রাত ১:১৭ মিনিট সারাদিন ক্লান্ত শেষে জলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে বাসার বাইরে দাড়িয়ে আছি। মনের সুখে একের পর এক টান দিয়ে যাচ্ছি। পূর্নিমার মস্তবড় চাঁদটা আমার হৃদয়টাকে ঝলসে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে চাঁদটা মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলসে,একটু পর পর দমকা হাওয়া আবার অশান্ত মনকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করসে। সিগারেটের শেষ টান টা দিয়ে মাটির সাথে পিষে দিলাম। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি ১:৩৮ বাজে, আর লেট করা ঠিক হবে না বাসায় যাওয়া দরকার নিজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ভিতরে ঢুকবো কি ডুকবো না ভাবতে ভাবতে আস্তে করে দুইটা টোকা দিলাম। সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল। খুলে গেল বললে ভুল হবে, কেউ দরজাটা খুলে দিল। মনে হয় সে আমার অপেক্ষাতেই ছিল।দরজাটা ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে পড়লাম। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেই আমার জানের কোল বালিশটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। শুনেছি বাসর রাত নিয়ে মেয়েদের মনে অনেক পরিকল্পনা থাকে,এই মেয়েটারে হয়তো ছিল কিন্তু তাতে গুড়ে বালি। মেয়েটার হয়তো অনেক আশা ছিল কিনা জানিনা, তবে মেয়েটার মুখ থেকে বেশ বুঝা যাচ্ছে সে আমার কার্য্যকলাপে অনেকটা অবাক হয়েছে, আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যা ভাবে ভাবুক, তাতে আমার কি..! বেশিক্ষণ তার দিকে না তাকিয়ে থেকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম সকালে ঘুম টা ভাঙ্গলো মেয়েটির ডাকেই...
এই যে শুনছেন? কি হলো উত্তর না? আর কত ঘুমাবেন?
ঘুম ঘুম চোখে একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।
অনেক বেলা হয়ে গেছে তো
মেজাজটা পুরোই খারাপ হয়ে গেল, মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দিলাম একটা ঝাড়ি।
কাদের কাছে একদম চিল্লাচিল্লি করবেন না।আমাকে আমার মত থাকতে দিন। ভুলেও আমার কাছে আসবেন না।
না মানে আম্মা
চুপ থাকেন,আমার সামনে থেকে জানতো। আপনাকে আমি সহ্য করতে পারছি না। কি হলো যান..!
মেয়েটি কিছু সময় আমার দিকে এক বৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো,হয়তো বিয়ের দ্বিতীয় দিন এমন কথা আশা করিনি তারপরও চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেল। স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়েদের চোখের কোনায় জল জমেছে...কাঁদলে কাঁদুক, তাতে আমার কি..ধ্যাত আর ঘুম ধরতেছে না। কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে আম্মাকে বললাম।
কেটে দাও ক্ষুধা লাগছে...
তুই টেবিলে গিয়ে বস,বউ মা যাও ওকে একটু খেতে দাও তো,আমার অনেক কাজ আছে..
মেয়েটা আমার পাশেই চিল
জি আম্মু দিচ্ছি
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে বাসা থেকে বের হলাম দোস্তদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। মাত্রই পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি পেলাম, তার মধ্যে আব্বা আম্মা বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে দিয়েছিল, আমার ভালো মনে হয় কারোই সহ্যই হয় না। অনেকটা জোর করে মেয়ে দেখতে নিয়ে গেল। ব্যস অঘটন ওইখানেই ঘটে গেল। মেয়েকে আব্বা আম্মার পছন্দ হয়ছে,তাই ওই দিনেই জোর করে আমার গলায় ফাঁসি ঝুলিয়ে দিল, মেয়েটাকে যে আমার পছন্দ হয়নি তা না, বরং আশ্চর্য হয়েছিলাম অনেকটাই। কি আর করার বিয়েটা শেষ করতেই হল। টংয়ে বসে চা খাচ্ছিলাম এমন সময় এক দোস্ত বলে উঠলো।
মামা রাতে ঘুম কেমন হইসে..?
আরে মামা... রাতটা পোড়ায় বিন্দাস কাটছে, কি যে মজা হয়েছে, তোদের বলে বোঝাতে পারবো না....
এটা বলে সবাইকে হেসে ফেললাম। কখন যে দুইটা বেজে গেছে খেয়ালই করিনি। হঠাৎ আম্মার ফোন।
ওই হারামজাদা কই তুই?? তাড়াতাড়ি বাড়ি তে আয়...
এটা বলেই ফোন কেটে দিল..! সবার কাছ থেকে তাড়াতাড়ি বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, আল্লাহ জানে কপালে কি আছে..? আম্মা এতো ক্ষেপলো কেন বুঝলাম না...দরজায় নক করতেই মেয়েটা দরজা খুলে দিল। মনে হয় সে জানতো আমি এখনই আসবো..যাইহোক রুমে ঢুকার সাথে সাথেই আম্মার হাই লেভেলের ঝাড়ি।
তোর কি কোনদিনও বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না, তোর জন্য যে কেউ না খেয়ে বসে থাকতে পারে সে খেয়াল কি তোর আছে..?!
অনেক টা অবাক হয়, আমার জন্য আবার কে না খেয়ে আছে..?
চুপ কথা কম বল। মেয়েটা সারাদিন এতই কষ্ট করে এতই রান্না করছে আর নবাবের বাড়িতে আসার সময় হয়না..
আম্মাকে আর কিছু না বলেই ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে পড়লাম।টেবিলে এতগুলা পছন্দের খাবার দেখে মনে হচ্ছে ক্ষুদা যেন আরো দশ গুণ বেড়ে গেছে...খাবার গুলো যদিও অনেক সুস্বাদু ছিল তবুও মেয়েটাকে ঝাড়ি দিতে শুরু করলাম আম্মা বলছে।
আজ সব রান্না মেয়ে টি করেছে।
এগুলো কি রান্না করেছেন? এগুলো মানুষ খায়?যত সব অখাদ্য কুখাদ্য রান্না করেছেন। রান্না পারেন না রান্না করতে বলসে কে?ঢং দেখলে বাঁচি না। খাওয়া থেকে উঠে দাঁড়াতে মেয়েটা বললো।
না খেয়ে উঠবেন না প্লিজ.. একটা অপেক্ষা করেন,একটা ডিম ভাজি করে এনে দেই....
আপনার ডিম আপনি খান। আপনার হাতের রান্না খাওয়ার কোন ইচ্ছা নাই আমার। অত দরদ দেখাইতে হবে না..!
দ্বিতীয় পার্ট পেতে ভোট দিয়ে কমেন্ট করে সাথে থাকুন...!