(গত পর্বের পর)
ফাইনাল পরীক্ষা যত নিকটে চলে আসছে দুই বন্ধুর টেনশন তত বাড়ছে। যদিও তারা ভালো ও মেধাবী ছাত্র ছিল তারপরও জীবনের প্রথমবার বোর্ডের কোন পরীক্ষায় অংশ নিবে, চিন্তা তো একটু থাকবেই। রফিক ও তরিকুলের পরিবার থেকে তাদেরকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছিল। পড়াশোনায় যাতে তাদের ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য তাদেরকে কোন কাজ করতে বলতো না। প্রাইভেট টিচার এবং স্কুলের স্যার'রাও তাদেরকে যথেষ্ট সাহস দিয়েছিলেন যাতে পরীক্ষার হলে গিয়ে তারা নার্ভাস হয়ে না পড়ে। এভাবে তারা দুজন দিনে দিনে ফাইনাল পরীক্ষার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে লাগলো। পরীক্ষাও একেবারে নিকটে চলে আসলো, ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র ২২ দিন বাকি।
এরমধ্যে হলো কি, তাদের পাড়ায় বাবার বয়সী এক চাচা ছিলেন যার নাম আব্দুস সালেক। তিনি ঢাকায় বড় সরকারি চাকরি করেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি ঢাকাতেই থাকেন। বছরে দু-তিন বার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গ্রামে বেড়াতে আসেন। সালেক চাচার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম ফিরোজ, সে এবার ক্লাস টেনে উঠলো আগামী বছর এস.এস.সি পরীক্ষা দিবে। আর মেয়েটা (মৌসুমি) বড় তিনি ঢাকার কোন একটা নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়েন। সালেক চাচার ছেলে ফিরোজের সাথে এই দুই বন্ধুর আগে থেকেই কিছুটা সখ্যতা ছিল। সে একটু বেশি অহংকারী টাইপের ছিল। এদের সাথে ঢাকা শহরের নানা গল্প করতো, নতুন নতুন জামা-কাপড় পরতো, আর বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র এনে এদেরকে দেখাতো।
সেসব জিনিসপত্র আবার গ্রামে পাওয়া যেত না। রফিক ও তরিকুল সেগুলো দেখতো আর অবাক হয়ে যেত। তারমধ্যে ছিল দামী মোবাইল ফোন, ছোট সুন্দর টর্চ লাইট, লেজার লাইট, ভিডিও গেম, রুবিকস কিউব ইত্যাদি। দুই বন্ধু ভাবতো আমরাও বড় হয়ে ঢাকা শহরে গিয়ে এসব জিনিসপত্র কিনবো। ফিরোজ আবার এদেরকে খুব একটা বেশি পাত্তা দিতো না। কিন্তু রফিক আর তরিকুল তার কাছে শহরের নানা গল্প শুনতে চাইতো। শহরের স্কুলের গল্প, রাস্তা-ঘাটের গল্প, গাড়ি-ঘোড়ার গল্প, শহরের মানুষের গল্প, উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ের গল্প, বড় বড় মার্কেটের গল্প, নানা দর্শণীয় স্থানের গল্প ইত্যাদি। কেননা এরা দুই বন্ধু কখনো ঢাকায় যায়নি।
চলবে...