রাফি আজও ডাল,ডিম, আর ১কেজি আলো নিয়ে বাসায় ফিরছে। কিন্তু সবদিনের মত সে খুশি নয়,আজকে একটু মন খারাপ করেই ফিরছে।
পথমধ্যে ভাবছে কালকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী আর আজকেও নাকি আমাকে এই ডাল ডিম নিয়েই বাসায় ফিরতে হচ্ছে? বেভেছিলাম কাল ছুটির দিনে পাগলিটাকে নিয়ে একটু ঘুরতে বেড় হব, কিছু একটা কিনে দিবো, রাতে একসাথে বাহিরে ডিনার করে বাসায় ফিরবো। কিন্তু তা আর হলনা। মহাজনকে এত করে বলার পরেও এই মাসের বেতনটা দিলনা,মুখের উপর বলে দিল মাসের এখনো অনেক বাকি।
তন্নির সাথে রিফাতের বিয়েটা দুজনের পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি,তাই তারা এক বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে। আজও পরিবারের কেউ তাদের মেনে নেয়নি।মাঝে মাঝে রাফির মা ফোন করে বলে তার বাবা বলেছে যে তন্নিকে ডিভোর্স দিলে বাড়ি যেতে পারবে।রাফি সবসময় বলে বাবাকে বল যেদিন দুজনকে মেনে নিতে পারবে সেদিন ই বাড়ী যাওয়ার কথা ভাববো।
রাফির মা কান্নাকাটি করে ছেলেটা যে তার বড্ড কষ্ট করছে।ছেলেটা যে তার কোনদিন কোন পরিশ্রম করেনি কি করে সে আজ একটা অজানা অচেনা জায়গায় নিজের সংসার খরচ যোগাচ্ছে? ছেলে মাকে শান্তনা দেয় তুমি ভেবো না মা আমি ঠিক সবকিছু সামলে নিব কিন্তু তন্নিকে আমি কখনো ছাড়তে পারবোনা। বাবাকে বল যদি পারেন তাহলে যেন আমায় ক্ষমা করে দেন।
রাফি ভাবে কি এমন অন্যায় করেছিলাম? ভালবেসেছিলাম দুজন দুজনকে,কেন বাবা আমাদের মেনে নিতে পারেননি? বাবা হয়ত বাবার আসনে বসে ভাবছেন আমরা ভুল করেছি।হয়ত তাদের ভাবনাটা ঠিক, কিন্তু একটু সহজ করে দেখলে কি হতনা? কোনকিছুর ত অভাব ছিলনা আমাদের, আর তন্নি মেয়েটাও তো খারাপ ছিলনা,সে ও তো ভাল পরিবারের মেয়ে ছিল।কেন বাবা একটু সহজ আচরণ আমার সাথে করলনা?বাবা আমি পারিনি তন্নির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে।যেদিন মেয়েটি রাতের আধারে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছিল সেদিন পারিনি বাবা আমি কাপুরুষ হয়ে মোবাইল বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতে।
ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে আসলো রাফি,এখানে একটা সিংগেল রুমের একটা বাসা নিয়েছে রাফি,কোন মতে চলে তাদের। বাড়ীওয়ালা সবকিছু শুনে ভাড়া একটু কমই নেন এবং রাফিকে ভাড়ার জন্য তিনি খুব একটা চাপও দেননা। রাফি বেল টিপছে।
দরজা খুলে দিলো তন্নি, আজকে রাফিকে একটু বেশিই ক্লান্ত লাগছে।তন্নির হাতে ব্যগ গুলো দেয় রাফি।তন্নি।ব্যগ গুলো রেখে জিজ্ঞেস রাফি তোমার শরীর ঠিক আছে তো? হ্যা শরীর ঠিক আছে রাফির উত্তর। তন্নি কাছে গিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মুখ মুছে দিল, দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল যাও বাবু ফ্রেশ হও আমি খাবার বাড়ছি। রাফি কিছু না বলে চলে গেল বাথরুমে।
