প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি আপনারা সবাই ভালো আছেন।
আজ কথা বলবো আমার মামীকে নিয়ে। আমার মোট ৩ জন মামী আছে ঠিকই কিন্তু আজ আমি যাকে নিয়ে কথা বলবো সে আমার নিজের মামী নয়। আমার মায়ের পিসতুতো ভাইয়ের বৌ। আর মায়ের নিজের ২ জন ভাইয়ের বৌ আছে। মামীরা প্রত্যেককে ভীষণ ভালো, তবুও হয়না যে কেউ একজন অনেক বেশী কাছের হয়, সেই রকমই এই মামী আমার অনেক কাছের।
মামী হাবড়াতে থাকে, খুব ছোটবেলা থেকেই মামী আমাদের বাড়ী যায়, আমার মনেও নেই কবে থেকে।
তবে যেটা অল্প অল্প মনে আছে, সেটা হলো মামী যখন বোনকে নিয়ে আমাদের বাড়ী যেতো তখন বোনের জন্য যে দুধ আনতো সেটা আমি খুব খেতাম। খাতার পৃষ্ঠা ছিড়ে নিয়ে মামীকে বলতাম আমাকে একটু দুধ দাও। মামীও দিয়ে দিতো, খুব মজা নিয়ে খেতাম। যদিও মা এর জন্য মাঝে মাঝে মামীকেও বকা দিতো। এখনো যখন সেই সব কথা হয়, ভীষণ হাসাহাসি করি আমরা।
মামীর সাথে সম্পর্কটা বরাবর ভালো থাকলেও মা মারা যাওয়ার পর থেকে সেটা যেনো বদলে গেলো, কখন যেনো মামী আমাকে ঠিক মায়ের মত আগলাতে শুরু করলো, আর আমিও ধীরে ধীরে মামীর কাছে আবদার করতে শুরু করলাম।
আমার মনে পড়ে, যেদিন মা মারা গেলো সেদিন যখন শশানে গেলাম জীবনে প্রথম বার, মামীর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলাম, মাকে দেখছিলাম শেষবারের মতো, জানিনা হয়তো তখন মামী বুঝেছিল আমি কি হারালাম। আমি দেখেছি তারপর থেকে আজও মামী আমাকে একই রকম আগলে রাখে। আমি কি ভালো খাই, আমি গেলে আমার পছন্দ মতো রান্না করে, ভালকিছু রান্না করলেই আমাকে ফোন করে। ভীষণ যত্ন করে যেমন মা থাকলে করতো। এমন কি আমার হাজব্যান্ড কেও ভীষণ ভালোবাসে।
মামী,তার মেয়ে (আমার বোন শ্বেতা) আর আমার মধ্যে কোনদিন পার্থক্য করেনি এমনকি শ্বেতাও কোনদিন রাগ করেনি, যদি মামী আমার পছন্দ মতো রান্না করে। ওকে নিয়ে অন্যদিন নিশ্চয় লিখবো। অনেক গল্প আছে আমাদের।
মা মারা যাওয়ার পর আমি সবথেকে বেশী থেকেছি মামীর কাছে। আমার বিয়ের পর মামীকে মিস করি মাঝে মাঝে। সংসার এ অনেক কারণে যখন মন খারাপ হয় মামীকেই মনে পড়ে। অনেক কিছু বোঝায় আমাকে, সংসার জীবনে তার অভিজ্ঞতা অনেক বেশী।
আর বাকি রইলো মামা, সেতো আর ও পাগল। আমি যাবো শুনলেই সে কি আনবে আর কি আনবে না ভেবেই পায়না। এমন ভাবে ডাকবে মনটা জুড়িয়ে যায়। আর আদর তো আছেই। মামাদের অবস্থা খুব ভালো নয়,তবু চেষ্টা করে সবথেকে ভালো রাখার।
আমার মনে আছে, আমার বিয়ের আগে আমি অনেকবার মামীর মুখে শুনেছিলাম,মামীর খুব সখ ছিল একটা চওড়া নীল পাড়ওয়ালা আকাশী রঙের তাঁতের শাড়ির। কিন্তু মামার অবস্থা দেখে কোনদিন বলেনি, আর এখন সেই ইচ্ছেটা নেই। খারাপ লেগেছিল শুনে। পড়ে আমি যখন জব করেছি প্রথম স্যালারি পেয়ে মামিকে সাথে নিয়ে গিয়ে আমি সেই রকম শাড়ি কিনে দিয়েছিলাম।অদ্ভুত আনন্দ দেখেছিলাম তার মুখে, চোঁখের কোণে জলও এসেছিল। আর আমিও মনে মনে একটা শান্তি পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল যেনো মা কে দিলাম। বিয়ের পর যা কিছুই দেইনা কেনো,সেই দিনের খুশিটা অন্যরকম ছিল।
এমনি সম্পর্ক আমাদের। মামীর বয়েস বাড়ছে, মাঝেমাঝে শরীরটা খারাপ হয়, ভয় লাগে মামিকে হারানোর। মায়ের কমতি ওই মানুষটাই পূরণ করে, আদর করে, ভালোবেসে আগলে রাখে। ঠাকুর যেনো মামীকে সুস্থ রাখে এটাই কামনা করি।ভালো থেকো মামী।
হাজারদুয়ারী ঘুরতে গিয়ে আমি, মামা, মামী, বোন (শ্বেতা)-
আমার দিদির ছেলের অন্নপ্রাশন এ তোলা-