নিপুণ কাব্য জুঁই

in shortstorylovestory •  6 months ago 

নিপুণ কাব্য 'জুঁই'
সালাউদ্দীন নাজিম

1000001591.jpg

নিপুণ যখন তার বিয়ের কার্ডটা আমার হাতে দিয়ে বলল,

  • কল করে যাতে নিয়ে যেতে না হয়।বুঝেছিস?
    তখন আমার নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।সে যখন আমার চোখের সামনে হাত নাড়া দিয়ে বলল,
  • কী হলো কিছু বলছিস না কেন?তখন ভরাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, বুধবারে চলে যাব।ঠিক মেহেদী রাতের আগের দিন।
    তখন নিপুণ বলল,
  • মনে থাকে যেন।নিপুণ চলে যাচ্ছে।
    আমি কাব্য।খামখেয়ালিপনার জন্য লেখাপড়া অতদূর করতে পারি নি।তাই বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছি। নিপুণের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় কলেজের রেজাল্টের দিন।নিপুণ আমাদের কলেজের ছাত্রী নয়।এসেছে তার ফুফাতো বোনের সাথে। আবার তার ফুফাতো বোন আমার ক্লাসমেট প্লাস ফ্রেন্ড।তার নাম ছিল জুঁই।জুঁই এর মাধ্যমে আমি নিপুণের কাছে যেতে পেরেছি।এবং বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি।আমাদের একটিই পরিচয় ছিল বন্ধু। এর চেয়ে আর কিছুই না।
    হয়ত তার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু না হলে আমার কাছে হয়েছে।কারণ আমি তার প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যাই।তার গঁজ দাঁতের হাসিতে পাগল প্রায়।কিন্তু অচেনা অজানা কোনো ছেলে -মেয়েকে, মেয়ে- ছেলেকে ভালবাসার প্রপোজাল দিতে পারে না।দিলেও তা কার্যকর হয় না।বরং মেয়েটা ছেলেটাকে বখাটে উপাধিতে ভূষিত করে।তাই আমিও নিপুণকে সরাসরি প্রপোজ না করে বন্ধুত্বে আবদ্ধ করি।এতেই সফল হলাম।কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার আর কোনো সাহস পাচ্ছি না।জুঁইকে অনেক বার সে ব্যাপারে বলতে গেলে জুঁই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে চলত।আমিও তারে বিরক্ত করতাম না।
    নিপুণির সাথে আমার প্রতি রাতেই কথা হতো।কিন্তু সে কথা বলার শেষ পর্যায়ে একটাই কথা বলত,
    তুমি কাকে ভালবাসো?
    কথাটা শুনলে আমার হার্টবিড বেড়ে যেত।কিছুই বলতে পারতাম না।এভাবে আমরা কথা বলতে থাকি মোবাইলে।মাঝে মাঝে দুজনের মিট হয়।আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের মিটে জুঁই সবসময় থাকত।অনেক ইচ্ছে থাকা শর্তেও নিপুণের হাতের ছোঁয়া জুঁই এর জন্য কখনো পায়নি।সেও ফ্রেন্ড আবার নিপুণণের ফুফাতো বোন।তাই মুখ ফুটে কিছু কখনো বলিনি।
    চলতে থাকে এভাবে।সম্পর্ক বিবর্তন হয়ে, আপনি→তুমি→তুই।শেষ পর্যন্ত তুইতেই সমাপ্ত হলো নিরব প্রেমের কাব্য।
    আজ বৃহস্পতিবার। নিপুনের বাড়ি মরিচা বাতি দিয়ে সাজিয়েছে।অথিতিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছে।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বেলুন নিয়ে খেলছে।লাল, নীল, সবুজ, সাদা মরিচা বাতিগুলো মিটমিট করে জ্বলছে।তখন আমার প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা বেজে উঠল।বের করে দেখি নিপুণ কল দিয়েছে।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
    -এই তুই কোথায়?
    -নিচে
    -দাঁড়া আমি আসছি
    মিনিট খানেক দাঁড়ানোর পর দেখলাম নিপুন আর জুঁই আসছে।নিপুণকে আজ কিরকম লাগছে তা ভাষায় বুঝাতে পারব না।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।লক্ষ করলাম আজ জুঁইও বেশ সাজুগোজু করেছে।নিপুণ করেছে তার বরের জন্য কিন্তু জুঁই কার জন্য করছে?অবাক দৃষ্টিতে দুই জনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম।তারপর তারা কাছে এসে জুঁই বলল,
    -কিরে এভাবে কী দেখছিস?
    আমি একটা আবুল মার্কা হাসি দিয়ে বললাম,
    -কিছু না।
    নিপুণের বাসায় গিয়ে নিপুণের বাবা মাকে সালাম করে নিপুণের রুমে গেলাম।তারপর নিপুণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
    -কাব্য, তুই কাকে ভালবাসিস?
    নিপুণ কথাটা বলতেই দেখি জুঁই উঠে চলে যাচ্ছে তখন নিপুণ জুঁই এর হাত ধরে বসতে বলল।তখন আমি বলে দিলাম,
    -আমি তোকেই ভালবাসি
    নিপুণ বলল,
    -তোকে কে ভালবাসে?
    ভাবনায় পড়ে গেলাম।তারপর বললাম,
    -জানি না
    তখন নিপুণ বলল,
  • এদিকে দেখ
    আমি নিপুণের দিকে তাকালে নিপুণ আঙুল দিয়ে জুঁইকে দেখিয়ে দিলো।আমি জুঁইয়ের দিকে তাকালে দেখি মেয়েটার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল।আর হাত পা গুলো তার কাঁপছিল। তা দেখে একটা অট্টহাসি দিয়ে বললাম,
  • এতদিন লুকোচুরির কী দরকার ছিল।ভাল যখন বাসিস বলে দিলেও তো পারতি।
    তখন দেখি মেয়েটা অভিমানে কান্না করে দিলো।তখন নিপুণ ইশারা করে তার কাছে যেতে বললে আমি বললাম,
  • যতক্ষণ পারে কাঁদুক না।কাঁদলে মন প্রাণ ফ্রেশ থাকে।এতদিন সে দুশ্চিন্তায় ছিল আজকে তো তার কাঙ্কিত ফল পেয়ে গেছে।
    ............সমাপ্ত
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!