কালা যাদু

in sanju •  last year 

তোমার মেয়েকে কোনো জীনে ধরে নাই,বরং ওকে কালা যাদু করা হয়েছে। আর যাদুটা করার জন্য তোর মেয়ের চুল ছবি তিন মাস ব্যবহার করা তোর মেয়ের উড়না ব্যবহার করা হয়েছে। আর যাদুটা বাস্তবায়ন করার জন্য একটা কাকাতুয়া পাখি ব্যবহার করা হয়েছে,একটা কাকাতুয়া পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে সেই পাখির গলায় শক্ত করে একটা তাবিজ বেঁধে দেয়া হয়েছে।
আমাদের পরিবারে আমি (সালমা) মা-বাবা আর একমাত্র আদরের ছোট বোন সাইমা।বোনটা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই বেশ চঞ্চল টাইপের। সবসময় কিছুনা কিছু করতেই থাকবে। তবে সে খুব ভদ্র গোছানো স্বভাবের। আস্তে আস্তে সে বড় হতে থাকলো। দেখতে দেখতে সে আঠার বছরের সাইমা। দেখতে পুরোপুরি পরীর মত সুন্দরী। সাত গ্রামের সকলে তার রূপ নিয়ে প্রশংসা করে। বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। প্রথম প্রস্তাব আসলো নিজেদের আত্মীয় থেকে। সম্পর্কে তারা আমাদের দুঃসম্পর্কের চাচা হয়।
চাচার ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসলো। আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে দিব না এমন সংকল্প করে রেখেছিল আমার মা। তাই প্রস্তাবে রাজি হলো না। দুঃসম্পর্কের চাচা আমার মাকে রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু মা তো নাছোড় বান্দা যে কোন আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে দিবে না তো দিবেই না। এক প্রকার ক্ষোভ আর রাগ নিয়ে আমার দুঃসম্পর্কের চাচা আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। চাচা বাসা থেকে থেকে রাগে ও অভিমানে বের হয়ে যাওয়ার চার মাস পর থেকে আসল ঘটনা শুরু।

সবসময় হাসিখুশি থাকা বোনটা আমার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লো। খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, শরীর সবসময় দুর্বল থাকা, মাথা ঘুরানো, দিন দিন চিকন হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণ গুলো দেখা দিতে লাগল।

অনেক ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কোন রোগ পাওয়া গেল না। গভীর রাতে একা একা কি যেন বিড়বিড় করে। তখন এই সাইমা কি বলছিস এগুলো বলে ধাক্কা দিলেই ঠিক হয়ে যেত। আর সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে যেত। গভীর রাতে একা বাসা থেকে বের হয়ে বড়‌ই গাছের নিচে বসে থাকতো। বাসার সবাই তখন চিন্তায় পড়ে গেল। হাসিখুশি চঞ্চল একটা মেয়ে এখন সবসময় মন মরা হয়ে থাকে। কারো সাথে মিশে না। বাধ্য হয়ে গেলাম এক নামকরা কবিরাজের কাছে। ভালো কোন হুজুর বা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে গেলাম এক কবিরাজের কাছে। আমাদের সবার মাঝে একটাই ধারণা যে রৌদাকে বোধহয় জীন ভর করেছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই কবিরাজের কাছে বোনকে নিয়ে গেলাম। সাইমা তো যেতেই চাচ্ছিল না। একপর্যায়ে ওকে দোয়া দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে শান্ত করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।

যে গ্রামের কবিরাজের কাছে গেলাম সে গ্রামে কবিরাজের অনেক নাম ডাক। সেই কবিরাজের হাত থেকে আজ পর্যন্ত নাকি কোন বদজীন নিস্তার পায়নি। কবিরাজের কাছে অনেক বতলবন্দী জীন আছে। কবিরাজ নাকি জীন পালন করে। এবং কবিরাজ যে টিনের ঘরে থাকে সে ঘরের মাটির নিচে অনেক কংকাল পাওয়া গেছে। যখন কবিরাজ ওনার ঘরের কাজ শুরু করতে যান তখন তিনি মাটি খুঁড়ে গুনে গুনে ২৬টি কংকাল পান। কার কংকাল কাদের কংকাল এসবের হদিস নেই। কবিরাজ এসব কংকাল গুলো তার যাদুর কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে। যদিও এসব লোকমুখে শোনা।

তারপর ঘটনায় আসি,

বোনকে নিয়ে কবিরাজের কাছে গেলাম। কবিরাজের ঘরে অনেক লোকের ভিড়। আর হ্যাঁ সন্ধ্যার পরে কবিরাজের বাসায় গিয়েছিলাম। কারণ সন্ধ্যার পর কবিরাজ তার আসর বসায়। প্রচুর লোকসমাগম। কবিরাজের ঘর বলতে গেলে পুরো হাউজফুল। পুরো ঘর অন্ধকার। চারিদিকে শুধু মোমবাতি আর মোমবাতি। সিরিয়াল অনুযায়ী যে যার সমস্যা কবিরাজকে বলছে আর সমস্যার সমাধান নিচ্ছে। কবিরাজ তার কাজের বিনিময়ে একটা আস্ত গরু, একহালি মুরগি, সাত নদীর পানি ইত্যাদি এসব লোকদের কাছে চাচ্ছে। আস্তে আস্তে লোক কমছে। আমাদের আসতে দেরি হয়ে গিয়েছিল বলে আমাদের সিরিয়াল নাম্বার সবার শেষে ছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। অপেক্ষা করার সময় অনেক খারাপ লাগছিল ছোট বোনটার জন্য। কি মেয়ে কি হয়েগেল। যে মেয়ে সবসময় আমাদের পুরো বাসা মাতিয়ে রাখতো আজ সেই মেয়ে নিস্তব্ধ চুপচাপ। সাথে ভয়‌ও করছিল এটা ভেবে যে কবিরাজের কাছে ছোট বোনকে নিয়ে এসে কি ভুল করলাম। আমার মন বলছিল এই কবিরাজের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে ভালো কোন আলেম বা হুজুরকে দিয়ে আমার বোনকে চিকিৎসা করাই। কিন্তু আমার মা তো অনেক জেদি। সে তার মেয়েকে এই কবিরাজকেই দেখাবে। এই কবিরাজের কাছ থেকেই চিকিৎসা নে‌ওয়াবে।

আপনার কি সমস্যা?

