আসগার্ডিয়া – অদ্ভুত ভাসমান এক দেশ! - পংকজ গোস্বামী

in new •  6 years ago 

asgardia-soc.jpg

যারা আসগার্ডিয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা একটু নড়ে চড়ে বসতে পারেন বৈকি! জ্বী ঠিকই পড়েছেন, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো একটি ভাসমান দেশ!

প্রথমেই প্রশ্ন আসে এই দেশের নাম এরকম অদ্ভুত কেন? আদতে এই নামটি নেওয়া হয়েছে নর্স (NORSE) নামের একটি পৌরাণিক কাহিনী থেকে। যেখানে মহাকাশের একটি শহরের গল্প বলা হয়েছে, যার বাসিন্দাদের আসগার্ডিয়ান (ASGARDIAN) বলা হত এবং তাদের কাজ ছিল পৃথিবীকে রক্ষা করা! ২০১৩ সালে রাশিয়ার উত্তরপশ্চিমের একটি অঞ্চলে ভয়াবহ একটি উল্কাপিণ্ড আঘাতে সেখানকার ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসগার্ডিয়া নামের অস্থাবর দেশটি বানানোর মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ধরনের মহাজাগতিক আপদ থেকে পৃথিবীকে সুরক্ষা দেওয়া।

অ্যারোস্পেস ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের প্রধান এবং ইউনেস্কোর স্পেস সাইন্স কমিটির প্রেসিডেন্ট, খ্যাতনামা রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক ড. ইগর আশুরবেলি প্রথম এই ধরনের চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নের মহাপরিকল্পনা করেন। তার পরিকল্পনা মতে তিনি প্রথম পাঁচবছর দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্ধারণ করা হবে। দেশটিতে একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন এমনকি দেশটির বর্তমানে ১৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি সচল সংসদও রয়েছে।

আসগার্ডিয়া কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের কাছে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান হয়েছে। দেশটির বর্তমান প্রশাসনিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ড. ইগর আশুরবেলির বক্তব্য অনুসারে মহাকাশে থাকা হাজার হাজার রকেট, মহাকাশযান এবং কৃত্রিম উপগ্রহের ধ্বংস হয়ে যাওয়া অংশগুলো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এইসব অংশ কোনভাবে পৃথিবীতে এসে আঘাত করলে পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে! এছাড়াও অপকারী মহাজাগতিক কিরণ, গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড এবং ধুমকেতু পৃথিবীতে এসে এর ক্ষতিসাধন করতে পারে। তখন পৌরাণিক কাহিনীর মতই আসগার্ডিয়া আমাদের পৃথিবীর বডিগার্ড হিসেবে কাজ করবে।

১৯৬৭ সালের আউটার স্পেস ট্রিটি অনুযায়ী মহাকাশের যেকোনো বস্তুর ওপর সব রাষ্ট্রের সমান অধিকার রয়েছে। এজন্যই আসগার্ডিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি সম্পুর্ন বিনামূল্যে আবেদন করতে পারবেন এই (https://asgardia.space/en/join) ঠিকানায়! এছাড়াও দেশটির নিজস্ব একটি ওয়েবসাইটও (http://asgardia.space/) রয়েছে।

এরইমাঝে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আবেদন করা হয়েছে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন এবং তারপরেই আছেন বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের জণগণ। যুক্তরাজ্য আছে পাঁচ নম্বর অবস্থানে এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী তথা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জণগণ আছেন আট নম্বরে। রজনীকান্ত উপাধি পাওয়া ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ রাশিয়া দশ নম্বর অবস্থানটি ধরে রেখেছে এবং আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান জানা সম্ভব হয়নি।

বলা হয়েছিল এক লক্ষ মানুষের আবেদন পাওয়ার পর জাতিসংঘের কাছে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি চাওয়া হবে যা ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে দেশটির সদস্যপদ পেয়েছেন প্রায় পাঁচলক্ষ মানুষ (৫,৩১,৮৪৬ জন) আর অপেক্ষমান তালিকায় আছেন প্রায় চব্বিশ হাজার (২৪,৫৭৭)।

আসগার্ডিয়া ঘোষনা দেয়া হয় ২০১৬ সালের ১২ ই অক্টোবর। ২০১৭ সালেই বিজ্ঞানী রা ASGARDIA-1 নামের একটি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানোর মাধ্যমে আসগার্ডিয়া দেশটির গোড়াপত্তন করতে চেয়েছিলেন যা এরই মাঝে সম্পাদন করা হয়েছে। ASGARDIA-1 হচ্ছে দেশটির রাজধানী।

আসগার্ডিয়া একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ এবং এর নাগরিকদের আসগার্ডিয়ান বলা হবে। দেশটি আস্তে আস্তে সময় নিয়ে সম্পূর্ণরূপে নির্মাণ করা হবে। ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দেশটি তাঁর সংবিধান কার্যকর করে এবং ২৫শে জুন, ২০১৮ তে এটি একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আগামী সাত বছরের মঝেই দেশটিতে অর্থাৎ স্পেসে মানুষকে অধিষ্ঠান করার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এই দেশটির আবির্ভাবের পিছনের আরো দুইটি লক্ষ্য হলো স্পেস কে মানুষের বসবাসযোগ্য করা এবং সাথে সাথে খুব সহজেই মানুষকে স্পেসে পাঠানো!

ASGARDIA-1 স্পেস বা মহাকাশ থেকে তথ্য উপাত্ত আহরন করবে এবং নাগরিকত্ব পাওয়া মানুষদেরকে মহাকাশ সম্পর্কিত সকল বিষয়াবলী অবহিত করা হবে তার সাথে সাথে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। দেশটির নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকবে, একটি নাগরিকদের বর্তমান দেশের এবং অন্যটি আসগার্ডিয়ান।

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরে প্রায় ৩৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে বানানো হবে দেশটি এবং মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মত সকল কিছু সেখানে থাকবে। অর্থাৎ গল্প বা সিনেমায় দেখা পুরো একটি দল, সমাজ বা কমিউনিটিকে নভোমন্ডলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। ধারনা করা হচ্ছে নাসার (NASA) পাঠানো স্পেস প্রোব (SPACE PROBE) VOYAGER-1 এর মতই এটি অনির্দিষ্টকাল ভেসে বেড়াবে মহাকাশে!

দেশটি অন্যান্য দেশকেও মহাকাশ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত গবেষণায় সাহায্য করবে। এখানে ১৯৬৭ সালের আউটার স্পেস ট্রিটি অনুযায়ী সকল আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ১২ টি মাসে আমরা বছরকে ভাগ করেই অভ্যস্ত, কিন্তু আসগার্ডিয়ানরা ১৩ টি ভাগে বছরকে ভাগ করবে! দেশটির কারেন্সির নাম সোলার (SOLAR). দেশটির প্রধান দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি হলেও এটির আরও ১১ টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে। স্পেনিশ, মান্দারিন, তুর্কি, ইতালিয়, রুশ, ফরাসি, আরবি, পর্তুগিজ, হিন্দি, জার্মান এবং ফার্সি ভাষাও এই দেশের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

দেশটির মোটো (Motto), “One Humanity, One Unity.”
তো আপনি কি হতে চান প্রথম মনুষ্য জাতিসত্ত্বার অংশ যাদের অবস্থান হবে মহাশুন্যে?

asgardia-space-nation-colony-inside-illustration.jpg

reference of writing and photograph: https://bangalianaa.com/%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A7%81%E0%A6%A4-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE/

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

apnar whole content copy/paste kora.. erokom copy/paste korle apnar account bipode porte pare. Be careful