[বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত কাহিনীটি পৃথিবীর সব প্রধান ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নরূপে বর্ণিত আছে । তবে, ধর্মগ্রন্থ ভেদে কাহিনীর কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও এর মূল ঘটনা বিন্যাস এবং কাহিনীর আড়ালে মূল ধর্মীয় বার্তা কিন্তু একই ।]
রাজার দেখা পাওয়ার সাথে সাথে কাতর কণ্ঠে সেই মৎস্যটি বলে উঠলো, "হে মহারাজ, দেখুন এই কমণ্ডলুতে আমার আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না, আমাকে এর চাইতে অধিকতর বৃহৎ কোনো পাত্রে স্থানান্তরিত করুন । নতুবা, আমি একটুও নড়তে চড়তে পারবো না ।"
মৎস্যের অবস্থা দেখে আর তার করুণ প্রার্থনা শ্রবণ করে রাজা মনু মনে মনে অতিশয় দুঃখিত হলেন । তৎক্ষণাৎ তিনি মাছটিকে কমণ্ডলুতে থেকে অপসারিত করে একটি বৃহৎ স্বর্ণ কলসিতে রাখলেন । কলসিটি কমণ্ডলুর তুলনায় আকারে অনেক বড় । মাছটি সেখানে আনন্দে খেলা করে বেড়াতে লাগলো আর বারংবার মহারাজ মনুকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে লাগলো ।
মনুও এবার অনেক আনন্দিত হলেন । তিনি তাঁর এক পরিচারককে মাছটির খাদ্য হিসেবে কিছু তণ্ডুলকণা দিতে বললেন । তৎক্ষণাৎ, পরিচারকটি কিছু তণ্ডুলকণা কলসির জলে ছড়িয়ে দিলো । মাছটি বাসস্থানের সাথে সাথে তার আহার্য পেয়ে অত্যন্ত হৃষ্ট চিত্তে পুচ্ছ নেড়ে নেড়ে আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলো । রাজা কিছুক্ষণ, কলসির জলে মৎস্যের ক্রীড়া দেখে প্রীত হয়ে সভাস্থলের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন ।
পরের দিন রাজা যথারীতি নদী থেকে স্নান সমাপন করে প্রাসাদে ফিরে সভাস্থলে যাওয়ার পূর্বে মাছটিকে দেখতে গেলেন । স্বর্ণ কলসিতে একবার উঁকি দিয়েই রাজা মৎস্যটির পূর্বোক্ত দিনের অনুরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করলেন । মাছটির আকার রাতারাতি অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে । এখন তার দেহ এতটাই বৃহৎ আকৃতির হয়েছে যে কলসিতে তার আর কোনোরকমেই স্থান হচ্ছে না ।
পরপর দু'দিন মাছটির এমন বিস্ময়কর বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করে রাজা একদম হতবাক হয়ে গেলেন । এ তো পুরো অলৌকিক ঘটনা !
রাজাকে দেখতে পেয়ে মাছটি আবার আগের দিনের মতোই কলসির চাইতে বৃহৎ একটি জলাশয় তার বাসস্থান হিসেবে প্রার্থনা করলো । রাজা আর কী করেন ! বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর এক পরিচারককে বললেন রাজবাড়ীর উদ্যানে যে বৃহৎ সরোবর আছে সেখানে মাছটি রেখে আসতে । সরোবর এই কলসির তুলনায় কয়েক লক্ষ গুণ বড় । কাজেই রাজা এবার নিশ্চিন্ত হলেন ।
পরিচারক তখন কলসিটি নিয়ে রাজবাড়ীর উদ্যানস্থিত যে বৃহৎ সরোবরটি আছে সেখানে উপস্থিত হলো । পিছন পিছন মহারাজ মনুও গেলেন । সরোবরের সোপানে দাঁড়িয়ে পরিচারক কলসির জল থেকে মৎস্যটিকে সরোবরের জলে অবমুক্ত করলো । বিশাল সরোবরের শীতল জলের স্পর্শ পেয়েই মাছটি আনন্দে ছোটাছুটি করে বেড়াতে লাগলো । ঘাটের কাছে এসে বারবার সে জল থেকে মুখ বের করে রাজাকে ধন্যবাদ দিতে লাগলো ।
রাজাও অত্যন্ত আনন্দ চিত্তে রাজসভা স্থলের উদ্দেশ্যে সেই স্থান পরিত্যাগ করলেন ।
[ক্রমশঃ]