নেটোর সব সদস্য দেশ একই সঙ্গে সামরিক এই গোষ্ঠীর খরচ সমান ভাবে বহন করে না বলে তাঁর ক্ষোভ বহু দিনের। বস্তুত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেশ কয়েক বার নেটো গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। আরও এক বার নেটো নিয়ে বেফাঁস প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শনিবার সাউথ ক্যারোলাইনার কনওয়েতে একটি প্রচার সভায় হাজির হয়ে ট্রাম্প বলেছেন, নেটোর যে সদস্য দেশগুলি নিয়ম মেনে প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ বহন করে না, রাশিয়াকে সেই সব দেশ আক্রমণ করতে বলবেন তিনি। আর বাস্তবে এমনটা হলে, মানে শত্রুপক্ষ সত্যিই সেই সব সদস্য দেশকে আক্রমণ করলে, নেটো বাহিনী তাদের আদৌ সাহায্য করতে যাবে না।
চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের অন্যতম পছন্দের প্রার্থী তিনি। সেই ট্রাম্পের এ হেন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ। তাঁর নিজের দেশের ডেমোক্র্যাট প্রশাসনও ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব। তাঁর এই মন্তব্য আদতে নেটো চুক্তির পাঁচ নম্বর ধারার পুরোপুরি বিরোধী বলে সরব অনেক দেশ। সেই ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, একটি মাত্র সদস্য দেশের উপরে হামলাকেও সবার উপরে হামলা বলে মানা হবে। এবং সব দেশ একসঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবে।
নেটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টলটেনবার্গ ট্রাম্পের নাম না করেই নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সদস্য দেশগুলি একে অপরকে কোনও সাহায্য করবে না— এই ধরনের পরামর্শ কেউ দিলে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। আমেরিকাও সেই তালিকা থেকে বাদ যাবে না।’’
এই বিতর্কের মধ্যেই আবার আইনি রক্ষাকবচ চেয়ে আমেরিকান সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ট্রাম্প। কয়েক মাস আগে একটি নিম্ন আদালত তার রায়ে জানিয়েছিল, ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও বিচার চলতে পারে। শুধু মাত্র আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলে সমস্ত আইনের ঊর্ধ্বে তিনি নন। আর পাঁচটা সাধারণ নাগরিকের মতোই আদালতে তাঁর বিরুদ্ধেও বিচার চলতে পারে। নিম্ন আদালতের এই রায় খারিজ করার জন্যই সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর আইনজীবীদের বক্তব্য, আর কয়েক মাস পরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে আদালতে বারবার হাজিরা দিতে গেলে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এখন প্রশ্ন, নিম্ন আদালতের সেই রায় সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখবে, না কি ট্রাম্পের আর্জি বিচারপতিরা গ্রহণ করবেন। আপাতত নিম্ন আদালতের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। কয়েক মাসের মধ্যেই পরবর্তী শুনানি।