ঈবাদাহ্ র ঈবাদাত ।। লেখা : রবীন জাকারিয়া

in story •  8 months ago 

Uploading image #1...
ঈবাদাহ্ র ঈবাদাত ।। লেখা : রবীন জাকারিয়া

আমাদের একমাত্র কন্যা৷ বাইয়াতুন ঈবাদাহ্৷ সকলে ঈবাদাহ্ নামেই ডাকে৷ ছোট্ট মেয়ে৷ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথা বলে৷ মিষ্টি লাগে৷ তাই সকলে ওকে খুব ভালবাসে৷ এমনকি ওর স্কুলের শিক্ষকরাও৷ ও শহরের একটি মান সম্মত স্কুলের নার্সারিতে পড়ে৷ স্কুলটির নাম নর্থ ব্রিজ স্কুল৷ ওর ক্লাশে ও সবচেয়ে ছোট৷ কিন্ত পড়াশুনায় খুব ভাল৷ মেধাবি৷ সকল Exam-এই সে সেরা তিনে থাকে৷ ওর স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের প্রায় সকলেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত থাকার কারণেই বোধ হয় স্কুল ছুটির পর বিকেলে সহপাঠক্রমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে চিত্রাঙ্কন, গান ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন৷ আমার মেয়েটিও আনন্দের সাথে নিয়মিত উপস্থিত থাকে৷ কোন ক্লাশ মিস করে না৷ অবশ্য করলে জরিমানা দিতে হয়৷

প্রতিদিনের ধর্মীয় ক্লাশ করার পর ওর মনে প্রশ্ন জাগে “ঈবাদাত কী?” বাসায় এসে একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা ঈবাদাত কী?” ও ছোট মানুষ তাই এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় বলা কঠিন৷ আমি তাই সহজ করে বললাম, “ঈবাদাত মানে হচ্ছে, এই ধরো নামাজ, রোজা, সত্য কথা বলা, অন্যের ক্ষতি না করা এইসব৷” “আচ্ছা! আমি তো তোমার সাথে নামাজ পড়ি। তাহলে আমাকে রোজা থাকতে হবে, তাই না বাবা?” মাঝে মাঝে ও আমার সাথে নামাজ পড়ে, কখনও পিঠে উঠে৷ কখনও কোলে বসে থাকে৷ কিন্ত রাগ করি না কখন‌ও৷ ক’দিন পর পবিত্র রমজান শুরু হবে৷ আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “এখন তোমাকে রোজা থাকতে হবে না৷ একটু বড় হও মা৷ তখন রোজা রেখো৷” কিন্ত সে রোজা থাকবেই জেদ ধরল৷ চিন্তা করলাম রোজা আসতে তো আরো কিছুদিন বাকি আছে, এর মধ্যে ও ভুলে যাবে। ভেবে বললাম, “ঠিক আছে৷ রোজা থেকো৷”
ক’দিন পর রমজান শুরু হল৷ প্রথম রমজান৷ সবাই সেহরি-ইফতারের ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ রাতে সে হুট করে বললো রোজা সে থাকবেই৷ কী আর করা সেহেরির সময় ডেকে তুললাম৷ সেহেরি করল৷ তখনও আমরা জানি এটা শুধু ওর জেদ৷ আর কিছু নয়৷ ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমোতে গেলাম৷ সকালে উঠে শুনি মেয়ে কিছু খায়নি৷ রোজা আছে৷ ভয়ংকর কথা৷ আবার ভাবলাম কিছুক্ষণ পর ও নিজেই খেয়ে নেবে৷ তাই কথা বাড়ালাম না৷
ঠিক চারটা কিংবা সাড়ে চারটার দিকে আমার মেয়ে শুধু একটু পানি খেতে চাচ্ছে৷ মুখ মলিন৷ খারাপ লাগছে৷ কষ্ট হচ্ছে৷ তবুও সিদ্ধান্ত নিলাম৷ যেভাবেই হোক এ মাসুম বাচ্চাটার রোজাটা পরিপূর্ণ হোক৷ তাই মটর সাইকেলে করে ওকে শহরে ঘুরতে বেড়ালাম৷ আর তো দুইটা ঘন্টা৷ চিড়িয়াখানা, সুরভী উদ্যান, ঘাটের পাড় দেখাতে নিয়ে গেলাম৷ কিন্ত যেখানেই যাই সেখানেই ইফতারের দোকান৷ খাবারের দোকান দেখলেই সে খাবার কিনছে৷ আমিও এভাবে অনেক ইফতার কিনে ফেললাম৷ সময় প্রায় কেটেই গেল৷ বাড়ি ফিরে এলাম৷ ও একটা বড় প্লেটে সব ইফতার নিয়ে বসল৷ একাই খাবে৷ আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি৷ যেন মেয়েটা রোজাটা পূর্ণ করে৷
অবশেষে মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শুনতে পেলাম৷ “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর…৷”
“বিসমিল্লাহ্” বলে মেয়েটা এক ঢোঁকে এক গ্লাস শরবত পান করল৷ মুখে একটু নাস্তা দিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল৷ বিশাল প্লেটে পড়ে থাকল সমস্ত ইফতার৷ আর ঈবাদাহ্ নিজেই বুঝিয়ে দিল ঈবাদাত কী

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!