হিসাবে ভুল করায় ধরা পড়ল ডিজেল চুরি!steemCreated with Sketch.

in news •  7 years ago 

1aa692fb0909001260463007e8392994-5a040c39753c2.jpgরাষ্ট্রীয় তেল বিপণন কোম্পানি যমুনা অয়েলের প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে দুটি জাহাজে ডিজেল সরবরাহের সময় বড় জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। গত ২৫ অক্টোবর এই স্থাপনা থেকে দুটি জাহাজে করে খুলনার দৌলতপুর এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় যমুনার ডিপোতে জ্বালানি সরবরাহের সময় ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৮২ লিটার ডিজেল পাচারের ঘটনা ঘটে। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ৬৫ টাকা। ওই ডিজেল চুরির ঘটনায় সরকারের ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দুটি জাহাজে মোট ৩৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৫২ লিটার ডিজেল ভরা হয়। কিন্তু কাগজে-কলমে দেখানো হয় ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২৭০ লিটার। অর্থাৎ ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৮২ লিটার ডিজেল বেশি তোলা হয় জাহাজ দুটিতে। পতেঙ্গার প্রধান স্থাপনায় সংরক্ষিত রেজিস্টারে (ডিপ বুক) এবং দুটি জাহাজের চালানে (লোডিং স্লিপ) দুই রকম তথ্য উল্লেখ থাকায় বিষয়টি ধরা পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, এ অনিয়মের সঙ্গে যমুনা অয়েলের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।

জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ এম টি মনোয়ারায় করে ফতুল্লায় এবং এম টি রাইদায় করে খুলনার দৌলতপুরে যমুনার দুটি ডিপোতে গত ২৫ অক্টোবর ডিজেল পাঠানো হয়। যমুনা অয়েল কোম্পানি সূত্র জানায়, মনোয়ারা জাহাজে সংরক্ষিত চালানের (লোডিং স্লিপ) তথ্য অনুযায়ী, এতে ১৮ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ লিটার ডিজেল ভরা হয়। কিন্তু পতেঙ্গার প্রধান কার্যালয়ে সংরক্ষিত ডিপ স্লিপে জাহাজটিতে ১ লাখ ৭৮২ লিটার ডিজেল কম দেখানো হয়।

একই রকম জালিয়াতির ঘটনা ঘটে এম টি রাইদা জাহাজে। এই জাহাজে তোলা হয় ২০ লাখ ১২ হাজার ৫৮৬ লিটার ডিজেল। কিন্তু ডিপ বুকে ৫০ হাজার ৯০০ লিটার ডিজেল কম দেখানো হয়।

অবশ্য যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান স্থাপনার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সহকারী মহাব্যবস্থাপক) নুরুদ্দিন আল মাসুদ এই ঘটনাটিকে ডিজেল পাচার বা জালিয়াতির ঘটনা বলে মনে করেন না। তাঁর দাবি, ডিপ বুক ও লোডিং স্লিপের যে তারতম্য, সেটা লেখার ভুলের কারণে হতে পারে।

ডিজেল পাচারের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ৪ নভেম্বর রাতে খুলনার দৌলতপুর থেকে এম টি রাইদা জাহাজ জব্দ করেন র‍্যাব সদস্যরা। র‍্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাইদা জাহাজের ডিজেল সরাসরি খুলনার দৌলতপুর ডিপোয় খালাস করার কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে জাহাজটি রওনা হওয়ার পর ভোলা এবং খুলনায় বিক্রি করা কিছু ডিজেল জব্দ করেছেন তাঁরা।

র‍্যাব কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিজেল পাচারের ঘটনার তদন্তে তাঁরা যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চান। কিন্তু কোম্পানির কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে প্রথমে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। পরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেন। বিপিসির চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্ত করবেন বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন।

যমুনা অয়েল কোম্পানি সূত্র জানায়, পতেঙ্গার প্রধান স্থাপনা থেকে বিভিন্ন ডিপোতে জাহাজে করে কত জ্বালানি পাঠানো হচ্ছে সে তথ্য (ডিপ বুক) শুধু একটি দপ্তরে (প্রধান স্থাপনার প্রশাসনিক কার্যালয়) সংরক্ষণ করা হয়। তবে জাহাজে জ্বালানি তোলার লোডিং স্লিপের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট পাঁচটি দপ্তরে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আগ্রাবাদে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে দুটি, প্রধান স্থাপনায় একটি, যে জাহাজে জ্বালানি ভরা হয় সেখানে একটি এবং সংশ্লিষ্ট ডিপোতে (যেখানে জ্বালানি পাঠানো হচ্ছে) একটি অনুলিপি পাঠানো হয়। সারা দেশে যমুনা অয়েলের ১৬টি ডিপো রয়েছে।

যমুনা অয়েল বিপিসির অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ডিজেল জালিয়াতির ঘটনায় বিপিসি এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ২ নভেম্বর পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিপিসির তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান সংস্থার ব্যবস্থাপক (বিপণন) মো. মোরশেদ হোসাইন আজাদ। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দৌলতপুর এসে তদন্তকাজ শুরু করেছেন তাঁরা।

রাইদা জাহাজ থেকে পথে পথে বিক্রি করা আট হাজার লিটার ডিজেল র‍্যাব জব্দ করেছে। দোষীদের খুঁজে বের করবেন তাঁরা।

যমুনা অয়েলের পতেঙ্গার প্রধান স্থাপনার দুই কর্মকর্তাকে আগ্রাবাদের প্রধান কার্যালয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল হাসান।

এদিকে ডিজেল পাচারের ঘটনায় যমুনা অয়েলের পতেঙ্গার প্রধান স্থাপনার তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে খুলনার দিঘলিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে বলে গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান র‍্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আসামিদের মধ্যে রাইদা জাহাজের চার কর্মীসহ পাঁচজনকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছেন তাঁরা।

ডিজেল পাচারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!