সিকিম ভ্রমণ গাইড
সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ। সিকিমের রাজধানী হল গ্যাংটক। সিকিমের উত্তরে রয়েছে তিব্বত, দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গ ,পূর্ব দিকে ভুটান এবং পশ্চিমে নেপাল । সিকিম বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পূর্ব হিমালয়ের একটা অংশ সিকিম প্রদেশের ভেতরে এসে পড়েছে । পৃথিবীর তৃতীয় পর্বত শৃঙ্গ এবং ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা এ রাজ্যে অবস্থিত। সিকিম প্রদেশের ৩৫ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক। ছোট বড় পাহাড়-পর্বত, আর পাহাড়ের গা ঘেঁষে আঁকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়ি বন, সবুজ প্রকৃতি আর শীতের তুষার সিকিমকে করে তুলেছে পর্যটকদের কাছে একটি স্বর্গরাজ্য। পূর্ব হিমালয় পর্বতের একটি অংশ সিকিম তাই সিকিম গেলে খুব কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় আর সাথে বরফ তো আছেই ।
সিকিমের দর্শনীয় স্থানসমুহঃ
সিকিম রাজ্য পুরোটাই একটি পর্যটন এলাকা । এখানে অনেক টুরিস্ট স্পট রয়েছে যার সবগুলোই দৃষ্টিনন্দন। সিকিমের কয়েকটি আকর্ষণীয় স্পট নীচে দেয়া হল-
গুরুদংমার লেক,বুদ্ধ পার্ক,নথুলা পাস,জিরো পয়েন্ট,সাঙ্গু লেক,জুমথান ভ্যালি,সিদ্ধেশ্বর ধাম,রামটেক মঠ,এম জি মার্গ,হনুমান টক,রাঙ্কা মঠ,ছপ্তা ভেলি,কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক,সাই মন্দির,জুলুক ওয়াইল্ডলাইফ এরিয়া,সেভেন সিস্টার ওয়াটারফল,নাথাং ভ্যালি,কাঞ্চনজঙ্ঘা ওয়াটার ফল,বাবা হরভজন সিং মেমোরিয়াল,যগনোশালা আলপাইন অভয়ারণ্য এবং জলপ্রপাত,রবন্তস রুইনস,গনেশ টক,নর্বুগাঙ্গ পার্ক,সিঙ্গশোর সেতুসহ আরো অনেক স্থান।
সিকিমে ভ্রমনের উপযুক্ত সময়ঃ
সিকিমে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় জমে এবং সবসময়ই সিকিম ভ্রমণ উপযোগী থাকে। সিকিম ভ্রমনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল। এই সময়ে আপনি পাহাড়ের চূড়ায় বরফ দেখতে পারবেন এবং সচল ঝর্না দেখতে পারবেন । যারা ফ্রেশ বরফ দেখতে চান তারা যেতে পারেন শীতের সিজনে (অক্টোবর থেকে মার্চ মাস)ভেতরে পুরো সিকিম রাজ্যটি বরফে আবৃত থাকে। তাই শীতের সিজনে সিকিমে পর্যটকরাও খুব কম আসে, যার জন্য আপনারা সহজে এবং খুব কম খরচে হোটেলে রুম বুকিং নিতে পারবেন। তাছাড়া যারা শীতের সিজনে কম সময়ে, কম খরচে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বরফ নিয়ে মাতামাতি করতে চান তাদের জন্য সিকিম আদর্শ জায়গা। তবে এই সিজনে সিকিমে প্রচন্ড শীত থাকে, তাই আপনাকে প্রচুর পরিমানে শীতের কাপড় নিতে হবে। বেশ কিছু জায়গায় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৬ এর নিচে থাকে। এই জন্য মোটা জ্যাকেট অথবা মোটা সোয়েটার , মোটা মোজা, কেডস, কানঢাকা টুপি, হাতমোজা ইত্যাদি নিতে হয় । যেহেতু স্নো ফল হয়, তাই কয়েক লেয়ারে জামা কাপড় পড়তে হয়।
তবে সিকিমের গ্রীষ্মকাল(এপ্রিল থেকে জুন) মাসে সিকিম এর আবহাওয়া খুবই সুন্দর মনোরম এবং সহনশীল থাকে, তাই এসময় এটাকে সিকিম ভ্রমনের বেস্ট সময় বলা হয়ে থাকে। জুলাই থেকে মার্চ মাসে সিকিমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং মাঝে মাঝে ভূমিধসের মতো ঘটনা ঘটে । তাই এ সময় সিকিম ভ্রমণ না করাটাই ভালো।
সিকিমে ভ্রমণ করতে যেখান থেকে পারমিশন নিবেনঃ
