাই জড়ো হয়ে পুরো রাস্তা বন্ধ করে দিলো। এগুলো আমি রেগুলার পর্যবেক্ষণ করতাম, কেননা এই পথেই প্রতিদিন আমাকে যাওয়া-আসা করতে হতো।
ফার্মগেটের পাশেই এই ওভারব্রিজ থেকে কিছুটা দূরে একটা বড় কমার্শিয়াল বিল্ডিং আছে যার নাম কনকর্ড টাওয়ার। ২০১৭-১৮ সালের দিকে আমার অফিস ছিল এই কনকর্ড টাওয়ারের ১০ম তলায়। আমাদের সেই অফিস থেকে পুরো ফার্মগেট এক ঝলকে দেখা যেত। আর উপর থেকে সবার আগে চোখ পড়তো এই ওভারব্রিজটার ওপর। উপর থেকে দেখতাম হাজারো মানুষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। শীতের সকালবেলা রাস্তাঘাট সাধারণত ফাঁকা থাকতো। চারিদিকে কোয়াশায় মোড়ানো অন্যরকম একটা পরিবেশ, মনে হত এখনো শহরের ঘুম ভাঙেনি। আমি উপর থেকে প্রায়ই এসব বিষয় খেয়াল করতাম।
তো এই ছিল ফার্মগেটের বিখ্যাত ওভারব্রিজ নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ মূলক প্রতিবেদন। আশাকরি আপনারাও অনেকেই এসব বিষয় খেয়াল করেছেন। অনেকের এমন বিভিন্ন বিষয়ের উপর পর্যবেক্ষণ থাকতে পারে, সেগুলোও আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।
সবাই ভালো থাকবেন, সবার জন্য শুভ কামনা।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
আমার জীবনের প্রথম অফিস ছিল এই ফার্মগেটে। এই ওভার ব্রিজ দিয়ে আসা যাওয়া করতাম। অনেক স্মৃতি কথা মনে পড়ে গেলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই পোস্ট করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও ধন্যবাদ পোস্টটা পড়ে স্মৃতিতে ফিরে যাওয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি দেখি নি এই ওভারব্রিজ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সেকি কথা!
ফার্মগেটে এসেছেন আর এই ওভারব্রিজ দেখেন নি?
অবশ্য গত প্রায় দেড়-দুই বছর ধরে ব্রিজটা খুলে রাখা হয়েছিল। মেট্রোরেলের কাজ আপাতত শেষ, এখন আবারও দেখলাম ওভারব্রিজটা ইন্সটল করার কাজ শুরু হয়েছে।
খুব শীঘ্রই আবারও ব্রিজটা যথাস্থানেই দেখা যাবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit