তীব্র গরমে খাবার দাবারে সবারই বেশ অরুচি হয় । এই সময়টাতে একটা মাত্র খাবারই সবার প্রিয় । আর তা হলো নানান স্বাদের শীতল পানীয় । আমিও তার ব্যতিক্রম নই । এবার যে গরম পড়েছে এমনটা অতীতে আর দেখিনি কখনো । প্রত্যেক দিনই আমাদের শহরে দিনের তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৪০-৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাতের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমে ৩০-৩৩ ডিগ্রীর মধ্যেই ঘোরাফেরা করে । তবে এই সময় ভ্যাপসা গরমে টেকা দায় হয়ে যায় ।
গরমকালে আমার সব চাইতে আগে পছন্দ হলো ডাবের জল । ডাবের জলের ওপর আর কোনো পানীয় নেই গরমের দিনে । বুক-পেট সব একদম ঠান্ডা করতে ডাবের জলের জুড়ি খুঁজে পাওয়া ভার । ডাবের জল পান করার পরে ডাবের কচি শাঁসটুকুও কিন্তু ফ্যালনা নয় । এই শাঁস আমার অসম্ভব প্রিয় । ডাবের কচি শাঁসকে আমাদের বাড়িতে বলা হয় ডাব-ক্ষীর । এই ডাব-ক্ষীর ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে দিলে তারপরে খেতে দারুন সুস্বাদু হয় ।
ডাবের পরে যেটা সব চাইতে প্রিয় শরবত সেটা হলো মিষ্টি তরমুজের জুস । মিষ্টি আর দানাদার তরমুজের শাঁস বের করে সেটা ব্লেন্ডারে ভালো করে ব্লেন্ড করে ছেঁকে রস বের করে নেওয়া হয় । পরে এর সাথে হালকা বিট নুন, চিনি, পুদিনা পাতা কুচি মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে তারপরে আইস কিউব দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত হিসেবে পান করা হয় । দারুন লাগে খেতে ।
গরমকালে বাড়িতে তরমুজ আর পাকা আমের আইস ললিও তৈরী করা হয় । এটাও দারুন খেতে ।
আরেকটা পানীয়ও গরমের দিনে আমার দারুন পছন্দের । সেটা হলো কাঁচা আম পোড়া শরবত । এটা তনুজা করে । প্রক্রিয়াটা আমার অজানা । তবে খুব সম্ভবত কাঁচা আম পুড়িয়ে সেটার খোসা ছাড়িয়ে চটকে তার সাথে জল মিশিয়ে ছেঁকে নেয় । এরপরে সেই কাঁচা আম পড়া শাঁসের রসে পুদিনা পাতা, লঙ্কা কুচি, বিট নুন, চিনি, লেবুর রস এসব মিশিয়ে তৈরী করে কাঁচা আম পোড়া শরবত । বরফ দিয়ে পরিবেশন করা হয় এই শরবতটি । টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদের এই শরবতটি অপূর্ব খেতে ।
এবারে আসি মেইন কোর্সে । গরমের দিনগুলোতে মাংস খেতে একদমই ভালো লাগে না । তবে, মাছ একটু না খেলে চলে কীভাবে, বলুন ? তাই মাছটা রেগুলার খাওয়া হয়ে থাকে । মাংসটা বাদ থাকে, মাসে ২-৩ দিন মোটে খাওয়া হয় । গরমের দিনে আমার মেইন পছন্দ ছোট মাছ । সকাল বেলায় বাজার থেকে কিনে আনা টাটকা ছোট মাছের ঝোল দিয়ে দুপুরে গরম গরম ভাত খেতে জাস্ট অপূর্ব লাগে । তবে লাঞ্চে সর্বপ্রথম আমার ভাতের পাতে শুক্তো চাই-ই চাই । গরমের দিনে ছোট মাছ দিয়ে শুক্তো আমার হট ফেভারিট ।
গরমের দিনে ভাজাভুজি তেমন ভালো লাগে না, তবে কলমি শাক দিয়ে চিংড়ি মাছ ভাজাটা দারুন লাগে খেতে । এর সাথে একটু কুমড়ো বড়ি হলে তো কথাই নেই । আর কুমড়ো ফুল ভাজাও দারুন ভালো লাগে খেতে। এরপরে সজনে ডাটা বা কাঁচা আম দিয়ে ডাল অপূর্ব লাগে খেতে । তরকারির মধ্যে ভালো লাগে ছোট মাছ দিয়ে আলু-বেগুনের পাতলা ঝোল, ঝিঙের তরকারি চিংড়ি দিয়ে, নারিকেলের দুধ দিয়ে এঁচোড়ের তরকারি, লাউ শাক, কুমড়ো শাক, ডাটা শাক দিয়ে মৌরালা বা পুঁটি মাছের ঝোলজামরুল । শেষ পাতে কাঁচা আমের ঝোল বা চচ্চড়ি ।
মাছের মধ্যে এসময় সব চাইতে ভালো লাগে মৌরালা, পুঁটি, খলসে, ছোট রূপচাঁদা, তেলাপিয়া, সিলভার কার্প, পোনা মাছ, বান মাছ, চিংড়ি আর ট্যাংরা মাছ । গরমকালে মাছের খুব আকাল পড়ে । কারণ এই সময়টাতে খাল-বিলে-পুকুরে জল থাকে না, তাই মাছও অমিল হয়ে থাকে । তাছাড়া এই সময়টাতে মাছেদের প্রজনন হয়ে থাকে, তাই অধিকাংশ মাছেদেরই পেটে ডিম হয়ে যায় । ডিমওয়ালা মাছ খেতে ভালো লাগে না । খাওয়া উচিতও নয় । কারণ সব ডিমওয়ালা মাছ খেয়ে ফেললে পরে মাছ কি আকাশ থেকে পড়বে ? ঠিক একইভাবে মাছের পোনাও খাওয়া উচিত নয় ।
ফলের মধ্যে গ্রীষ্মকালে আমার সব চাইতে টপ ফেভারিট হলো তরমুজ । এছাড়াও ডাব, কাঁচা আম, সময়বিশেষে পাকা আম, লিচু, কালো জাম, কলা, পেঁপে, সফেদা, কালো আঙুর এবং কদবেল আমার খুবই প্রিয় ।