সিকিম একটি সংরক্ষিত এলাকা। তাই এখানে বাইরের কেউই পারমিশন ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না। সিকিম এ প্রবেশের জন্য আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র দরকার হবে । তাছাড়া পাসপোর্ট এবং ভারতীয় ভিসা প্রয়োজন হবে। আপনি সিকিমে প্রবেশের জন্য পারমিশন বাংলাদেশ থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন আবার সিকিম গেটে “ফরেনারস রিপোরটিং অফিস” থেকে পারমিশন নিতে পারবেন।
সিকিমের গেট থেকে যেভাবে পারমিশন নিবেন :
আপনারা অনেকেই IVAC অথবা High Commission এ পারমিশনের জন্য এপ্লাই করে অনেক ঝামেলা ফেস করেন । তাদের জন্য পরামর্শ হলো আপনাদের পারমিশনের জন্য IVAC এ আবেদন করার দরকার নেই । আপনি চাইলে সরাসরি সিকিমে ঢুকবার পথে রাংপো চেকপোষ্টে পারমিট নিতে পারবেন । কেবল পার্মিশনের জন্য প্রয়োজন হবে ৩ কপি ছবি, পাসপোর্ট ও ভিসার ২ টি করে ফটোকপি। ২০ মিনিটের মধ্যে আপনি ইনার লাইন পার্মিট পেয়ে যাবেন। যেটি খুব যত্ন সহকারে আপনাকে পুরো ভ্রমন সময়ে সাথে সাথে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার খরচ হতে পারে ১০০ থেকে ২০০ রুপি।
আর ফিরে আসার সময় অবশ্যই রাংপো চেকপোষ্টে অবহিত করে আসবেন যে আপনি সিকিম ত্যাগ করছেন। না হলে তাদের রেকর্ডে আপনি ব্লাক লিষ্টেড হয়ে থাকতে পারেন, এবং আপনি অন্যান্য বাংলাদেশী ট্যুরিষ্ট দের সম্পর্কে একটি খারাপ অভিব্যাক্তি রেখে আসতে পারেন।
শিলিগুড়ি অথবা IVAC থেকে আপনাকে যে পারমিশনটা দেয়া হবে তা কেবল Gangtok এবং এর আশেপাশে লোকাল সাইট সিইং এর জন্য। Tsomgo lake, Yumthang Valley, Lachen, Lachung, Zero point যেতে হলে আবার Gangtok থেকে আলাদা পারমিশন নিতে হবে । তবে যেখানেই যাবেন একদিন আগে থেকে পারমিশন নিয়ে রাখতে হয়। আপনার সকল পারমিশনের কাজ সিকিমে ট্রাভেল এজেন্সির থ্রু তে করতে হয় , ট্রাভেল এজেন্সির লোকেরাই ট্যুর পারমিশন, কার এবং গাইড এর ব্যবস্থা করবে। গাইড না লাগলেও আপনাকে গাইড নিতে হবে সিকিমে এটাই ফরেনারদের জন্য রুল ।
আপনি গ্যাংটকের বাইরের সকল ট্যুরিষ্ট স্পট গুলোতে যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রতিটি স্পটে যাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২ সেট ডকূমেন্ট ট্যুরিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এই জন্য আপনাকে অবশ্যই সিকিম সরকার অনুমোদিত কোন ট্রাভেল এজেন্সির এর সাহায্য নিতে হবে এবং একজন গাইড নিতে হবে। আর প্রতিটি স্পটে পার্মিশনের জন্য ডকুমেন্ট গুলো আপনাকে আগের দিন ট্যুর অপারেটরের কাছে জমা দিতে হবে। আগের দিন জমা দিলে আপনি পরের দিনের পার্মিশন পাবেন। এবং পার্মিশন পাওয়ার জন্য আপনি যে গাড়িতে যাবেন সেই গাড়ির নম্বর ও ড্রাইভারের পরিচয় থাকতে হবে, যে কাজটি আপনার ট্যুর অপারেটর করে দিবে। আরেকটা বিষয় Nathu La Pass আর Gurudormarg Lake এ যাওয়ার পারমিশন নাই ।
বাংলাদেশ থেকেই যেভাবে সিকিম ভ্রমনের পারমিশন নিবেনঃ
Indian visa application center(IVAC) এর ওয়েবসাইট(www.ivacbd.com) থেকে আপনাকে একটি তিন পৃষ্ঠার ফর্ম ডাউনলোড করে ফর্মটি পুরন করে এম্বাসিতে জমা দিতে হবে আপনি চাইলে অনলাইনেও ফর্ম পুরন করতে পারবেন । জমা দেওয়ার ৭-১০ দিনের জন্য আপনি সিকিম ভ্রমনের পারমিশন পাবেন এবং এর জন্য আপনাকে প্রায় ৩০০ টাকা খরচ করতে হবে।
আবেদন পত্র পুরন করার নিয়মঃ
