বিয়েশাদির মতো উৎসব বা জাঁকালো অনুষ্ঠানে সোনার গয়না লাগেই। মূল্যবান ধাতু বলে সোনা নিয়ে নানা কেলেঙ্কারি বা অপরাধমূলক ঘটনাও কম ঘটছে না। সোনার গয়না ছিনিয়ে নিতে ডাকাতি, ছিনতাই বা চুরির ঘটনা অহরহ ঘটছে।
কিন্তু সোনা নিয়ে সব হিসাব-কিতাব যেন উল্টে যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। উড়োজাহাজের শৌচাগারের বেসিন, কমোড বা যাত্রীদের আসনের নিচে থেকে সোনার বার উদ্ধারের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। আবার বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজের শৌচাগার, ময়লার ঝুড়ি, ট্রলির নিচে বা কার্গো গুদামে পড়ে থাকা কাপড়ের বোঁচকায় পাওয়া গেছে সোনার বিভিন্ন চালান।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দরের ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় প্রায় ৭০ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে শুল্ক বিভাগ এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর বাজার মূল্য ৩৫ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও ঢাকা কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, আলাদা ১৫টি চালানে এই ৭০ কেজি সোনা শাহজালাল বিমানবন্দরে এসেছিল। কোটি কোটি টাকার এসব পরিত্যক্ত সোনার দাবিদার পাওয়া যায়নি। মালিকের সন্ধানও মেলেনি এখনো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে পাচারকারীরা ধরাও পড়ছে না।
সোনার এসব চালান কিন্তু সবার চোখে ধরা পড়ে না। প্রতিটি সোনার বারের ওজন ১০০ গ্রাম থেকে ১১৬ গ্রামের মতো। কখনো কালো, কখনো সাদা, কখনো হলুদ বা বাদামি রঙের স্কচটেপে জড়িয়ে ছোট ছোট প্যাকেটে করে আনা হয়। কিন্তু স্কচটেপের রং যা-ই থাকুক না কেন, প্যাকেটগুলোর আকৃতি একই।
খুব বড় চালান উদ্ধারের ঘটনা এ বছর ঘটেনি। সাত কেজি ওজনের চারটি চালান ধরা পড়েছে। ২৪ জানুয়ারি ওমানের মাসকট থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজের শৌচাগার থেকে কালো স্কচটেপে মোড়ানো তিনটি প্যাকেটের মধ্য থেকে সোনার ৬০টি বার উদ্ধার করা হয়। এর মোট ওজন ৬ কেজি ৯৬০ গ্রাম। এর মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২৬ মার্চ সাত কেজি সোনার চালান আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
এরপর ১ মে দেশের আরেকটি বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার একটি উড়োজাহাজ থেকে প্রায় সাত কেজি সোনা পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
কলকাতা থেকে আসা ওই উড়োজাহাজের ৯বি নম্বর আসনের নিচে একটি ব্যাগের ভেতর সোনার ৬০টি বার পাওয়া যায়। ব্যাগটিতে হলুদ রঙের স্কচটেপে মোড়ানো ছয়টি বান্ডিল পাওয়া যায়। প্রতিটি বান্ডিলে ১০টি করে মোট ৬০টি সোনার বার ছিল। প্রতিটি বারের ওজন ১১৬ গ্রাম করে। সব মিলিয়ে উদ্ধার হওয়া সোনার ওজন ৬ কেজি ৯৬০ গ্রাম।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানায়, ইউএস বাংলার এই উড়োজাহাজ সিঙ্গাপুর থেকে ঘটনার দিন সকালে ঢাকায় আসে। ওই উড়োজাহাজে কলকাতাগামী কয়েকজন ট্রানজিট যাত্রী ছিলেন। তাঁদের নিয়ে এর পরপরই উড়োজাহাজটি কলকাতায় চলে যায়। কলকাতা থেকে ফিরতি ফ্লাইট ওই দিন বিকেল চারটার দিকে ঢাকায় ফিরে আসে।
সাত কেজি সোনার চালান পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনা ঘটে ৮ অক্টোবর। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিমানবন্দরের এয়ার ফ্রেইড এলাকা থেকে কাপড়ের রোলের ভেতর থাকা সাত কেজি সোনার চালানটি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি, ওই দিন রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এস কিউ ৪৪৬ নম্বর ফ্লাইটে করে সোনার চালানটি আসে। এবার অবশ্য এক কেজি ওজনের সাতটি সোনার বার পাওয়া যায়। কালো কাপড়ের একটি রোলের ভেতর সোনার বারগুলো পাওয়া যায়।
অন্যদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে আসা ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ থেকে সাড়ে চার কেজি এবং ১১ অক্টোবর মাসকট থেকে ইউএস বাংলার একটি উড়োজাহাজের সিটের নিচ থেকে চার কেজি সোনা জব্দ করা হয়।