বনফুল কে নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ৬

in story •  8 months ago 

সাজে' সাজিয়ে দেবার শক্তি তার নেই, তাই কতকগুলো ভাঙা ইট আর কাদা দিয়েই ফকির সাজাহানের ‘তাজমহল' গড়া হয়। সম্রাটের অমর কীর্তির পাশে এ চেষ্টা মানুষের কাছে যেমন নগণ্য তেমন হাস্যকর। বনফুল মানুষের দৃষ্টির এই নিপুণতার সঙ্গেই ডাক্তারের অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন। is তাছাড়া মানুষের স্বভাবের অশেষবিধ জরা-ব্যাধি-দৌর্বল্যের নিদান-সন্ধানেও তাঁর ভিষ দৃষ্টি অভ্রান্ত। ‘আত্ম-পর’ ভেবে তার অনুভূতির যে কত ইতরবিশেষ হতে পারে সে কথা প্রকাশে তিনি কার্পণ্য করেননি। কোন্ দুর্বলতার ছিদ্রপথে তার কল্পিত কর্তব্য আর তার কৃত-কর্মের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত হয়ে যায়, কেন জীবনের কুরুক্ষেত্রের পাণ্ডবপক্ষ ছেড়ে কৌরবপক্ষে যোগদান করে তাকে ‘শরশয্যা' গ্রহণ করতে হয়, সেকথাও তিনি দুর্বল মানুষের প্রতি অনুকম্পাভরেই বলেছেন। এমন কি, ‘সনাতনপুরের অধিবাসিবৃন্দ'র রসনারোচন কুৎসারটনার সনাতন প্রবৃত্তির আত্যন্তিকতা দেখে তাদের মূঢ় আচরণ নিয়ে শুধু কৌতুকই করেছেন।

IMG_6616.jpg

শৈলেশ্বর মোক্তার আর শ্যামা ধোপানির আকস্মিক অন্তর্ধানের পর উভয়কে জড়িয়ে শৈলেশ্বরের মিত্র ও শত্রুপক্ষে যে উপাদেয় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে গল্পশেষে শুধু সূক্ষ্ম ল্যানসেটের একটি মাত্র খোঁচায় তার নির্লজ্জ নোংরামির প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি প্রসঙ্গের পরিসমাপ্তি টেনেছেন। যে শ্যামা ধোপানি আর পিরুর দাম্পত্যকলহের সুযোগে শৈলেশ্বর মোক্তারের রজকিনীপ্রেম ভদ্রসমাজকে উত্তেজিত করেছিল, যথাসময়ে দেখা গেল তারা দুজন গাধার পিঠে মোট চাপিয়ে বেশ স্বচ্ছন্দেই ঘোরাফেরা করছে। গাধার পিঠে মোট চাপানো'ই বটে! তবু এই ভদ্র গর্দভগুলো হয়ত করুণারই পাত্র, কিন্তু মানুষের ন্যাকামি ও ভণ্ডামি দেখলে বনফুল একেবারে নিষ্করুণ। সে ক্ষেত্রে ঈশ্বর গুপ্ত সমাজের বিরুদ্ধে জ্যেঠামশায়ের যে পাদুকা প্রয়োগ করতেন, বনফুল সে পাদুকারও সদ্ব্যবহার করেছেন। তর্ক ও স্বপ্ন' গল্পে মহাযুদ্ধ-প্রসঙ্গে তর্করত বাঙালী যুবকদ্বয়ের সঙ্গে মাংস-রন্ধন প্রণালী নিয়ে তৃণভোজী বলীবদযুগলের শৃঙ্গ-যুদ্ধের সাদৃশ্য আবিষ্কারে হিতোপদেশীয় গল্পরীতি অনুসৃত হলেও স্যাটায়ারের মোটা লাঠিই এখানে প্রযুক্ত হয়েছে। ‘খড়মের দৌরাত্ম্য' গল্পেও পাদুকা প্রহারটি নির্মম। রাধাবল্লভের প্রেমরূপ ব্যাধির ঔষধ হিসাবে পিতামহ প্রজাপতির অদৃশ্য পাদুকা-প্রয়োগেও লেখক সন্তুষ্ট থাকেননি, শেষ পর্যন্ত রামকিঙ্কর হাজরার হাতে প্রাকৃত পাদুকার সদ্ব্যবহার করে তবে তিনি তৃপ্ত হয়েছেন। এমন কি ‘জৈবিক নিয়ম’ গল্পে ব্যঙ্গের তীব্র কশাঘাতও পর্যাপ্ত বিবেচিত হয়নি। রেলওয়ে প্লাটফর্মে রোগা- গোছের যে ছোকরাটি তার নিদারুণ কৃশতা সত্ত্বেও অপরিচিতা তরুণীর কাছে ‘হিরো সাজবার লোভে তার তারুণ্য ও বীরত্বের কারদানি দেখাচ্ছিল, তার প্রতি চরম দণ্ডই প্রযুক্ত হয়েছে। শেষ বাহাদুরি দেখাবার উন্মাদনায় চলন্ত ট্রেনে লাফিয়ে উঠতে গিয়ে একেবারে চাকার নীচে পড়ে তার যৌবন-নৃত্য চিরকালের জন্য স্তব্ধ হল। 'আর কিছু করিবার সুযোগ সে পাইল না।'— এ উপসংহার নিয়তির মতই নির্মম। 1 অন্যায় ও পাপাচারীর প্রায়শ্চিত্ত বিধানেও বনফুলের ন্যায়গুটি অমোঘ। দুর্নীতি ও _অনাচারের বিরুদ্ধে তাঁর বিবেক খড়গহস্ত। সেখানে ক্ষমা নেই, বিচারে শৈথিল্য নেই, শাসনে বাঙালি-সুলভ অনুকম্পাও নেই। ‘আইন' গল্পে ডাক্তার টি. সি. পাল দ্বিসহস্র রজত-মুদ্রার বিনিময়ে আইনের চক্ষে ধুলো দিতে গিয়ে সবদিক সামলে অতিশয় হুঁশিয়ার হয়ে যে কাণ্ডটি করলেন, তার ফল একেবারে হাতে হাতেই তাঁকে পেতে হল। অপরিচিত ব্যক্তিকে মিথ্যা। সার্টিফিকেট দিয়ে যখন তিনি আত্মতৃপ্তি সহকারে ভাবছেন, 'এমন পাকা কাজ করে দিলুম যে,

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!