চা–পাতা ছাড়াই চা বানান তিনি, নানা কিসিমের হারবাল চা। পুদিনাপাতার চা যেমন আছে, তেমনি আছে হরীতকীর চা। আছে তেঁতুলের চা, বহেরার চা, থানকুনিপাতার চা, বাসকপাতার চা। তিতকুটে স্বাদের চিরতা দিয়েও চা বানান তিনি। এমন ২১০ রকমের চা বানান তিনি। চা বানানোয় সিদ্ধহস্ত মানুষটির নাম মুখলেস উদ্দিন। বাড়ি নেত্রকোনা শহরের মুক্তারপাড়ায়।
বছর ছয় আগে মুখলেসের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি ফুটপাতে বসতেন। বানাতেন ৫৯ পদের চা। ফুটপাত ছেড়ে দোকানে উঠেছেন এখন। মুক্তারপাড়ায় তাঁর দোকান। নাম দিয়েছেন ‘কবি মামার চা’। একসময় লেখালেখি করতেন। গ্রাহকেরাই ভালোবেসে তাঁর দোকানের এই নাম দিয়েছেন। দিনে কয়েক শ মানুষ এসে চা পান করেন তাঁর দোকানে। ‘দুই থেকে আড়াই শ মানুষ তো রোজ আসেই। তারারে দেইখ্যাই চিনি। কে কোন চা খায়, দেখলেই কইতাম পারি। বইয়া (বসে) ইশারা দিলেই অয়। তবে কুনু কুনু দিন মিটিং-টিটিং থাকলে পাঁচ থেকে সাত শ কাপ চাও বেচা অয়’, বললেন মুখলেস।
মুখলেস উদ্দিনের দোকানে সবই ‘সেলফ সার্ভিস’। কারণ, তিনি একাই সব সামলান। কোনো কর্মচারী আগেও ছিল না, এখনো নেই। কর্মচারী না রাখার যুক্তি হচ্ছে, শত শত মসলা ও ঔষধিগাছের মিশ্রণে চা বানান তিনি। প্রতিটারই আলাদা আলাদা পরিমাণ আছে। একটু হেরফের হলেই সুস্বাদু পানীয়টি বিষে পরিণত হতে পারে। এই ভয়ে লোক নেন না। তাই তাঁকেই দ্রুত হাত চালাতে হয়। এমনিতেও বেশ চটপটে ৬১ বছর বয়সী মানুষটি।
গত ছয় বছরে জীবনে অনেক কিছু পাল্টে গেছে মুখলেসের। ফুটপাত ছেড়ে শুধু দোকানেই ওঠেননি, বাড়িতে টিনের ঘর এখন দুই তলা ভবন। বড় ছেলে এবার এসএসসি দেবে। ছোট মেয়ে পড়ে মাদ্রাসায়। তবে করোনা দুই বছর ভীষণ ভুগিয়েছে তাঁকে। দোকান বন্ধ ছিল একদম। কথা বলতে বলতেই লাচ্ছি বানিয়ে দিলেন একটা। সাধারণ লাচ্ছির চেয়ে স্বাদে ও গুণে একেবারেই আলাদা। কী দিয়েছেন এতে, জানতে চাইলে বললেন, ‘কয়েক পদের মসলা। এই স্বাদ অন্য কোথাও পাইতাইন না।