জিজ্ঞেস করলো কবিরাজ। কবিরাজের কথা শুনে আমার চিন্তার ঘোর কেটে গেল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম যে ঘরে এতো লোকজন ছিল তা আর এখন নেই শুধু আমরা ছাড়া। পুরো ঘর ফাঁকা। শুধু আমরা কয়জন। ঘরের দরজাও লাগানো। তা দেখে আমি অবাক হলাম। দরজা লাগানো কেন! এতক্ষণ তো দরজা খোলাই ছিল। মানুষজন তাদের নিজ নিজ সমস্যার সমাধান নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শুধু আমরা আছি আর দরজা বন্ধ। এমন সময় কবিরাজ আমাকে বলল, হামিম ভয় পেয় না শান্ত হও
কবিরাজের কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কবিরাজ আমার নাম জানলো কি করে!? আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। মা বিষয়টা নোটিস করলো না। আমি কবিরাজ থেকে বেশ দূরে বসেছিলাম। মা কবিরাজের আরো কাছে গিয়ে ছোট বোনের সব ঘটনা কবিরাজকে খুলে বলল। একেবারে এ টু জেড। সব ঘটনা কবিরাজকে বলা হলো। ঘটনা বলার পর মা কবিরাজকে বলল, আমার মনে হয় আমার মেয়েকে কোনো বদজীন ধরেছে।

যেহেতু মেয়ে অনেক সুন্দরী আর চুলগুলো সবসময় খোলা রেখে ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কথা শুনে কবিরাজ হেসে দিল। সে কি হাসি। আমার দেখে মনে হচ্ছে কোনো শয়তান হাসছে। কবিরাজ দেখতেও অনেক বিশ্রী। কোঁকড়ানো কোঁকড়ানো চুল। কবিরাজের হাসি দেখে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। আমাদের সমস্যা শুনে হাসার কি হলো। এসব ঘটনা আসলে যার সাথে ঘটে সেই বুঝে কেমন লাগে।

অতঃপর কবিরাজ হাসি থামিয়ে কবিরাজের সামনে থাকা ৭টি জলন্ত মোমবাতি থেকে একটি মোমবাতি নিভিয়ে বিজোড় সংখ্যা ৬টি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলো। তারপর তার হাত দুটো সামনে এনে হাতের আঙ্গুল গুলো মোমবাতির আগুনে রেখে কি যেন মনে মনে পড়া শুরু করলো। মিনিট পাঁচেক এমন বিড়বিড় করে পড়া চলল। পাঁচ মিনিট পরে কবিরাজের হাত কাঁপা শুরু করলো। দেখলাম বাম হাত কাঁপছে আর ডান হাত স্থির। তো কবিরাজ মাকে বলতে লাগলো –

তোর মেয়েকে কোনো জীনে ধরে নাই। বরং ওকে কালা যাদু করা হয়েছে। আর যাদুটা করার জন্য তোর মেয়ের চুল ছবি তিন মাস ব্যবহার করা তোর মেয়ের উড়না ব্যবহার করা হয়েছে। আর যাদুটা বাস্তবায়ন করার জন্য একটা কাকাতুয়া পাখি ব্যবহার করা হয়েছে। একটা কাকাতুয়া পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে সেই পাখির গলায় শক্ত করে একটা তাবিজ বেঁধে দেয়া হয়েছে। যার ফলে পাখিটি কিছু খেতে পারে না। আর যেটার প্রভাব গিয়ে পড়ে তোর মেয়ের উপর। তোর মেয়ে খেতে পারে না। খেলে বমি হয় বদহজম হয়। এছাড়াও পাখিটার উপর আরো অনেক অত্যাচার করা হয়। পাখির খাঁচায় নিচে আগুনের তাপ দেয়া হয় যাতে পাখিটি ছটফট করতে থাকে। পাখির পাখনায় আগুনের ছ্যাঁকা দেয়া হয়। আর এর প্রভাব যখন তোর মেয়ের উপর পড়ে তোর মেয়েও ছটপট করতে থাকে। তার ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পাখিটি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই তোর মেয়েও দিন দিন দুর্বল আর চিকন হয়ে যাচ্ছে। পাখিটি মারা গেলে তোর মেয়েও মারা যাবে। যাদু মূলতঃ মাছ পুতুল দিয়ে করা হয়। কিন্তু এটা একটু ব্যতিক্রম ভাবে কাকাতুয়া পাখির উপর করা হয়েছে। আর যাদুটা অনেক শক্তিশালী। যাদুটা করার আগে একটা শিশু বাচ্চা বলি দেয়া হয়েছে। এবং যে যাদুটা করিয়েছে সে চায় না তোর মেয়ে কোনভাবে এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকুক। এটুকু বলার পর

ধন্যবাদ ( SS)

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!