বাড়ল বাংলাদেশের বিপদ

in news •  7 years ago 

1-822.jpg

দুই সেশনে মিলে ৮ উইকেট হারিয়ে ফলোঅন এড়ালো টাইগাররা। কিন্তু পরপর দুই উইকেটে বেড়ে গেল বিপদ। নেই কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তবে আজ তামিম এবং মমিনুলের আউটের পর ফলোঅনের পড়ার শঙ্কাটা ছিল মুশফিকদের। তাই ফলোঅন এড়িয়ে কিছুটা স্বস্তিতেই আছে বাংলাদেশ। এখন উইকেটে উইকেটে আছেন মেহেদী মিরাজ এবং শফিউল।

হতাশার সেশন
সেশনটি শুরু হয়েছিল অনেক আশা নিয়ে। উইকেটে ছিলেন মুমিনুল ও মাহমুদউল্লাহ। জমে গিয়েছিল জুটি। সেশন শেষ হতে হতে শেষ বাংলাদেশের বড় রানের আশাও। তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ৩০৮। সেশনে রান এসেছে ৯০, কিন্তু উইকেট পড়েছে চারটি। মাহমুদউল্লাহ ও মুমিনুলের পাশাপাশি হারাতে হয়েছে সাব্বির ও তাসকিনকেও। ব্যবধান কিছু কমাতে ভরসা এখন মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট।

মরকলের বলে আউট মাহমুদুল্লাহ
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভালই লড়ছিলেন। কিন্তু ইনিংসের নতুন বল নেওয়ার প, মরকেলের বলে আউট হয়ে যান বাংলাদেশকে ফলোঅন এড়ানো এই ব্যাটসম্যান।

তিনশ স্পর্শ
কেশভ মহারাজকে স্লগ সুইপে মাহমুদউল্লাহর ছক্কা। ওই শটেই একই সঙ্গে দুটি মাইলফলক। ফলো-অন এড়িয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। পাশাপাশি স্পর্শ করল ৩০০। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯ ইনিংসে মাত্র দ্বিতীয়বার!

বাজে শটে সাব্বির আউট
৮০ ওভার শেষ শেষ হলেও নতুন বল নিলেন না ফাফ দু প্লেসি। পুরোনো বলেই শরীর সোজা শর্ট বল করলেন ডুয়ানে অলিভিয়ের। অলিভারের বাউন্সি বল ডিফেন্স করতে যায় সাব্বির। তবে বল ব্যাটে লেগে উইকেটে লাগলে ৩০ রান করে আউট হন তিনি। ফলোঅন এড়ানোর ঠিক আগে একটি উইকেট। ভাঙল ৬৫ রানের জুটি।

ষষ্ঠ জুটির পঞ্চাশ
দ্বিতীয় নতুন বলের আগে হাত ঘুরানোর সুযোগ পেলেন এইডেন মারক্রাম। তাকে রিভার্স সুইপে চার মেরে সাব্বির পূর্ণ করলেন জুটির পঞ্চাশ।

মুমিনুলকে হারানোর বড় ধাক্কা অনেকটাই সামাল এই জুটিতে। যদিও শুরুতে করতে হয়েছে লড়াই। জুটির প্রথম রানের দেখা পেতে লেগেছিল ২২ বল। পরে অনেকটাই সাবলীল সাব্বির ও মাহমুদউল্লাহ। বেরিয়ে এসে মহারাজকে ছক্কাও মেরেছেন সাব্বির।

মাহমুদউল্লাহর ফিফটি
সাকিব আল হাসানের বিশ্রামে সুযোগ পেয়েছিলেন দলে ফেরার। তার অভিজ্ঞতায় ভরসা করেছিল দল। বাউন্সি উইকেটে তার সামর্থ্যে আস্থা রেখেছিলেন নির্বাচকেরা। মাহমুদউল্লাহ প্রতিদান দিলেন ফেরার ইনিংসেই পঞ্চাশ ছুঁয়ে। লাঞ্চের আগে একটু ছটফটে ছিলেন। খেলেছেন বেশি কিছু শট। নিয়েছেন ঝুঁকি। লাঞ্চের পর ছিলেন অনেক সতর্ক। খেলেছেন সাবধানে। রাবাদাকে বাউন্ডারিতে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ১০৭ বলে। ক্যারিয়ারের ১৪তম অর্ধশতক। পরের বলে বাউন্ডারি আরেকটি।

আউট হলেন লড়াকু মুমিনুল
সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন বড় কিছুর। কিন্তু সেটি রয়ে গেল অপূর্ণ। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই আউট মুমিনুল হক। সকাল থেকে সামলেছেন প্রোটিয়াদের অনেক বিষাক্ত বল। কিন্তু আউট হলেন আপাত নিরীহ এক ডেলিভারিতে। লেংথ বলে পেছনের পায়ে খেললেন মুমিনুল। তবে একটু শক্ত হাতে। সেটিই কাল হলো। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ।

