পটুয়াখালী দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনৈতিক রাজধানী

in patuakhali •  4 years ago  (edited)

১৯৬৯ সালের ০১ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠিত পটুয়াখালী বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ একটি জেলা। প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী ছিলো পটুয়াখালী। জেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও পটুয়ার খাল থেকে পটুয়াখালী শব্দের উৎপত্তিকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।
বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত নয়টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভার সমন্বয় গঠিত এই জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পটুয়াখালীর বুক চিরে বয়ে গেছে অনেকগুলো ছোট বড় নদী। পায়রা, বিশখালী, লাউকাঠী, লোয়ালিয়া, কাজল, আগুনমুখা আর কত কিযে নাম। নদীতে ঢেউয়ের তালে তালে পাল তোলা নৌকার ছুটে চলা, খেয়া পারাপার, জেলেদের মাছধরা সবই আছে এখানে। আছে সমুদ্রে আছরে পরা নদীর মোহনার কোল ঘেষে অসংখ্য ছোট বড় দ্বীপ চর,
দখিনা ঢেউ খেলানো দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, রাখালের বাশির সুর, কৃষকের ভাটিয়ালি টান। বিশ্বের শ্রেষ্ট ম্যানগ্রভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের অংশও আছে এখানে। এছাড়াও ছোট বড় কৃত্রিম অকৃত্রিম বনাঞ্চলতো আছেই। পটুয়াখালীর প্রধান আকর্ষণ সূর্য উদয় অস্তের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। অতিথি পাখিদের আনাগোনায় ভরপুর সৈকত সমৃদ্ধ কৃত্রিম ম্যানগ্রভের সোনারচরও কম আকর্ষণীয় নয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পটুয়াখালী ইতিহাস ঐতিহ্যেও সমৃদ্ধ। পটুয়াখালীর বাউফলে ছিল প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী শহর, কেচ্ছা কাহিনীর সেই আলোচিত কমলা রানীর দিঘী ও কানাই বলাইর দিঘী। মির্জাগঞ্জের মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ হলো মোঘল আমলের নিদর্শন। এছাড়াও আছে কিছু পুরানো ছোট বড় জমিদার বাড়ি ও বৌদ্ধ বিহার। ঐতিহ্যগত প্রাচীন কালাইয়া বন্দর যাকে রিচেস হাট বলা হয়।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী সত্যেন সেনের বাড়ি পটুয়াখালী। এখানে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের পৈতৃক নিবাস ও মহাত্মা অশ্বিনী কুমারের জন্ম। দক্ষিণ অঞ্চলের সুপরিচিত আধ্যাত্মিক সুফী সাধক ইয়ারউদ্দিন খলিফা রহঃ সাহেব ছিলেন পটুয়াখালীর মানুষ।
পটুয়াখালী একটি সুন্দর শহর। তিন দিকে নদী বেষ্টিত সবুজ গাছপালা সমৃদ্ধ নির্মল বাতাস আর যানযট মুক্ত এই শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বসবাস উপযোগী শহর। ১৮৭১ সালে শহরের গোড়াপত্তন হলেও ১৮৯২ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে পটুয়াখালী শিক্ষা চিকিৎসা ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মধ্যে উন্নত একটা জেলা। এখানে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হসপিটাল(৫০০ শয্যা প্রস্তাবিত), সরকারি পলিটেকনিক কলেজ, সরকারি কলেজসহ অনেকগুলো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হসপিটাল ও ক্লিনিক। এছাড়াও আছে নির্মানাধীন ক্যাডেট কলেজ। প্রস্তাবিত মেরিন একাডেমি।
পটুয়াখালীতে আছে কোস্টগার্ডের ট্রেনিং সেন্টার সিজি বেইজ অগ্রযাত্রা, নির্মানাধীন শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট, শেরেবাংলা নৌঘাটি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রজেক্ট পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর। এছাড়াও আছে নির্মানাধীন পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ছোট বড় চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
পটুয়াখালী অর্থনৈতিকভাবে একটি সম্ভাবনাময় জেলা। নির্মিত, নির্মানাধীন ও প্রস্তাবিত অনেকগুলো ব্রীজ নদী বিধৌত এই অঞ্চলের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখানে সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে৷ ভবিষ্যতে পটুয়াখালী হবে অর্থনৈতিকভাবে একটি সমৃদ্ধশালী জেলা। প্রধানমন্ত্রীর কথায় দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক রাজধানী।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!