প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজ কে আমি আপনাদের সাথে কথা বলবো আমার বাবাকে নিয়ে। আমরা প্রত্যেকে নিজেদের মায়েদের নিয়ে অনেক সময় অনেক কথা বলি কিন্তু মনের অজান্তেই বাবাকে নিয়ে কথা বলতে ভুলে যাই,তার মানে কখনোই এটা নয় যে আমরা তাকে ভালবাসিনা।
বিশেষ করে আমরা মেয়েরা ছোটো বেলায় বাবার খুব আদরের থাকি কিন্তু যখন আমরা একটু একটু বড়ো হতে শুরু করি আস্তে আস্তে মায়ের কাছাকাছি আসতে শুরু করি, ফলে বাবার সাথে কখন যেনো একটা অদৃশ্য দুরত্ব তৈরী হয়।
আজ কে আমি আমার বাবার কথা বলবো, কারণ আজ কেনো জানিনা বাবাকে মিস করছি, যারা আমার আগের লেখা পড়েছেন তারা জানেন যে আমার বাড়িতে এখন শুধু বাবা আর ঠাকুমা থাকেন।
ঠাকুমার বয়েস হয়েছে খুব বেশী রান্না করতে পারেনা, তাই আমার বাবাকে ওটাই খেতে হয়, যখন আমাদের বাড়ি আসে বা আমরা যাই তখন সে একটু ভালো ভাবে খেতে পারে। যেটা প্রতিদিন সম্ভব হয়না, তাই নিজেরা একটু ভালকিছু খেলেই বাবাকে মিস করি।
আমি আমার ছোটদির থেকে অনেকটা ছোটো, আর ছোটো থেকেই বাবার সাথে দিদিদের থেকে আমার সম্পর্ক অনেক ভালো। আমি যা খুশী করতাম, আমার আবদার বেশী পূরণ হতো, আমার কথা বাবা ফেলতে পারতো না। তাই দিদিরা বলতো বাবা আমাকেই বেশী ভালোবাসে। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়, আসলে দিদিরা যখন ছোটো ছিলো তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিলো না, পড়ে পড়ে একটু ভালো হতে শুরু করে, তাই আমার আবদার মেটানো তখন সম্ভব ছিলো।
তবে বাবা সারাজীবন সত্যিই অনেক কষ্ট করেছে, তবে এখন বাবা যে কষ্টটা করে সেটা সবথেকে বড়। মায়ের সাথে এত বছর সংসার করার পরে তাঁকে ছেড়ে এই ভাবে বেচেঁ থাকার থেকে বড়ো কষ্ট বোধহয় আর নেই। বাবাকে অনেকে অনেকবার বুঝিয়েছে, আমরাও চেষ্টা করেছি যাতে বাবা নতুন করে বাঁচতে শুরু করে, তবে বাবা একদমই রাজী হয়নি। আর জোর করে এটা কখনোই সম্ভব নয়।
আমার ছোটো বেলার একটা ঘটনা মনে পড়ে, আমাদের ওখানে মেলা হয় বৈশাখ মাসে, বাবাকে রোজই বলতাম মেলায় যাবো,সেই সময় বাবার কাছে টাকা ছিলো না, বাবা বলতো আজ না কাল যাবো, চেষ্টা করছিল যদি কিছু টাকা জোগাড় করতে পারে,
এর ২-৩ দিন বাদে বাবা মেলায় নিয়ে গেলো।মা বলে দিল কিছু কিনবে না যা খাবে খেয়ে বাড়ী চলে আসবে, আমি তখন বুঝিনি বাবা বেশী টাকা পায়নি।যা পেয়েছে সেটা দিয়ে শুধু খাবার খাওয়া গেলেও কিচ্ছু কেনা যাবে না।আমি তাতেই রাজী হলাম। আমরা মাকে বরাবরই ভীষণ ভয় পাই।
মেলায় যাওয়ার পথে বাবার একটা বন্ধুর সাথে দেখা হলো, তারা কথা বললো, এরপর আমরা মেলায় গেলাম, ঘুরলাম, বাবা আমাকে অনেক কিছু খাওয়ালো, এরপর বাবা আমাকে বললো-"কি কিনবি?"আমি বললাম-"কিছু না,মা বলে দিয়েছে কিছু কিনলে মা মারবে"। বাবা বললো -"আর এ না আমি আছি মা কিছু বলবেনা"। এরপর আমি একটা ব্যাগ কিনলাম, হেয়ার ব্যান্ড কিনলাম, খেলনা কিনলাম। বাড়িতে খাবার নিয়ে এলাম।
মায়ের কাছে বকা খাবো এই ভয়ে ভয়ে বাড়ী গেলাম, কিন্তু মনে মনে খুব খুশি। পড়ে আমি শুনেছি যে বাবার যে বন্ধুটার সাথে দেখা হয়েছিলো তার কাছে বাবা টাকা পেতো অনেক দিন আগের, মেলায় যাওয়ার দিন সেই টাকা সে দিয়েছিল। তাই বাবা আমাকে সব কিনে দিতে পেরেছে। বাবার মনে হয়েছিল আমার ভাগ্যেই নাকি টাকা গুলো পেয়েছে, বাবারা বোধহয় এমনই হয়।
আজ অনেক বড়ো হয়ে গেছি, বাবার সাথে মেলায় যাওয়া হয়না, আবদার করা হয়না, তবে অনেক গল্প করি আমরা। অনেক আড্ডা দেই যখন সবাই একসাথে থাকি। পুরনো দিনের কতো কথা হয়।
বাবা সব সময় বন্ধুর মতোই মিশেছে, তবে মা বরাবরই শক্ত ছিল। আমরা ৩জনের কেউ মনে করতে পারিনা যে বাবা আমাদের গায়ে হাত তুলেছে, জোরে কথা বলেছে। তবে মা কিন্তু খুব বকেছে/মেরেছে।
আমাদের সামনে বাবা কখনই তার কষ্টের কথা বলেনা, হাসি মুখে থাকার চেষ্টা করে, কিন্তু তাঁর মনেও অনেক কষ্ট সেটা বুঝতে পারি, শুধু চেষ্টা করি আমাদের কাছ থেকে যেনো আর কোনো কষ্ট না পায়।
তুমি ভালো থেকো বাবা। তোমাকে হয়তো অনেক জ্বালিয়েছি, তবে বিশ্বাস করো তখন বোঝার বয়েস ছিলো না, আর আমি জানি তুমি সেগুলো মনেও রাখোনি। তোমার কাছে শুধু ভালোবাসাই পেয়েছি।
তুমি সুস্থ থেকো, আমাদের মাথার উপর আশীর্বাদের হাত রেখো সবসময়। তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।
তোমার, সোনা
দিদির মেয়ের অন্নপ্রাশন এ তোলা-