১৫০ বলে ১২ চারে ৭৭ রানে ফিরলেন মুমিনুল। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ ইনিংস।

প্রথম সেশন টাইগারদের
তবে তামিম ইকবালকে হারানোর হতাশা পেছনে ফেলে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। লাঞ্চ পর্যন্ত আর উইকেট হারায়নি দল। মাহমুদউল্লাহ ও মুমিনুলের সৌজন্যে রান উঠেছে প্রায় ওয়ানডের গতিতে। দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ শট খেলেছেন অনেক। কয়েকটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ২৬ রানে জীবনও পেয়েছেন। লাঞ্চের আগের ওভারেও ক্যাচ মতো দিয়েছিলেন। তবে দলের স্বস্তি হয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে গেছেন। সকালে কঠিন সময়টা চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় কাটিয়ে দেওয়ার পর সহজাত সব শট খেলেছেন মুমিনুলও। তার ব্যাটে বড় কিছুর ইঙ্গিত।

তৃতীয় দিন লাঞ্চের সময় বাংলাদেশে রান ৪ উইকেটে ২১৮। মুমিনুল অপরাজিত ৭২ রানে, মাহমুদউল্লাহ ২৬। ওভারপ্রতি চারের বেশি রান তুলে অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটির রান ৬০।

জীবন পেলেন মাহমুদউল্লাহ
আবারও হতাশ কেশভ মহারাজ। আবারও তার বলে পড়ল ক্যাচ! এবার বেঁচে গেলেন মাহমুদউল্লাহ।

অফ স্টাম্পের বাইরের বলে গ্লাইড মতো করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে গেলেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি কুইন্টন ডি কক। কিপারের গ্লাভসে লেগে বল কিছুক্ষণ ছিল বাতাসে। তবে স্লিপে হাশিম আমলার হাত পর্যন্ত যায়নি বল।

মাহমুদউল্লাহ জীবন পেলেন ২৬ রানে।

আরেক জুটির পঞ্চাশ
উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই দারুণ ইতিবাচক খেলছেন মাহমুদউল্লাহ। খেলছেন ওয়ানডে ঘরানার শট। একটু ঝুঁকিপূর্ণ, তবে এখনও পর্যন্ত বেশ কার্যকর। রানও উঠছে ওয়ানডে গতিতে। জুটি ছাড়িয়ে গেছে পঞ্চাশ। পঞ্চম উইকেট জুটির পঞ্চাশ রান হয়েছে ৬৩ বলে। ৫৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ২১৪। ৬৮ রান নিয়ে খেলছেন মুমিনুল, ৩৮ বলে ২৬ রান নিয়ে মাহমুদউল্লাহ। দুজনের জুটির রান ৫৬।

মুমিনুলের ফিফটি
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ছিলেন না একাদশে। পরের টেস্টে ফিরে করেছিলেন ৩১ ও ২৯। এবার এগোলেন আরেকটু। করলেন অর্ধশতক।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও করেছিলেন ৬৮ ও ৩৩। সেই ফর্ম টেস্টেও বয়ে নিয়ে এলেন। ক্যারিয়ারের দ্বাদশ অর্ধশতক স্পর্শ করেছেন ১১২ বলে। বেরিয়ে এসে কেশভ মহারাজকে উড়িয়ে চার মেরে ছুঁয়েছেন মাইলফলক।

আগের দিন নেমেছিলেন শুরুতেই ইমরুল আউট হওয়ার পর। এরপর যেভাবে দিনটি শেষ করেছেন এবং তৃতীয় দিন সকালে প্রোটিয়া পেসারদের চ্যালেঞ্জ যেভাবে সামলেছেন, তার ক্যরিয়ারের অন্যতম সেরা ফিফটি হয়ে থাকবে এটি। চার পেয়ে পঞ্চাশের পর সেটি উদযাপন করেছেন আরেকটি বাউন্ডারিতে। বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৮৫। মুমিনুল খেলছেন ৫৬ রানে, ৯ রানে মাহমুদউল্লাহ।

তামিম-হতাশা
সকালে রাবাদার রিভার্স সুইং, মরনে মরকেলের বাউন্স দারুণভাবে সামলালেন তামিম। কিন্তু আউট হলেন কিনা আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োর বাজে এক বলে!