আবেদনপত্রের সাথে একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে । আবেদনপত্রে আপনার মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আবেদনপত্রের ১৪ নম্বর পয়েন্টে ভ্রমণের সুনির্দিষ্ট স্থান উল্লেখ করতে হবে । যেমন: শুধু সিকিমের পরিবর্তে গ্যাংটক লিখতে পারেন। যদি সপরিবারে বা কোন টিমের সাথে ভ্রমণ করেন তবে টিমের/পরিবারের সকল সদস্যের নাম আবেদনপত্রের ১৯ নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ করতে হবে । আবেদনপত্রের ১৫ নাম্বর পয়েন্টে ভ্রমণের রুট ও মাধ্যম উল্লেখ করতে হবে। যেমন-সড়ক পথে গেলে ঢাকা-বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি-শিলিগুড়ি-গ্যাংটক। আবেদনপত্রের সাথে পাসপোর্ট এবং বৈধ ভারতীয় ভিসার ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে । যাওয়ার তারিখ এবং ফেরার তারিখ আবেদনপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সিকিমে প্রবেশের সময় সিকিম গেটে আপনাকে পারমিশনটি দেখাতে হবে । তখন তারা আপনার পাসপোর্টে একটি সিল মেরে দিবে এবং সিলের মানে হলো আপনি সিকিম ভ্রমনের অনুমুতি পেলেন ।
কিভাবে সিকিমে যাবেন:
নতুন ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাংরাবান্ধা অথবা ফুলবাড়িয়া এই দুটির যে কোন একটি অথবা দুটো পোর্টই উল্লেখ করতে পারেন। তবে চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে শিলিগুডি যেতে বেশি সময় লাগে । আর ফুলবাড়িয়া দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় লাগে এবং খরচ ও হয় কম। তাই ফুলবাড়িয়াই দিয়ে যাওয়াই বেস্ট হবে । সিকিম যাওয়া জন্য আপনাকে বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি অথবা বুড়িমারী -চ্যাংড়াবান্ধা এই দুইটির যেকোন একটি স্তলবন্দর সিলেক্ট করতে হবে । সিকিম যাওয়ার জন্য আপনি বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি অথবা বুড়িমারী -চ্যাংড়াবান্ধা পোর্ট হয়ে শিলিগুড়ি হয়ে যেতে হবে । বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব প্রায় ১৫-১৭ কিঃমিঃ, এবং বুড়িমারী -চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ির দুরত্ব প্রায় ৮০ কিঃমিঃ। বুড়িমারী - চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশনের এর চেয়ে বাংলাবান্ধা -ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশনের ঝামেলা অনেক কম । এই জন্য বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি হয়ে যাওয়াটাই বেস্ট হবে ।
বাসে ঢাকা থেকে সিকিম যাওয়ার উপায়ঃ
হানিফ এন্টারপ্রাইজ ও শ্যামলী পরিবহনের এসি বাস ঢাকা থেকে সরাসরি বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি যায় । শ্যামলী পরিবহনের গাড়ী ঢাকার শ্যামলী হল মোড় থেকে প্রতিদিন রাত সাড়ে নটায় ছাড়ে। শ্যামলী পরিবহনের ফিরতি বাস বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা সাতটায়। এছাড়া হানিফ এন্টার প্রাইজের একটি বাস সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায় ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা যাতায়াত করে এবং প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় বাংলাবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রাওনা দেয় । এই এসি বাস গুলোর ভাড়া ১৩০০ টাকা।
বাংলাবান্ধা – ফুলবাড়ি থেকে জন প্রতি ২৫০ রুপির দিয়ে শেয়ারিং জিপে চড়ে শিলিগুড়ি যেতে পারেন । আর সদস্যসংখ্যা বেশি হলে একটি জিপ রিজার্ভ করে নিতে পারেন ১৫০০-২০০০ রুপির মধ্যে । শিলিগুড়ি পৌঁছাতে আপনার তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে ।
