দিনে দিনে ঘুরে এলাম শ্রীমঙ্গল
অনেকেরই, বিশেষ করে মেয়েদের ট্যুর দেওয়া একটা সমস্যা। রাতে বাইরে থাকার পারমিশন মেলে না।দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার প্ল্যান করলে যেতে হয় ঢাকার আশেপাশে। কিন্তু ঢাকার আশেপাশেও তেমন ভালো কোন ঘোরার জায়গা নেই। এই কারনে প্ল্যান করে ফেললাম শ্রীমঙ্গলের। কারন ঢাকার ভিতরে থাকলে জ্যামে যে সময় নষ্ট হবে,তার বদলে হাইওয়ে তে চলে গেলেও কম সময় নষ্ট হবে।
যাইহোক, আমরা ১০ জন ছিলাম। মাইক্রো রিজার্ভ নিয়ে নিয়েছিলাম। কারন বাসে বা ট্রেনে গেলে সময়টা বেশি যাবে। সকাল ৬.৩০ টায় মিরপুর থেকে রওনা করলাম। ৩০০ ফিট দিয়ে বের হয়ে গেলাম ঢাকা থেকে। সকাল ৯.৩০ টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম হবিগঞ্জ। ১০ টার দিকে রেস্টুরেন্টে গাড়ি দাড় করিয়ে সকালের নাস্তা করে নিলাম। ওখানে আধাঘণ্টার মতো সময় গেলো। এরপর আবার গাড়িতে উঠে যাত্রা। ১১ টায় ঢুকে গেলাম শ্রীমঙ্গলের ভেতরে। দুইপাশে উচু উচু টিলা ভর্তি চা বাগানের মাঝখান দিয়ে যেতে দারুন লাগছিল। আমাদের প্রথম ডেসটিনেশন ছিল লাউয়াছড়া। লাউয়াছড়ায় পৌঁছতে ১২ টা বেজে গেলো। ওখানে নেমে ভেতরে ঘুরলাম ১.৩০ ঘণ্টার মতো। প্রচণ্ড গরম ছিল সেদিন। সেজন্য বেশি ভেতরে আর গেলাম না।
তারপর আধাঘণ্টায় চলে গেলাম মাধবপুর লেক। ২-২.১৫ এর দিকে মাধবপুরে নেমে গেলাম। বিশাল বড় একটা জায়গা। লেকটাকে কেন্দ্র করে চারিদিকে পাহাড় টিলা রয়েছে। আর রয়েছে অসংখ্য চা বাগান। ঘুরে ঘুরে একটা পাহাড়ের উপর উঠে গেলাম। চূড়া থেকে পুরো যায়গাটা চোখে পড়ছিল। কি যে দারুন! আর ছিল দারুন বাতাস। গাছের ছায়ায় বসে চারিদিকটা দেখতে দেখতে বাতাস খেলাম কিছুক্ষন। তারপর চা বাগানের মধ্যে দিয়ে ঘোরাঘুরি করলাম, দুই একজন কুলির সাথে কথা বললাম। ১.৩০-২ ঘণ্টার মতো ছিলাম ওখানে।
এবার খেতে যাওয়ার পালা। ক্ষুধায় সবার অবস্থা কাহিল। গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম আবার শ্রীমঙ্গল শহরে। গিয়ে থামলাম পানসী রেস্টুরেন্টে। পানসী তে গিয়ে কাচ্চি খেলাম সবাই। পাশের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খেলাম বিখ্যাত সাত কালার চা। এতো বিশ্রী ! এই জিনিসে কেন এতো হাইপ আমার মাথায় ঢুকলো না!
আবার গাড়িতে উঠে যাত্রা। এসে থামলাম সেই বিখ্যাত “চায়ের দেশে স্বাগতম” ভাস্কর্যের সামনে। ওখানে ১০-১৫ মিনিটের মতো থেমে ছবি তুললাম।
এবার যাত্রা ঢাকার উদ্দেশ্য। ৫.৩০ টার দিকে আমরা শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা করেছি। গাড়িতে বসে বসেই দেখলাম বিল-ঝিল আর ধানের ক্ষেতের মাঝে সূর্যটার ডুবে যাওয়া।
রাস্তায় যেতে যেতে আবার নরসিংদীর ভেতরে এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে চা নাস্তা খেলাম টুকটাক। ৯.১৫ টায় পৌঁছে গেলাম ৩০ ফিট। আলো ঝলমল রাতের ৩০০ ফিট দেখে সবারই নামতে মন চাইলো। নেমে ঝালমুড়ি খেতে খেতে আড্ডা হলো কিছুক্ষন। তারপর আবার রওনা দিয়ে যার যার বাসায় চলে এলাম। যাদের বাসা মিরপুরে তারা ১০.১৫ টাতেই বাসায় পৌঁছে গেছে, আর যারা ধানমন্ডি নেমেছে,তাদের মোটামুটি ১১ টার মতো বেজেছে।
এবার আসি খরচের কথায়।
আমাদের সারাদিনের সব খরচ, গাড়ির ভাড়া সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে টোটাল ১৬ হাজারের মতো। যেহেতু ১০ জন ছিলাম, একেকজনের সেই হিসেবে ১৫০০ টাকার মতো পড়েছে। আমাদের মাইক্রো ভাড়া নিয়েছিল ড্রাইভার সহ ৯ হাজার।
দিনটা সুন্দর ছিল অনেক। যদিও গরম ছিল অনেক, কিন্তু এসি গাড়ি ছিল তাই কষ্ট হয়নি তেমন। আর বন্ধুবান্ধব সাথে থাকলে সবখানেই মজা হয়। পুরোটা সময় গাড়ির ভেতর নাচানাচি, আড্ডা, গান ছিল ভরপুর।আর যেহেতু রাতেই বাসায় ফিরে এসেছি, বাসাতেও সমস্যা হয়নি কোন। ভরপুর এক আনন্দময় দিন কাটিয়ে বাকি ব্যস্তময় দিনগুলোর এনার্জি সংগ্রহ করে এলাম চায়ের দেশ থেকে।
#আমিজাইনাইচুরিকরা।
Original Works
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit