Copyright Free Image Source: Pixabay
তামিলভাষীরা আমকে বলে,‘মেনকে’। ভাষাবিদদের মতে, তামিল শব্দ এই মেনকে থেকে মালয়েশিয়ায় ‘ম্যানগে’ এবং পর্তুগিজ ভাষায় ‘ম্যানগা’ শব্দের উৎপত্তি। শেষে ‘ম্যানগা’ থেকেই ইংরেজিতে ‘ম্যাঙ্গো’ কথাটির চল হয়েছে।
আমের যে ঠিক কত জাত, তা বোধহয় কোনও আমবিশেষজ্ঞও নির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না। অনুমান হাজারের বেশি ছাড়া কম নয়। আবার শুধু কী বিভিন্ন নামের জাত সংখ্যায়, একই ফলের এত মনোহারি নাম পৃথিবীর আর কোনও দেশে, আর কোনও ফলের আছে বলে আমাদের জানা নেই।
যেমন হিমসাগর, গোলাপখাস, খাস-উলখাস, কিষানভোগ, গোপালভোগ, কোহিতুর, কোহিনুর, কালাপাহাড়, নবাবপসন্দ, বেগমপসন্দ, রানিপসন্দ, ইমামপসন্দ, দিলসাদ, মিঠুয়া, দুখিয়া, জাফরান, সফেদা, মালিহাবাদ, বাথুয়া, নীলম, মোহনঠাকুর, মোলায়েম জাম, সুবর্ণরেখা, শুকতারা, দশেরি, লালমণি, পরানকোলে, তালাবী, জরদালু, সুকুল, পেয়ারাফুলি, বেগুনফুলি, আম্রপালি, তড়কতোরা, রস-কি-গুলিস্তা ইত্যাদি।
🥭 তবে ল্যাংড়া, ফজলি আম দুটির নাম তেমন শ্রুতি সুখকর নয়।
ল্যাংড়ার জন্মস্থান কাশী। কিংবদন্তি সেখানকার এক ল্যাংড়া ফকিরের গাছে প্রথম ফলেছিল এই আমটি। লোকে বলত, ল্যাংড়া ফকিরের আম। পরে একসময় ফকির বিস্মৃত হল, থেকে গেল ল্যাংড়া আম তার অসাধারণ স্বাদ আর গন্ধ নিয়ে।
চাপাইনবাবগঞ্জের ফজলি, সকলেই জানেন বেশ বড় জাতের আম। আমের মরশুমের শেষ দিকে বাজার ভরে থাকে। লোকশ্রুতি ফজলিবিবি নামে এক মুসলমান মহিলার বাগানে প্রথম ফলেছিল এই আমটি। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় ফজলি।
অনেক আমেরই নাম নিয়ে রয়েছে এমন নানান লোকশ্রুতি, গল্প-কাহিনি। অনেক আমের নামের সঙ্গে আবার তার আদি জন্মস্থানটি চিহ্নিত হয়ে আছে। যেমন লখনউ-এর দশেরি গ্রামের আমদশেরি।
কৃষিবিদরা বলেন, আমগাছ নানা ধরনের মাটি ও জল হাওয়াতেই দিব্যি মানিয়ে নিতে পারে। সমুদ্র ছোঁয়া পরিবেশ থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ি এলাকাতেও আমগাছের চাষ হয়। ফলে সর্বত্র আমগাছের দেখা মেলে। এবং সেটা বহু কাল বহু যুগ আগে থেকেই। আমরা যেমন আজও আম খেয়ে যাচ্ছি, তেমনই অনুমান করা যায়, আমাদের চোদ্দো পুরুষ আগের চোদ্দো পুরুষও তাদের চোদ্দো পুরুষের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রাণভরে আম খেয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ নিঃসন্দেহে বলা যায়, আম চাষের ইতিহাস সুপ্রাচীন।
প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদ ডি. ক্যানডোল (De. Candolle) এর মতে, অন্তত চার হাজার বছর আগেও আমের চাষ ছিল।
অসম, ব্রহ্মদেশ, থাইল্যান্ড মিলে যে ভূখণ্ড, আমের আদিভূমি হচ্ছে সেটাই। যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৩২৭ বছর আগে আলেকজান্ডার যখন ভারতবর্ষ বিজয়ে আসেন, তখন সিন্ধু উপত্যকায় তিনি আমের বাগান দেখতে পেয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দে তৈরি সাঁচি স্তূপের শিল্পকর্মে আম ও আমগাছের চিত্র ছিল। তারপর হিউ-এন-সাঙ (৬৩২-৬৪৫ খ্রিঃ) কিংবা ইবন বতুতা (১৩২৫১৩৪৯ খ্রিঃ) প্রমুখ ইতিহাসখ্যাত বিদেশি পর্যটকেরাও তাঁদের ভ্রমণবৃত্তান্তে ভারতে আম চাষের উল্লেখ করেছেন।
সংস্কৃত কাব্যসাহিত্যেও আম বহুল প্রচারিত। আমকে সেখানে আমরা নানান নামেই পাই। যেমন—আম্র, আম্রতাম্র, সহকার, চ্যুত, রসাল ইত্যাদি। অজন্তা, ইলোরা ইত্যাদি প্রাচীন শিল্পকর্মে আম ও আমগাছের চিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। পৌরাণিক প্রেমের দেবতা মন্মথের পঞ্চশরের অন্যতম শর আভ্রমঞ্জরি।
আমের সঙ্গে মুঘল সম্রাটদের নাম যেমন, তেমনই ধারাবাহিকভাবে বাংলার অনেক নবাবের নামও জড়িয়ে আছে কিংবদন্তির মর্যাদায়।
অন্যান্য ফলের আকারে, এমনকী গন্ধ ও স্বাদ যুক্ত অনেক আম আছে। যেমন কেলোয়া নামের একটি আম আছে, যার আকার— এমনকী গন্ধটাও প্রায় কলার মতো। মিছরি-কলা বলেও এর প্রসিদ্ধি, কারণ স্বাদটা নাকি কলার সঙ্গে মিছরি মিশিয়ে খাবার মতো।
যেমন, বেলের গন্ধ পাওয়া যায় ‘বেলখাস’ আমে। একইরকমভাবে চেহারায় গন্ধে কিংবা স্বাদের মিলের জন্য কমলা, গোলাপজাম, তাল, কাঁঠাল, নাসপাতি, আঙুর, আনারস ইত্যাদি নামেরও আম আছে। যেমন আছে চন্দন, গোলাপ, মৌরি ইত্যাদি গন্ধ ছড়ানো আমও।
একই আম জায়গা বিশেষে যেমন কিছু ছোট বড় হয়, তেমনই জাত ভেদে আমের আকার ওজন বৈচিত্র্যও নেহাত কম নয়৷ ‘তেন্নেরু’ নামের একটা আম আছে, যার এক-একটি ওজনই হয় প্রায় দু’কেজি। তুলনায় ‘চন্দ্রকরণ’ বা ‘চন্দ্রকিরণ’ আমটি চব্বিশ-পঁচিশটিতে হয় এক কেজি। অর্থাৎ এক-একটির ওজন দাঁড়ায় মাত্র চল্লিশ গ্রাম।
বলা বাহুল্য, গন্ধে স্বাদে যে সকল আম অন্যান্য পরিচিত ফলের মতো কিংবা যে সকল আম (স্বাভাবিকের তুলনায়) বেশ বড় বা ছোট, তাদের সহজে চেনা যায়। বাকিদের জাত নির্ণয় করা এবং তাদের কাছাকাছি জাতের মধ্যে তুল্যমূল্য করা বেশ কঠিন।
আর এ থেকেই এসেছে কথাটা— বর্ণচোরা আম।
প্রশ্ন হচ্ছে, আমের এত এত জাত কেন, কেন তাদের স্বাদেও এত বৈচিত্র্য? আম বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এর উত্তরে আপাতভাবে তাজ্জব হওয়ার মতো যে কথা বলেছেন, তা এইরকম;
