বিয়া কইরা বাহির হইলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে কিছু টাকা বেঁচে গেলো। বড় ভাই (এবি) আমারে ট্যাকা দিতে দিলেন না। নিচে আইসা দাঁড়াইলাম। ওঁর রাগ পুরোপুরি শেষ, তবে যে মন যে খুশি তাও না। বিশাল রহস্যের চাদরে ঢাকা, এমতাবস্থায় না ঘাটানোই উত্তম কাজ।
: এখন কী করবা ঠিক করলা? (বড় ভাই নীরবতা ভাঙেন)
: আপাতত কিছু না, তয় নিজের বাড়ি যামু না এইটা সিওর। :'(
: তো কই যাইবা?
: চলেন আপনাদের বিবাহত্তোর খানাপিনা করাই। চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে। খাবার ভালো, তয় দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক আগে একবার পেট ভইরা খাইতে পারি নাই, আইজ ট্যাকা আছে চলেন খাই।
: আইচ্ছা চলো।
: আমার বাসায় যাওন লাগবে। আব্বা শমন জারি করেছেন। (পাশ থেইক্যা বন্ধুর চিক্কুর)
: তো বিয়াটা খাইয়া তারপর যা।
: অতো খায় না, হুটেলের লোকের রান্না খামু না। যার বিয়া, তার বউয়ের হাতের রান্না খামু। :D
: যা তাইলে। :@
বন্ধু চলে গেলো। বড় ভাই গাড়ি নিয়ে আসছেন, সেটাতে চড়েই রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা হলাম। সামনে ড্রাইভারের পাশে এবি। পেছনে নিশ্চুপ বাচাল আমি আর নিচুমুখে ওঁ। আবহাওয়ার রিপোর্ট পেন্ডিং। রেস্টুরেন্টে এসে স্বভাবস্বরূপ কোণার টেবিল দখল করলাম। বড় ভাই কথা কওনের সুযোগ দিয়ে চলে গেলো। যাবার আগে বলে গেলো....
: তোমরা অর্ডার দাও, আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। (সুযোগ দেওনের কী যুক্তি! )
বড় ভাই চলে গেছেন। আমি আর ওঁ। মেনু নিয়ে ওয়েটারকেও খেদিয়ে দিয়েছি। নীরবতা প্রথমে আমিই ভাঙি। :P
: বুঝলে এবি আমার চোখে দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষদের মাঝে একটা। চরম একটা মানুষ। দেখছো, কথা বলার সুযোগ দিয়ে কেমন চলে গেলো?
: দেখেছি।
: শোনো, তোমার কী মন খারাপ?
: না, চিন্তায় আছি। :/
: আমি বুঝতে পারছি। এখন কী করতে চাও?
: ঠিক জানি না, তবে বাসায় যেতে হবে বাবা-মাকে জানাতে হবে।
: তা ঠিক বটে! (আমি চিন্তিত মনে বললাম )
: বাসায় খারাপ কিছু না হয়ে যায়, এই মার খেতে তোমার আপত্তি নেই তো?
(চিন্তা বেড়ে গেলো, বিয়ের দিনে মাইর! )
: না না তোমার জন্য মার খাওয়া এ আর এমন কী? তোমাকে না মারলেই হলো....
: আমি আমাকে না, তোমাকে নিয়েই চিন্তিত।
: হুম!
(বড় ভাইয়ের আগমন)
: তোমরা এখনো অর্ডার দাও নি? ভালো আমি দিচ্ছি।
(বড় ভাই অর্ডার দিলেন, এরপর মুখ খুব কঠিন করে আমাদের দিকে তাকালেন)
: শোনো অর্ডার আসতে সময় লাগবে। এর মধ্যে কিছু কথা বলে নিই....। বিয়ে করেছো, এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। প্রথম রাত কোথায় কাটাবে কিছু ভেবেছো? বৌমা তুমি বলো।
: পারমিশন ছাড়া তোমার কোনো কথা বলা যাবে না। (আমার দিকে কড়া ভাষায় তাকিয়ে)
: না (নতুন বৌয়ের শর্টকাট উত্তর)
: ভালো। আমি ঠিক করেছি তোমরা আমার বাসায় কাটাও। ও বিয়েতে আসার সময় তোমাদের ভাবীকে বলে এসেছি সিচুয়েশন। বর্তমানে সে তাঁর দুই বোনকে নিয়ে ফুলশয্যা সাজানোর প্ল্যান করছে। সো প্রথম রাত তোমরা আমার বাড়িতেই কাটাচ্ছো। এবার বলো নিজ নিজ গার্ডিয়ানদের জানানোর ব্যাপারে তোমরা কে কী ঠিক করেছো? (আমার দিকে তাকিয়ে) তুমি আগে বলো।
: আমার প্ল্যান বাসা থেকে এম্নিতেই বেরুতে হবে, আমি সেটা নিয়ে চিন্তিত তা। কথা হইলো মাসের শ্যাষে বাসা ভাড়া পাওয়া যাইবো না, তাই আমরা ভালো কোনো হুটেলে দিনগুলো পার করতে পারি। এক ঢিলে দুই পাখি মারার নিয়তে আমার প্রস্তাব হইলো, এই হুটেলে কাটানোর সময়টা আমরা ঢাকার বাইরে হানিমুন কইরা কাটাই? আর বাসায় বলে দিবো যে, জরুরী একটা ট্যুরে যাইতেছি। সেখান থেকে আবার একটু প্রমোদ ভ্রমণে যাবো, আসতে দিন দশেক দেরি হবে....
: বুদ্ধি খারাপ না, গল্প বানাতে তোমার কষ্ট হবে না। আচ্ছা বৌমা তোমার কী অবস্থা? (এবির প্রশ্ন)
: আমি আজই জানাবো বাসায় গিয়ে। ও আর আমি। (বোমা বর্ষণকারী উত্তর)
: (নির্বিকার এবি বলেন) তাই ভালো। এখান থেকেই যাবা বলে ঠিক করেছো?
: জ্বি।
: ভালো। শোনো, আমি আমার গাড়ি দিয়ে যাচ্ছি। ড্রাইভারকে বলা আছে। ঢাকার ভেতরে সব জায়গায় যেতে পারবে। তোমার কী মনে হয় তোমার বাসায় যেয়ে কথা বলে ফিরে আসতে কতো সময় লাগবে? এখান বলে রাখি, আমি আশা করছি না, তাঁরা ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেবেন।
: দু ঘন্টা (বৌয়ের শর্টকাট উত্তর)
: আচ্ছা দু ঘন্টা পর আমি কল দেবো ওর নাম্বারে (আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন)।
(খাবার চলে এসেছে। খাবার খাচ্ছি। আপাতত বিদায়, আর আজ এই পর্যন্ত। পরবর্তীতে পর্ব পর্যন্ত এখানেই মূলতবি।)