নববর্ষের মেলার স্মৃতি

in life •  7 months ago 

3U19UAAymcKUS3DFYwPKNSctZw4FiuJwMpyxtPMruw22iWWsmg1jDVmwLnXjXcQRfKtQPZzLfvo6o2yBF4G8n1EsgrG4gmjAvECcEc9tvwXFkYKUxgNPBTwknYJLHT6ELyURiRWywT9REEWcm6MetLFxPsDL99o6CcJ2bsGfgzA8ARyiuMVFMPFJJEFwhN1Z2A7kbNenqqMsCz.jpg
! ছোটবেলায় নববর্ষের মেলার বেশ কিছু মধুর স্মৃতি রয়েছে আমার । আমাদের গ্রামে চৈত্র মাস যাওয়ার দিনে চড়ক পূজা বা নীল ষষ্ঠী পুজো হতো । আর এই চড়ক পুজো উপলক্ষে প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাপী বিশাল এক মেলা বসতো । নববর্ষের মেলা তাই আর আলাদা করে হতো না । চড়ক পুজো আর নববর্ষ দুটি উৎসব উপলক্ষে এই মেলা বসতো ।

আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে ছিল বিশাল একটা বহু পুরাতন মিষ্টি জলের দীঘি । এই দীঘির নাম ছিল ঠাকুরানী দীঘি । দীঘির উত্তর পাড়ে শতাব্দী প্রাচীন এক বুড়ো বটগাছের তলে ছিল এক বহু পুরোনো শিব মন্দির । এই শিব মন্দিরেই হতো নীল পুজো বা চড়ক পুজো । আর পুজোর দিনে এবং পরের দিন নববর্ষ উপলক্ষে বিশাল এক মেলা বসতো দীঘির উত্তর-পশ্চিম পাড় জুড়ে । দীঘির পাড় ছিল যেমন উঁচু তেমনি প্রকান্ড । আর দিঘীটাও ছিল অনেক বড় । পায়ে হেঁটে দীঘির চারটে পাড় ঘুরে আসতে সময় লেগে যায় প্রায় ১৫-২০ মিনিট ।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে একবার আমরা দীঘির পাড়ে ঘুরে আসতাম । এই সময়টাতে মেলার প্রায় সব দোকানই বন্ধ থাকতো, খোলা থাকতো শুধুমাত্র মিষ্টির দোকান । গরম গরম জিলিপি ভাজা হতো তখন । আমরাও ছোটরা ভোরবেলা জিলিপির লোভেই যেতুম মেলায় ।

এরপরে বেলা পড়ে এলে সেজেগুজে দলবেঁধে মেলায় হাজির হতুম আমরা সবাই বন্ধুবান্ধব মিলে । ততক্ষণে মেলা ভীষণ জমে গিয়েছে । হাজার হাজার মানুষ মেলায় গিজগিজ করছে । একদম ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথেই মেলায় যেতুম । একটু বড় হয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে যেতুম । আমার এখনো মনে আছে শিব মন্দিরের পেছন দিকটাতে দীঘির পুরো উত্তর-পূর্ব পাড় জুড়ে মাটির বিভিন্ন জিনিসের মেলা বসতো । মাটির হাঁড়ি-পাতিল-কলসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকার ও আকৃতির হরেক রঙের মাটির খেলনা পুতুল উঠতো মেলায় । মাটির কত যে পুতুল উঠতো মেলায় তার ইয়ত্তা নেই । আমি কিনতাম মাটির বাঘ, সিংহ, হাতি, গরু, ঘোড়া, বৌ, স্প্রিং আঁটা ঘাড় নাড়া বুড়ো, মাটির রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, পেঙ্গুইন, ময়ূর আর কত কী !

একবার তো মাটির একটা নৌকা কিনেছিলাম, আর সেটা জলে ভাসাতে গিয়ে টুপ্ করে ডুবে গিয়েছিলো । একবার মাটির একটা ইলিশ মাছ কিনেছিলাম । বেশ বড় সাইজের ইলিশ । মাথার উপরে একটা চ্যাপ্টা ছিদ্র । ওই ছিদ্র দিয়ে পয়সা ঢোকাতে হতো । ইলিশটা আসলে ছিল টাকা জমানোর ঘট ।

বৈশাখী এই মেলায় প্রচুর তালের পাখা বিক্রি হতো । গাঁয়ে তো তখন বিদ্যুৎ ছিল না, তাই গরমে তালের পাখাই ছিল গ্রামের মানুষের নিত্যসঙ্গী । খাবারের দোকানের মধ্যে বেশি ছিল বাদাম, ছোলা-ঘুগনি, তেলেভাজা আর পাঁপরের দোকান । আর ছিল ঘষা বরফ, আইসক্রিম, লেমোনেড আর পানের দোকান । এছাড়া প্রচুর মিষ্টির দোকান আসতো মেলায় । পাওয়া যেত জিলিপি, রসগোল্লা, পান্তুয়া, লেডিকেনি, ছানার জিলিপি, সাদা জিলিপি, রাজভোগ, গজা, বোঁদে, সন্দেশ প্রভৃতি ।

খেলনা আর ছবির দোকানও আসতো প্রচুর পরিমাণে । আমার প্রিয় ছিল খেলনা বন্দুক-পিস্তল । কিনতামও প্রচুর । এছাড়াও প্লাস্টিকের গাড়ি, স্প্রিঙের দম দেওয়া খেলনা গাড়ি আর পুতুলও কেনা হতো । মেলায় সব চাইতে বেশি যে দোকানগুলো আসতো তা হলো মেয়েদের কসমেটিক্স এর দোকান । মেলার বারো আনা ঐসব জিনিসের দোকানেই ভর্তি হতো । আমরা অবশ্য ওদিকপানে যেতুম না কখনো ।

মেলায় নাগরদোলাও আসতো । কিন্তু, আমি জীবনেও কোনোদিন নাগরদোলায় উঠিনি । কারণ, ভয় করতো আমার ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!