তন্নি ভাবে পাগলটার মাথায় না জানি কোন ভুত চেপেছে হয়ত কিছু নিয়ে ভাবছে।টেনশন করছে হয়ত আমাকে নিয়ে।পাগলটা আমার জন্য কত কষ্টই না করছে।আর আমি কিছুই করতে পারিনি তার জন্য।শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালবাসার চাদরে জড়িয়ে রেখেছে আমাকে।কোন বাধার সামনেই আমাকে ছেড়ে যায়নি একা। পাগলটাকে পেয়ে সত্যি আমার জীবনের সব চাওয়া পাওয়া হয়ে গেছে।
রাফি ফ্রেশ হয়ে আসলো, তন্নি খাবার দিল দুজন খেতে বসল খাবার আইটেম বেগুন ভাজা, ডাল এই দুটোই আজকের খাবার।
রাফি তার প্লেটের প্রথম লোকমাটা তন্নির মুখে তুলে দিয়ে বলতে লাগলো, নাও এই একবছরের সংসার জীবনে তোমার মুখে ভাল কোন খাবার তুলে দিতে পারিনি।পারিনি তোমায় ভাল মানের কোন কাপড় কিনে দিতে।পারিনি তোমায় কোথাও একদিনের জন্য ঘুরতে নিয়ে যেতে।পেরেছি ডিম আলোর ভর্তা আর ডাল দিয়ে তোমায় পেট ভরে খাওয়াতে। নিজের জীবনের সাথে তোমার জীবনটাও নরকে পরিণত করলাম।কাল আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী আর আজও আমার হাতে প্রতিদিনের মত ডিম ডাল।পারিনি অন্তত আজকের দিনেও ভাল কিছু তোমার জন্য নিয়ে আসতে? বলেই কেঁদে দিল রাফি।
তন্নি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে,জড়িয়ে ধরে রাফিকে বুকে,বলতে থাকে রাফিকে, তুমি যখন এমন করনা আমার কলিজাটা বেড় হয়ে যায়।আমি সইতে পারিনা তোমার কান্না। খুব তো বললে এই একবছরে কিছু দিতে পারনি আমায়। এই একবছরে নিজে কি পেয়েছ?একবছরে কি একটা টিশার্ট কিনতে পেরেছ? দিনরাত
পরিশ্রম করে যাচ্ছ,এসব কার জন্য করছ এসব কি আমার জন্য নয়? এসব কি আমি পাইনি? এত বড় ঘরের ছেলে হয়েও কাজ করছ সামান্য একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সেলসম্যন হয়ে এসব কি আমার পাওয়া নয়?
প্রতিদিন ভাল ভাল খাবার খাওয়ালে আর দামি দামি পোশাক কিনে দিলে যদি ভালবাসা না থাকে তবে কিছুই পাওয়া হয়না।যদি কারো কাছে ভালবাসা থাকে তবে পৃথিবীর কোনকিছু তার না পাওয়া থাকেনা,সবকিছু তার পাওয়া হয়ে যায়।আমার কাছে ভালবাসা আছে,
আমার সাথে দারিদ্রতা কখনো পেরে উঠবে না।
আরে আমি তো গর্ব করে বলতে পারি যে আমি তোমার মত একজন বর পেয়েছি, যে সম্মান ভালবাসা আর বিশ্বাসের সাথে আগলে রেখেছে তার বুকে।একটা মেয়ের কাছে এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে বল??
দুজন দুজনকে জড়িয়ে নিল ভালবাসা অসীম মায়ায়।
ভাল থাকুক না এমন তন্নি রাফির ভালবাসা, বেচে থাকুক না এমন ভালবাসা চিরো অমর হয়ে।
গলপ টা ভাল লাগলো....
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাল থাকুক না এমন তন্নি রাফির ভালবাসা, বেচে থাকুক না এমন ভালবাসা চিরো অমর হয়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit