মৃত্যুকেও জয় করা যায়, দাবী বিজ্ঞানীদের
কল্পবিজ্ঞানের ছবিতে প্রায়ই দেখা যায়, একজন মানুষকে হিমায়িত করে রাখা হয়। বহু বছর পরে সেই ব্যক্তিকে পুনরায় জীবিত করে তোলা হয়। স্বাস্থ্যগত জটিলতা ও বয়সবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে না সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে!
তবে বাস্তবেও এমনটা ঘটে। কখনও কখনও দুর্ঘটনাবশত বরফের নীচে চাপা পড়া আবার কখনও বা চিকিৎসাবিহীন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত কারোকে ভবিষ্যতের জন্য ‘ক্রায়ো-প্রিজারভেশন’ করে রাখা হয়! যদি ভবিষ্যৎকালে এই রোগের ঔষুধ বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় এই আশায়।
বিজ্ঞানকী বলে? ক্রায়োপ্রিজারভেশনের অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে এবং এর অনুশীলনকে বলা হয় ‘ক্রায়োনিকস’। এটা এমন এক প্রক্রিয়া, যা ব্যবহার করা হয় ভবিষ্যৎকালে কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য! অত্যন্ত স্বল্প তাপমাত্রায় জীবিত মানুষকে সংরক্ষণ করা যায় এই ভাবে। বর্তমানকালে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও, এখনও ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন এই ক্ষেত্রে।
এ ভাবে কারোকে সংরক্ষণ করা হলে বলা হয়, তিনি ক্রায়োনিক সাসপেনশনে আছেন। বর্তমানে জীবিত কারও শরীরে ‘ক্রায়োনিক সাসপেনশন’ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিয়ম বলছে, যাঁরা এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের শরীরকে সংরক্ষণ করতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা মৃত! অন্তত পক্ষে তাঁদের হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম বন্ধ হতে হবে।
আইন অনুসারে, মৃত আর সম্পূর্ণ ভাবে মৃত এক ব্যাপার নয়। হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও মস্তিষ্কের কোষগুলো জীবিত থাকে এবং আরও বেশ কিছুটা সময় কর্মক্ষম থাকে। সম্পূর্ণ মৃত্যুর অর্থ মস্তিষ্কের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া। ক্রায়োনিকস-এর মাধ্যমে কিছুটা কোষ সংরক্ষণ করা যায়।
হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে ঘোষণা করা হয়— মানুষটি আইনত মৃত, তার পরই দায়িত্ব নিয়ে নেয় চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি। তাদের জরুরিকালীন টিম কাজ শুরু করে দেয়। তারা শরীরটিকে পূর্বের অবস্থায় আনতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহ করতে থাকে, যাতে শরীরের প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলি তখনও চালু থাকে। এর পর তারা শরীরে অনুচক্রিকা সরবরাহ করে, যাতে রক্ত জমাট বেঁধে না যায়। এর পর শরীরটিকে বরফ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় আসল প্রক্রিয়া।
যেহেতু কোষের বেশিরভাগ অংশই জল এবং জল বরফ হওয়ার পরে এর আয়তন বেড়ে যায়, তাই কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কারণে এই জল সরিয়ে ফেলতে হয় এবং এর বদলে যোগ করা হয় ক্রায়োপ্রোটেক্ট্যান্ট (যেমন গ্লিসারল)। এ প্রক্রিয়ায় কোষগুলোকে একটা সাসপেন্ডেড অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ার নাম ‘ভিট্রিফিকেশন’।
ভিট্রিফিকেশনের পরে ড্রাই আইস দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা -২০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট আসা পর্যন্ত ঠান্ডা করা হয়। এই প্রি-কুলিং এর পরই শরীরটিকে তরল নাইট্রোজেন এর ট্যাঙ্কে ছেড়ে দেওয়া হয়, যার ফলে তাপমাত্রা -৩২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।
অত্যন্ত জটিল এ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ শরীর সংরক্ষণে খরচ পড়বে দুই লক্ষ ডলার। আর সস্তায় ঘটচে পারে শুধু মাত্র ব্রেন সংরক্ষণ। এর খরচ হয় ৬০ হাজার ডলার।
আসলে বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত কারোকেই হিমায়িত করার পরে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেননি। তবে ভবিষ্যতে এমনটা হতেই পারে। কোনও মানুষকে এখনও পর্যন্ত ক্রায়োনিক সাসপেনশন থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি, তবে কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রায় মৃত কিংবা মৃত অবস্থা থেকেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
This post has received a 0.25 % upvote from @boomerang thanks to: @sajeeb240896
@boomerang distributes 100% of the SBD and up to 80% of the Curation Rewards to STEEM POWER Delegators. If you want to bid for votes or want to delegate SP please read the @boomerang whitepaper.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit