পদ্মার পাড়ে এক বিকেল

in rajshahi •  7 days ago  (edited)

রাজশাহী শহরটা বেশ নীরব আর শান্ত। পদ্মানদীর পাড়ে বিকেলগুলো যেন একেকটা চমৎকার সুরের মতো বাজে। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, নদীর পাড়টা প্রকৃতির নিজস্ব এক মায়ার জাল বিছিয়ে রেখেছে। বিকেলের শেষ আলো তখনও আকাশের কোণে ম্লান হয়ে আছে। আকাশে মেঘ জমেছে, তবে মেঘের ভেতর একটা আশ্চর্য রঙের খেলা চলছে। সাদা, ধূসর, আর একটু নীল মিলে যেন এক শিল্পীর তুলির আঁচড়।

আমি আর আমার বন্ধু তন্মীষ্ঠা আজ বিকেলের পর থেকে টি-বাঁধ পদ্মার পাড়ে হাঁটতে বের হয়েছি। নদীর জলে ছোট ছোট ঢেউয়ের শব্দ কানে আসছে, আর বাতাসটাও বেশ সতেজ। আমরা হেঁটে যাচ্ছি নদীর পাড় ধরে, চারপাশটা যেন একেবারে অপরূপ। পাড়ের ছোট্ট নৌকাগুলো একদিকে বাঁধা। মাঝিরা হয়তো দিনের কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছে।

এমন সময় হঠাৎ একটা হালকা বাতাস বইতে শুরু করলো। বাতাসটা ঠান্ডা ছিলো, বুঝলাম বৃষ্টি হবে। আমরা ফুসকা অর্ডার দিয়ে পাড়ে বসলাম, নৌকাগুলো যাত্রী তুলছে, এখান থেকে যাবে আই-বাঁধ।
অর্ডার আসতে আসতে আকাশ অন্ধকার হয়ে আসলো। ঝড়ো বাতাস বইছে, আমদের অর্ডারও আসলো। চারপাশে অদ্ভুত এক অন্ধকার নেমে এলো। বাতাসটা হঠাৎ করে জোরালো হয়ে গেল, যেন মেঘগুলো একে অন্যের সাথে ঝগড়া করছে।
তন্মীষ্ঠাকে জিজ্ঞাস করলাম "এরকম অন্ধকার আরো দেখছো?" দুজনেই অবাক হয়ে অন্ধকার দেখছি।

3photo_2024-09-22_01-35-25.jpg

তারপরই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি যেন জমে থাকা সব ক্লান্তি ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানির ঢেউগুলোও যেন বৃষ্টির সাথে মিলে নতুন এক সুর তুলেছে। আমি আর তন্মীষ্ঠা কিছুক্ষণের জন্য গাছের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম, ছাতা ছিলো আমার তাই ভিজিনি বেশি।

কিছুক্ষণ পর, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম হলে ফিরে যাব। রিকশা ডেকে উঠে পড়লাম। চারপাশে এখনো বৃষ্টি চলছে, রাস্তাগুলো ফাঁকা। রিকশায় বসে ভিজে যাচ্ছিলাম, আর চোখের সামনে দিয়ে দৃষ্টি ছড়িয়ে যাচ্ছিল পদ্মার পানির ওপর বয়ে চলা বৃষ্টির ঝাপটাগুলো এখনো চোখে ভাসছে।

হলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ভেজা শরীর থেকে এখন মুক্তি পেলেও মন ভেজা রয়ে গেল। সেই বৃষ্টির ছোঁয়া, নদীর পাড়ে বাতাসের স্পর্শ আর নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মুহূর্তগুলো যেন মনের ভেতরে অমলিন হয়ে আছে। দিনটি আরও ভালো লাগছিল, কারণ এমন এক বিকেল কেবল প্রকৃতির মায়াবী হাতছানিতে পাওয়া যায়।

4photo_2024-09-22_01-35-34.jpg

বৃষ্টি থেমেছে, কিন্তু মনের মধ্যে সেই পদ্মার পাড়ে কাটানো মুহূর্তগুলো রেখে গেছে এক দীর্ঘস্থায়ী রেশ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!