ল্যাংড়া গাছের ফলটা ল্যাংড়াই হবে, এটা আমাদের সকলেরই জানা, কিন্তু তাঁর আঁটি থেকে যে গাছ বের হবে, সেই গাছের ফল যে ঠিক কী জাতের হবে, তা জানবে মৌমাছিরা। কথাটা তাজ্জব হওয়ার মতো হলেও, এর সঙ্গত কারণ আছে। মৌমাছিরা মধু খুঁজতে বেরিয়ে কোন গাছের মুকুলের মাতৃকেশরের সঙ্গে অপর কোন গাছের পিতৃকেশর লাগিয়ে দিয়েছে, তা শুধু তাদেরই জানার কথা।
আধুনিক কালে বিজ্ঞানীরা মৌমাছিদের পরাগ মিলন ঘটানোর পদ্ধতি অনুসরণ করে ভিন্ন ভিন্ন জাতের আমের গুণগুলি মিশিয়ে নতুন জাতের আম তৈরি করেছেন।
একবার এক বাঙালি ভদ্রলোক লখনউ-এর খানদানি এক সর্দারের সঙ্গে দেখা করেন, উদ্দেশ্য, ভালো জাতের কয়েকটি আমগাছ সংগ্রহ করবেন। সর্দার তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাংলা মুলুকের কোন আমকে আপনারা বেশি পছন্দ করেন?’
বাঙালি ভদ্রলোক উত্তরে বেশ উৎসাহের সঙ্গে বলেন, “আমাদের ফজলি আম খুব মিষ্টি আর হিমসাগর সবচেয়ে বেশী মিষ্টি। সর্দার সাহেব তখন নাকি গম্ভীর হয়ে বলেছিলেন, ক্ষমা করুন, আপনাদের আম না খেয়ে গুড় খাওয়াই উচিত, কারণ গুড়ের চেয়ে বেশী মিষ্টি আর কিছু নেই!
আমের প্রধান দুটি শ্রেণি বা ভ্যারাইটি আছে, একটি Table Varieties অর্থাৎ শাঁসে ভরা উৎকৃষ্ট আম। অপরটি Suking varieties অর্থাৎ চুষে খাবার উপযুক্ত ছিবড়ে সমেত ভালো-মন্দ আম।
Table varieties যেমন হিমসাগর, ল্যাংড়া, আলফোন্সো ইত্যাদি খাবার হিসেবে সাধারণভাবে বেশি লোভনীয়, মিষ্টি এবং মুখে দিলে সহজে মিলিয়ে যায়। ভালো-মন্দ মিলিয়ে বিপুল যে Sucking varieties তার মধ্যেও স্বাদেগন্ধে বেশ কিছু উৎকৃষ্ট আম আছে। যেমন— -হীরা, ভবানী, চৌরস, কেশর, রস-কি-গুলিস্তা ইত্যাদি।
এখানে বলা দরকার, Table varieties যত উৎকৃষ্ট আমই হোক, বেশি খেলে বদহজম বা পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। কিন্তু Sucking varieties-এর আমে ছিবড়ে থাকার জন্য অসুস্থ হবার সম্ভাবনা অনেক কম। ফলে স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি উপকারী।
This is a one-time notice from SCHOOL OF MINNOWS, a free value added service on steem.
Getting started on steem can be super hard on these social platforms 😪 but luckily there is some communities that help support the little guy 😊, you might like school of minnows, we join forces with lots of other small accounts to help each other grow!
Finally a good curation trail that helps its users achieve rapid growth, its fun on a bun! check it out. https://plu.sh/altlan/
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit