জীবন ডায়েরীর পাতা থেকে..... ০১।

in steemitbd •  6 years ago  (edited)

ছোট বেলাতে টুকটাক লেখালেখি করতাম, আমরা ভাড়া বাসায় থাকতাম আর যেই বাড়ীর ভেতেরে থাকতাম তেমন কেহ লেখা পড়া জানত না, তখন মোবাইলের প্রচলন ছিল না তাই সবাই একে অপরের খোঁজ খবর চিঠির মাধ্যমে নিত। আর আমি সেই চিঠি লিখে দিতাম এবং কারো চিঠি আসলে সেটা পড়ে শুনাতাম। আর এটাই হল আমার লেখালেখি। যাই হোক একসময় চিঠি লেখার বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলাম। ছেলে, বুড়ো, পুঁচকি, ছুড়ি সবাই আমার কাছে আসত চিঠি লেখাতে, কারণ আমি নাকি খুব সুন্দর করে চিঠি লিখে দিতে পারতাম। বিশেষ করে নতুন প্রেমিক প্রেমিকাদের নিকট আমার কদর বেড়ে গেল। তারা শুধু আমার নিকট তাদের মনের ভাবটা খুলে বলত বাকিটা আমি সাজিয়ে গুছিয়ে আবেগ, ভালবাসা, অভিমান সবকিছু মিলিয়ে লিখে দিতাম। এক সময় প্রেমিক প্রেমিকাদের ডাকপিওনেরও চাকুরী পেলাম, অবশ্য তাতে কোনো বেতন ছিল না, কিন্তু ভয় ছিল, গার্ডিয়ানদের নিকট ধরা পড়লেই মাইর। তখন আমি মাত্র অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র। বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের বিভিন্ন ধরণের চিঠি লিখতে লিখতে একসময় নিজের ভেতরেও কেমন যেন ভালবাসা উকি ঝুকি দিচ্ছে। কিন্তু তখন অত কিছু বুঝতাম না। আমরা এলাকার সমবয়সী ছেলে এবং মেয়েরা একই সাথে হাডুডু, বউছি, গোল্লাছুট, টিপু টিপু, কানামাছি, দাড়িয়াবান্ধা সহ অনেক খেলাই খেলতাম। এছাড়াও আমাদের সাথে অনেক সিনিয়র আপুরাও অনেক সময় যোগ দিতেন। তবে তারা দিনে খেলতেন না, রাত দশটার পরে আমরা লাইট জালিয়ে সব সিনিয়র আপুদের সাথে মাঠে দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট ইত্যাদি খেলা খেলতাম। ঐ সময়ে আমার এক আপুকে খুব ভাল লাগত, তাকে ভালবাসা বলে কিনা জানিনা। প্রায় সময়ই আমি তার কাছেই সময় কাটাতাম। তার নিকট অংক শিখতাম, তারসাথে অবসরে দাবা খেলতাম, এবং পটুয়াখালী পাবলিক লাইব্রেরির কত উপন্যাস এবং প্রেমের গল্পের বই যে আমি চুরি করে তাকে এনে দিয়েছি তার হিসেব নেই। প্রথম প্রথম সেও আমাকে রাগ করত কিন্তু পরে যখন দেখে আমি তার কথায় কর্ণপাত করিছি না তখন আর কিছু বলত না। এভাবেই হৈ হুল্লোর আর আনন্দে কাটতে লাগল আমাদের সময়। তার প্রতি ভাললাগাটাও কেমন যেন বেড়ে গেল। তাকে না দেখলে মনের ভেতরে কেমন যেন শুন্যতা অনুভুত হত। এর ব্যখ্যা আমার কাছে তখন ছিল না। যখন আমি ক্লাশ টেনএ অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষার্থী তখন আমাদের বিনোদনের একমাত্র সম্বল ছিল বিটিভি। যার ছবি দেখতে হলে বড় বাঁশের মাথায় এন্টিনা লাগিয়ে বাঁশ ঘুরিয়ে ছবি আনার জন্য একজনকে বাঁশ ধরে দাড়িয়ে থাকতে হত। যাই হোক তখন একটি নাটক দেখেছিলাম যার মূল বিষয়বস্তু ছিল এরকম- নায়িকা ছিল একজন বুদ্ধি প্রতিবন্দী হাসপাতালের (পাগলা গারদের) ডাক্তার। নায়কের কোন এক আত্মীয় মানসিক ভারসাম্য হারালে সেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরই সূত্র ধরে নায়কের সেখানে যাতায়াত এবং এক সময়ে ডাক্তারের (নায়িকার) প্রতি সে দূর্বল হয়ে পরে। কিন্তু সে কখনোই এ কথা নায়িকাকে বুঝতে দেয়নি। একসময় নায়কের সেই আত্মীয় ডাক্তারের অক্লান্ত পরিশ্রমে সুস্থ্য হয়ে বাড়ী ফিরে আসল। নায়কেরও হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ হল। কিন্তু নায়ক তো সেই নায়িকাকে না দেখে থাকতে পারে না। তাই নায়ক মানসিক রোগী সেজে তার বন্ধুর সহায়তায় সেই হাসপাতালে ভর্তি হল। সেই ডাক্তার তার সেবা করতে শুরু করল কিন্তু রোগী তো সুস্থ্য হয় না। কারণ আসলে রোগি তো প্রেমের রোগী তাই সুস্থ্য হচ্ছিল না। কিন্তু ডাক্তার সে কথা বুঝতে পারেনি। অন্যদিকে ডাক্তারের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এবং একটিদন বিয়েও হয়ে গেল। আর সেই মানসিক রোগী সেজে থাকা রোগিটা এবার সত্যি সত্যিই মানসিক রোগী হয়ে গেল।

এখানে মোরাল ছিল- কাউকে ভালবাসলে সাথে সাথেই তাকে মনের ভাব প্রকাশ করা উচিৎ।

যাই হোক নাটকটি দেখে আমার নিজের ভেতরেও কেমন যেন করতে শুরু করল। তাহলে আমিও তো তাকে না দেখে থাকতে পারি না, তাকে ছাড়া আমার ভাল লাগে না, তার মানে এগুলো হল আমি তাকে ভালবাসি তার লক্ষণ। কিন্তু একথা আমি তাকে কি করে বলব যে, আমি তাকে ভালবাসি। যার সাথে আমি সেই রাত ১২/১ টা পর্যন্ত দাড়িয়াবান্দা খেলতাম এখন তার কাছে যেতে আমার কেমন যেন লজ্জা লাগছিল। নিজের প্রতিই নিজে অবাক হচ্ছিলাম, আর ভাবছিলাম এর নামই হয়ত ভালবাসা। আর দেড়ি না করে জীবনে নিজের জন্য প্রথম প্রেম পত্র লিখতে শুরু করলাম। মনের মাধুরি মিশিয়ে একখানা প্রেম পত্র লিখেও ফেললাম, যদিও সে তখন অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং আমি মাত্র এসএসসি পরীক্ষার্থী। যাই হোক এবার অনেক কষ্টে টাকা যোগার করে তার জন্য কার্ড কিনলাম, ফুল কিনলাম কিন্তু গল্পের বই কিনতে গেলে টাকার সর্ট পড়ায় আগের পদ্ধতি অবলম্বন করলাম, পাবলিক লাইব্রেরী থেকে নতুন দেখে দুইটি বই আনলাম, এবং সব গুলো রেপিং পেপারে সুন্দর করে মুড়িয়ে তাকে উপহার দিলাম। কেন এসব তাকে দিলাম জিগ্যেস করতেই দৌড়ে পালালাম। পরে এগুলো সে খুলে যখন সে চিঠিটি পেল সাথে সাথে আমাদের বাসায় এসে আমার কান ধরে দুই আঙ্গুলে ইচ্ছে মত কানমলা দিল। বল্ল এই চিঠি কে দিয়েছে, আমি উত্তরে বল্লাম আমি নিজেই দিয়েছি, কারণ তাকে আমার ভাল লাগে। এর পরে সে আমাকে অনেক বোঝাল, যে এখনও আমার এসবের বয়স হয়নাই, সে আমার থেকে বড়, আমি তার ভাইয়ের মত ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কথা। খুব মর্মাহত হলাম এবং মনের ভেতরটা কেমন যেন শুণ্য হয়ে গেল এবং একটা অজানা কষ্টে বুকটা কেমন যেন ভারি হয়ে গেল। ছ্যাকা জিনিসটা তখন বুঝতাম না, হয়ত ওটাই আমার প্রথম ছ্যাকা ছিল। তার পর থেকে কেমন যেন তাকে দেখলেই আমার ভিষন কষ্ট লাগত এবং তাদের বাসায় যাওয়াও বন্ধ করে দিলাম, যদিও সে অনেক দিন আমাদের বাসায় এসে আমাকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছে, এবং তাদের বাসার সামনে বা মাঠে যখনই যেতাম সে আমাকে তার কাছে ডাকত, আমার পাশে এসে বসত, সবই ঠিক ছিল কিন্তু তাকে কেন যেন মনে হত সে আমার পর, বা সে আমার কেউ না।

এভাবে কেমন যেন নিজেকে নিজে অন্য একটি জগৎের সাথে মিলিয়ে ফেলেছি, কারো সাথে তেমন একটা কথা বার্তা বলিনা, এখন আর কারো সাথে মিশি না, খেলাধুলা করি না, একা একা বসে থাকি। যেই আমি এতটা ডানপিটে ছিলাম, মানুষের গাছের পেয়ারা, নারিকেল, আম সহ হাঁস, মুরগী, ছাগল ইত্যাদি না বলেই নিয়ে আসতাম এবং এলাকার সবাই মিলে খেতাম, সেই আমি কেমন যেন পানসে হয়ে গেছি। লেখা পড়ার প্রতি মনযোগ নেই, বিভিন্ন সামাজ বিরোধী কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি। মারামারি-হানাহানি সহ প্রতিদিনই মা-বাবার কাছে নালিশ আসতে শুরু করল। এতটাই উচ্ছৃক্ষল এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম যা নিজেও মাঝে মধ্যে নিজেকে দেখে অবাক হয়ে যেতাম। এভাবে ঠিক এসএসসি পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন আগে এলাকার এক সিনিয়র ভাইকে এমন ভাবে মেরেছিলাম যে, বেচারাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এর পর আমার মা-বাবা আমার প্রতি এতটাই বিরক্ত হয়ে উঠল যে, তারা আমার বিরুদ্ধে নিজেরাই পুলিশ রিপোর্ট করল। এর পরে আমি রাগ করে বাসা থেকে ঢাকার পথে রওয়ানা হলাম.............................................

চলবে.......

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাল হয়েছে। তবে একটু প্যারা আকারে লিখলে দেখতে ভাল লাগতো।

সুন্দর পরামর্শের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তীগুলো অবশ্যই প্যারা আকারে লিখব।💐

Your post has been selected to be presented in Steemit Bangladesh Curation Competition Episode # 18 . If you are from Bangladesh and would like to present the article in the voice hangout during the competition, Please join the hangout on our Discord server.

Steemit Bangladesh Curation Competition Episode # 18
Time : 10 PM BDT
Date: 14/09/2018 (Friday)


অনেক অনেক ধন্যবাদ সব সময় পাশে থেকে সপোর্ট দেয়ার জন্য।

Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by sohelsarowar from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.

If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.