লেগ স্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে গ্লান্স করেছিলেন তামিম। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে দেয় আলতো করে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় গ্লাভসে জমান কুইন্টন ডি কক।

৪১ রানে বিদায় তামিমের। ভাঙল ৫৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৫৮।

তামিম-মুমিনুল জুটির পঞ্চাশ
তামিম-মুমিনুলের বিপক্ষে রাবাদা ও মর্কেল, দুই পাশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই পেসার শুরু করলেন রাউন্ড দা উইকেটে। দুজনই আদায় করে নিচ্ছিলেন রিভার্স সুইং। সঙ্গে গতি আর বাউন্স তো ছিলই। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যানের কঠিন পরীক্ষা নিল দুই প্রোটিয়া পেসার।

তবে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় সময়টা কাটিয়ে দেন মুমিনুল ও তামিম। প্রথম ৯ ওভারে রান আসে ৭। তবু লড়াই ছাড়েননি দুজন। দিনের দশম ওভার থেকে আসে ১৭ রান।

দিনের প্রথম রান পেতে মুমিনুলের লেগে যায় ৩২ বল। আগের দিন থেকে হিসাব করলে ৪০ বলে সেটি মুমিনুলের প্রথম রান! তবে দুই রান নিয়ে খরা কাটানোর পর রাবাদাকে টানা দুই বলে মারেন বাউন্ডারি।

দুজনের জুটিতে স্পর্শ করে পঞ্চাশ রান। বাংলাদেশের রান ৪৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৭।

আরেকটি নিষ্ফলা রিভিউ
কাগিসো রাবাদার বলে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার রিভিউ। এবারও ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। রিভার্স সুইঙ্গিং ইয়র্কার ছোবল দেয় তামিমের বুটে। খোলা চোখে মনে হচ্ছিলো, বিপদে তামিম। তবে রিপ্লে সায় দিল তামিমের পক্ষে।

হক আইতে দেখা গেল, বল চলে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। রাউন্ড দা উইকেটে বল করছিলেন রাবাদা, সেই অ্যাঙ্গেল থেকে যথেষ্ট ভেতরে ঢোকাতে পারেননি বল। তামিমের রান তখনও সেই ২৬। দলের রানও একই, ৩ উইকেটে ১৩১।

নতুন নিয়মের প্রথম সুবিধা
আম্পায়ার্স কলে এখন থেকে আর রিভিউ হারাবে না দলগুলি-আইসিসির নতুন এই নিয়মের প্রথম সুবিধা পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

রাবাদার বলে তামিমের বিপক্ষে এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। রিপ্লেতে দেখা যায়, রাউন্ড দা উইকেটে করা রাবাদার বল লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে যাচ্ছিল। আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান তামিম। তবে নতুন আইন অনুযায়ী অক্ষত থেকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি রিভিউ।

তামিমের রান তখন ২৬। বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৩১।

তৃতীয় দিনে মাঠে নামছে টাইগাররা
দিনের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আর শেষ অংশের অবস্থাও একই। যে পিচে এক সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা নিলেন তিন উইকেট ঠিক একই পিচে বাংলাদেশের বোলাররা শুধু খেটেছেন, কোন ফল পাননি।

কিছুটা সুবিধা অবশ্য পেতে পারেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা। কারণ ডেল স্টেইন, ফিলান্ডারের মত বিধ্বংসী বোলাররা এই সিরিজে নেই। তবুও তরুণ পেসার কাগিসো রাবাদা নিজেদের কন্ডিশনে ভালো অস্ত্র দক্ষিণ আফ্রিকার। বোলারদের এই টেস্টে দায়িত্ব যা ছিলো সেটা পালনে তারা ব্যর্থ । এখন যা করার সেটা করতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই। লম্বা সময় ধরে ব্যাট করে এই টেস্ট বাঁচাতে হবে তাদের। এই টেস্টের মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়ে যাবে অনেক কিছু।

নিজেদের মাটিতে লম্বা সময় ভালো করার পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও যে বাংলাদেশ দল খেলতে শিখে গিয়েছে সেটা দেখানোর কিংবা প্রমাণের উপযুক্ত সময় চলতি টেস্ট ম্যাচটি। বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে এই টেস্ট থেকে। কিন্তু ব্যাটিংটা যেভাবে করার দরকার ঠিক-ঠাক ভাবে যদি দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা তাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেন তাহলে টেস্ট অন্তত ড্র করা সম্ভব হবে।

আর তাই আজকের দিনের উপর চোখ থাকবে সবার। তামিম আর মমিনুল দিনের শুরুটা কেমন করেন সেটাও দেখার বিষয়। যদি টেস্ট ড্র করতে হয় সেক্ষেত্রে কম করে হলেও আজ পুরো দিন ব্যাট করতে হবে বাংলাদেশকে। আর তিন উইকেট গতকাল পড়ে যাওয়ায় এখন ঞ্চিএর দিকে আছে মাত্র দুই থেকে তিনজন ব্যাটসম্যান। তাই এটা বেশ কঠিন বাংলাদেশের জন্য।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!