মায়ের সাথে আমরা-
প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি সবাই ভালো আছেন।
আজ আমি আপনাদের পরিচয় করাবো আমার তিতলি আর তাতানের সাথে।এই দুজন আমার ছোটদির মেয়ে আর ছেলে। আমার দুই দিদি,আজ ছোটদি আর ওর ছেলেমেয়ের সম্পর্কে কথা বলবো। মা হওয়ার জন্য কতো কষ্ট করতে হয় সেটা আমি আমার দিদিকে দেখে বুঝেছি।
২০১০ সালে বিয়ে হয় ছোটদির।ওর শারীরিক কিছু প্রবলেম ছিলো,যে কারনে আমরা জানতাম যে ওর হয়তো কখনই বেবী হবে না।বিয়ের পর থেকেই ডক্টর দেখিয়ে ট্রাই করছিল,মা হওয়ার জন্য প্রত্যেক মেয়েই বোধহয় এমন ব্যাকুল হয়। মা হওয়ার আনন্দই যে আলাদা। নিজের ভেতরে একটু একটু করে একটা প্রাণ কে গড়ে তোলা কিন্তু সহজ কথা না, এটা হয়তো তারাই সবথেকে ভালো বুঝবেন যারা মা হয়েছেন।
২০০৮ সালে ছোটদি চাকরী পায়, ওর প্রথম পোস্টিং ছিলো এন.আর.এস হসপিটাল এ।২০১১ সালে ছোটদি একবার কনসিভ করে,আমরা ভীষণ খুশী হই, কিন্তু ১ মাসের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়।এরপরআই.আই.ভি,আই.ভি.এফ সব কিছু ট্রাই করা হয় কিন্তু ওই যে কথায় আছে ভগবান না চাইলে কিছুই হয়না। এই সব হওয়ার পরেও কিছুই সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় কিছু মাস বাদে ছোটদি নরমালি কনসিভ করে।
কিন্তু সেবারেও শেষ রক্ষা হয়নি,৫ মাস বাদে মিসক্যারেজ হয়ে যায়, ওই রাত আমি কোনদিন ভুলবো না, তখন আমি আর দিদি বেলেঘাটায় থাকতাম বাড়ী ভাড়া নিয়ে,তখন দিদি বি.এস.সি নার্সিং পড়ছিল। সেদিন শুধু আমি ছিলাম দিদির সাথে, আমার তখনো বিয়ে হয়নি, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি করবো। আমার চোখের সামনেই সবটা হলো, দিদি যেহেতু নার্স ও আমাকে যেমন যেমন বলেছে আমি শুধু সেই ভাবে করে গেছি। কিছু পরে বুঝলাম সব শেষ, জীবনে প্রথম বার একটা ছোট্ট বাচ্চা দেখলাম, আঙ্গুলের মত ছোট ছোট হাত আর পা তার। ওই রাত কিভাবে কেটেছে এটা সত্যি বলে বোঝানো যাবে না। ভোর বেলায় বাবা, মামি সবাই গেলো, তারপর হসপিটাল এ নিয়ে গেলো, সেদিনের পর আমি বহুরাত ঘুমাইনি, চোখের সামনে শুধু সেই রাত, আর বাচ্চাটার ছবি ভাসতো।
এতো কষ্টের পড়েও খুশী এলো জীবনে ২০১৩ সালে। তখন ছোটদির বি.এস.সি নার্সিং কমপ্লিট হয়েছে,ছোটদি তখন বিরাটি শিফট করেছে।কনসিভ করার পর থেকে ডেলিভারি পর্যন্ত ছোটদির প্রচুর রেস্ট্রিকশন ছিলো,চোঁখের সামনে ওর কষ্ট দেখেছি শুধু মা হওয়ার জন্য।সপ্তাহে ২দিন পার্ক সার্কাস যেতাম ওর জন্যে ইনজেকশন আনতে, আর ওষুধ এর জন্যে কতো জায়গায় যেতে হতো। জামাইবাবু তখন আর্মি তে, আমার যদিও বিয়ে হয়ে গেছিল কিন্তু এই সব আমাকেই করতে হতো। কারণ দিদির পাশে সেই মুহূর্তে আমাকে থাকতেই হতো। ওর অনেক অবদান আছে আমার জীবনে,সেই গল্প একদিন নিশ্চয় লিখবো।এই সব করতে করতে যেনো আমিও মা হওয়ার কষ্ট বুঝতে শিখছিলাম।
অবশেষে সেই দিন এলো,২০১৩ সালের ২০সে আগস্ট। সেদিন আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় ১৯-২০ জন হসপিটাল এ ছিলো শুধু দিদির বাচ্চার জন্যে। আমার এখনো মনে আছে ও.টি. র বাইরে আমি,মামি, আমার শাশুড়ি,দিদির হাজব্যান্ড,মামা, বাবা সবাই অপেক্ষা করছি শুধু শোনার জন্যে যে মা আর বাচ্ছা দুজনই ভালো আছে।নার্স যখন তিতলিকে দেখালো, জানিনা কেনো এমনিতেই কান্না চলে এলো, এই মুখটা দেখার জন্যে এত দিনের এতো কষ্ট। আর কোথাও আমরা ভাবতে শুরু করেছিলাম মা ফিরে এসেছে দিদির মেয়ে হয়ে।
প্রথম বার পৃথিবীর আলো দেখা-
তিতলি খুব খুব খুব স্পেশাল। আমি ওর মা নই তবুও ও কিন্তু আমার মেয়েই।ওকে পৃথিবীতে আনতে আমিও অনেক কষ্ট করেছি। তবে হ্যাঁ দিদির যখন ছেলে হয় তখন কোনো কম্প্লিকেশন হয়নি,কি অদ্ভুত না ?দ্বিতীয় বার যখন দিদি কনসিফ করে তখন ওর ট্রান্সফার হয়েছিল মুর্শিদাবাদ (কাঁদি মহকুমা হসপিটাল এ)।তবে ডেলিভারি কলকাতায় হয়েছে। হসপিটাল এ যাওয়ার সময় তিতলিকে আমার কাছে রেখে গিয়েছিল।৫ দিন আমি ছিলাম ওর মা।
তাতান আমার খুব কাছের তবে তিতলির জায়গাটা যেনো একদম আলাদা, কেনো জানি না বড্ড দুর্বল আমি ওর প্রতি। আর সবথেকে মজার বিষয় আমার সেই ছোট্ট তিতলিও নাকি এখন দিদি হয়ে গেছে। আমি ভাবতেই পারিনা আমার তিতলি কোনদিন বড় হবে, ওর লাইফে এক সময় বন্ধুদের গুরুত্ব এতো বেরে যাবে যে,আমাদের সাথে কথা বলার সময় ও থাকবে না। তবে এটা হবে আর এটাই জীবন। আমরাও এমনই করেছি। আমরা বড় হয়েছি আর বড়দের থেকে দূরত্ব বেড়েছে।
প্রথম স্কুল যাওয়ার আনন্দ-
আমরা এই ভাবেই ঘুমাই-
অন্নপ্রাশন: দাদুর হাতে আমাদের প্রথম ভাত খাওয়া-
মিমির সাথে আমাদের ফটো-
যাইহোক, ভালো লাগলো পুরনো কথা গুলো আবার মনে পড়ে গেল, আশাকরি আপনাদের ও পরে ভালো লাগবে।ভালো থাকবেন।