হারানো দিন গুলির স্মৃতি কথা _____
..
..
..
কিছু বন্ধু আছে, যারা কিনা একসময় খুব কাছে কাছে থাকতো। কিন্তু একটা সময় এসে যায়, যখন তাদের আর খুজে পাওয়া যায় না।
..
..
ওরা খুব কাছের মানুষ ছিল, যেমন দুটি হাত কাছাকাছি থাকে, ঠিক তেমনই। যাদের ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। ওদের সাথে সময় না কাটলে যেন দিন শেষ হত না। একটা দিন ওদের সাথে সময় না কাটলে মনে হত, কি যেন নাই, কি যেন করি নি।
..
ওদের সাথে গল্প করতে করতে কখন যে দিন গড়িয়ে সন্ধা, সন্ধা গড়িয়ে রাত হয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না।
..
সকাল বেলা স্কুল যাওয়া, দুপুরবেলা স্কুল ছুটি শেষে একসাথে বাড়ি ফেরা। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করেই কড়া রোদ্রের তাপে পুড়ে পুড়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরাঘুরি করা। বিকেলবেলা খেলাধুলা করা, খেলতে খেলতে কথা কাটাকাটি, বকাবকি এমনকি মারামারি লেগে যাওয়া। কিন্তু দিনশেষে আবার ঠিকই একসাথে পথচলা। এ যেন নিত্যদিন এর কার্যকলাপ, যার কোন শেষ ছিল না, প্রতিদিনই কমবেশি হতই।
..
কোন কোন দিন আবার স্কুল ছুটি হবার পর চলে যেতাম কোনো একটি গার্লস স্কুল এ। সেখানে গিয়ে সমবয়সী অথবা আমাদের থেকে একটু ছোট মেয়েদের সাথে মজা করতাম।
আমি আবার ডাক পিওন এর কাজও করতাম। বন্ধুর লিখা চিঠি তার গার্লফ্রেন্ডকে দিয়ে আসতাম চুপি চুপি। তারপর আবার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড এর লিখা চিঠি নিয়ে বন্ধুর হাতে দিতাম। অবশ্য এর মাঝে আমি তাদের লিখা চিঠি চুরি করে পড়ে নিতাম। তাদের এক এক জনের ভালবাসা দেখে কি যে ভাল লাগিত। আহ!!
..
প্রায় দিনই খেলা শেষে সন্ধা বেলায় এলাকার চটপটির দোকান অথবা ঝালমুড়ির দোকান এ হামলা দিয়ে চটপটি ফুচকা বা ঝালমুড়ি খেতাম। খাওয়া শেষে কে বিল চুকাবে এই নিয়ে আবার কথা কাটাকাটি, ঝগড়া শুরু করে দিতাম, অবশ্য দোকানদার এর এতে কোন বিরক্তি হত না, কারণ আমরা যেদিনই দোকানে আসি সেদিনই এরকম করতাম। যেটা কিনা দোকানদার এর মুখস্ত পড়ার মত ছিল। শেষমেশ বাসায় ফিরে মায়ের মুখের বকুনি উপহার। মাঝে মাঝে পিঠে কিছু উত্তম মধ্যমও খেতাম।
..
..
কিন্তু তারা আস্তে আস্তে দূরে চলে যায়। এতটাই দূরে যে, দুই চোখ কাছাকাছি থেকেও অনেক দূরে। দু চোখ যেমন একজন আরেক জনকে দেখতে পারে না, ঠিক তেমনি একই এলাকায় থেকেও তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। আস্তে আস্তে তাদের আর মনেও পরে না।
..
..
দুনিয়ায় বেচে থাকার লড়াইয়ে, জীবিকানির্বাহ করার তাগিদে যে যেদিক পারছি ছুটে চলছি। পিছনে তাকিয়ে দেখারও যেন সময় নেই আমাদের। ওরা কেমন আছে, কি করছে, কিছুই জানার প্রয়োজন বোধ করি না। আমি আছি আমার মত, সে আছে তার মত। এইভাবেই চলছে আমাদের জীবন নামক গাড়ী।
..
হয়ত আবারো একসাথে হতে পারি আমরা। কিন্তু সেটা হবে বৃদ্ধ বয়সে। প্রতিদিন সকাল বেলা বাজার সদাই করতে যাব। যেই ছোট্ট বেলায় সকালে আমরা যেতাম স্কুলে।
দুপুরে হয়ত আর আগের মত দেখাই হবে না, যেই ছোট্ট বেলায় দুপুরে একসাথে স্কুল থেকে বাসায় ফিরতাম।
বিকাল বেলায় এলাকার কোন চা এর দোকানে বসে আড্ডা দিব, আর চা খাবো। যেই বিকালে আগে আমরা একসাথে খেলাধুলা করে মারামারি বকাবকি করতাম।
আর সন্ধ্যায় যাব মাগরিব এর নামাজ আদায় করতে, যেই ছোট্ট বেলায় সন্ধ্যায় আমরা চটপটি বা ঝালমুড়ির দোকানে খেয়ে বিল চুকানো নিয়ে ঝগড়া করতাম।
..
এক সেকেন্ড, এক মিনিট, এক ঘন্টা, এক মাস, এক বছর, এক যুগ। এভাবেই সব হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে। আরো হারাচ্ছে এক একটি প্রিয় মুখ। মা বাবা, ভাই বোন, দাদা দাদি, নানা নানী। চাচা চাচী, মামা মামি। সবাই হারাবে। এমনকি আমিও হারিয়ে যাবো এই দুনিয়া নামক রাস্তা থেকে। তখন আমাদের ছেলে মেয়ে, ভাগ্যে যদি নাতি নাতিন থাকে, তখন তারা আমাকে মারা যাবার প্রথম কয়েকদিন হয়তো মনে রাখবে, কান্না কাটি করবে। কিন্তু একটা সময় তারা আমাদের ভুলে যাবে। এটাই দুনিয়ার রীতি।
..
একটি গান আছে---------
আসবার কালে আসলাম একা,
যাইবার কালে যাব একা।
মাঝে মাঝে মনরে বলি,
চক্ষু মেইলা কি দেখলা?
..
একটি প্রবাদ আছে-------
"" এমন জীবন তুমি করিও গঠন,
মরিলে হাসিবে তুমি, কাদিবে ভুবন।
..
..
পরিশেষে এটাই বলব-----
Old is Gold.... আগের কাটানো দিন, পুরোনো কিছু মানুষ / বন্ধু, তাদের সাথে কাটানো সময়, সবই সোনালী দিন ছিল। যেই দিন গুলির কথা বৃদ্ধ কালের কোন না কোন সময় মনে পরবেই। কারণ সেই সময় গুলোই ছিল আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিন গুরুত্বপূর্ণ সময়।
..
..
অনেক কথা বলে ফেলেছি আবেগের বশে। কিভাবে যেন এতো কথা বলে ফেলেছি, নিজেও জানি না। কষ্ট করে এতখানি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কেউ কোন কষ্ট পেয়ে থাকলে আমায় দয়া করে ক্ষমা করবেন।।