এছাড়া শ্যামলী পরিবহনের ২টি বাস ঢাকা থেকে সরাসরি শিলিগুরি যায় । তবে শ্যামলী পরিবহনের এই বাস সরাসরি বাংলাবান্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকবে না। বাংলাবান্ধা সীমান্তে যাত্রীরা নেমে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ সেরে ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্ত থেকে শ্যামলী পরিবহনে শিলিগুড়ি গামী আরেকটি বাসে উঠবে । একইভাবে শিলিগুড়ি থেকেও ঢাকায় বাস আসে। ২৮ আসন বিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছানো যাবে। বাংলাদেশে থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ২০০০ টাকা। ভারতীয় মুদ্রায় ১৫০০ রুপির মতো পড়বে।
ট্যুর অপারেটর:
আপনারা যে হোটেল থাকবেন সে হোটেল থেকেই আপনাদের কাছে ট্যুর প্যাকেজ এর অফার করবে অথবা আপনারা চাইলে বাইরের ট্যুর অপারেটরের থেকেও ট্যুর প্যাকেজ নিতে পারেন।
ইন্ডিয়ান সিম-কার্ড:
সিকিমে বিদেশিদের কাছে ইন্ডিয়ান সিম বিক্রি করার অনুমুতি নেই । তাই শিলিগুড়ি থেকে অবশ্যই সিম কার্ড কিনে একটিভ করে নিবেন । সিম কিনতে এক কপি ছবি এবং পাসপোর্ট ভিসার ফটোকপি দিতে হবে। ইন্ডিয়ান সিম না কিনে সিকিমে গেলে আপনার যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হবে । সিকিমে ভালো নেটওয়ার্ক পায় “জিয়” ফোনে। আপনারা সেটি কিনে নিতে পারেন।
যেখানে থাকবেনঃ
হোটেল বুকিং এর ক্ষেত্রে সবাই অনলাইন সাইটে গিয়ে বুকিং দিয়ে থাকে । অনলাইনে হোটেল বুকিং নিলে অনেক বেশি খরচ হয়। তাই সেখানে পৌঁছে একটু সময় নিয়ে নিজে দামাদামি করে হোটেল নিজ চোখে দেখে হোটেল বুকিং করাটাই উত্তম ।
আমাদের সিকিম ভ্রমণ গল্প :
সিকিম ভ্রমনে আমাদের গ্রুপ মেম্বার ছিল ৮ জন । আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছিলো ১৬০০০ টাকা। আমরা মোট ৭ রাত ৭ দিন ভ্রমন করেছি। আমরা ঢাকা থেকে শাহ আলী পরিবহনের রাতের এসি গাড়িতে বুড়িমারি চ্যাংড়াবান্ধার উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেছিলাম । ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি ৯০০ টাকা । শাহ আলী ছাড়া অন্যান্য ভালো গাড়ির মধ্যে আছে- মানিক এক্সপ্রেস, শ্যামলী পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস ইত্যাদি। ইন্ডিয়া যেতে আপনাকে ট্রাভেল টেক্স দিতে হবে ৫০০ টাকা, যে কাজিটি আপনি ঢাকা থেকে করে নিতে পারেন সোনালী ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখায় (সাথে পাসপোর্ট নিতে হয়)। আপনারা চাইলে বর্ডার থেকেও আপনার গাড়ির কোম্পানির মাধ্যমে কাজটি করিয়ে নিতে পারেন । এক্ষেত্রে ট্রাভেল টেক্স ৫০০ টাকার সাথে স্পিড ম্যানি হিসেবে অতিরিক্ত ২০০-৩০০ টাকা দিতে হবে।
আমরা পরেরদিন সকাল ৭ টায় বুড়িমারি চ্যাংড়াবান্ধা পোর্টে পৌঁছে প্রথমে ট্রাভেল ট্যাক্স ও বর্ডার পারের জন্য আমরা শ্যামলি পরিবহনের কাছে আমাদের ৮ জনের পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলাম এবং টাকা দিয়েছিয়াম ৫৬০০ । এই ফাঁকে আমরা হোটেলে নাস্তা দেরে নেই। বর্ডারে নাস্তা বাবধ পার হেড খরচ হয়েছে ৪০ টাকা।
৯ টায় বর্ডার খোলার পর সকল ফরমালিটিজ সেরে বর্ডার পার হতে হতে প্রায় ১১ টা বেজে গিয়েছিলো । বর্ডার পার হয়ে আমরা ২০০০ রুপিতে একটি টাটা সুমো রিজার্ভ করে নেই শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত । শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত যেতে সময় লাগে প্রায় ২.৩০ থেকে ৩ ঘন্টা।
আমরা শিলিগুড়ি জংশনে পৌছাই প্রায় দুপুর ২.৩০ মিনিটে , আমরা খুব দ্রুত দুপুরের খাবার খেয়ে রাওনা দিয়েছিলাম কারন আমরা দিনের আলোতে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম । আমরা একটি জীপ রিজার্ভ করেছিলাম গ্যাংটক পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছিলো ২৫০০ রুপি । কেউ সিঙ্গেল যেতে চাইলে ২৫০ রুপিতে শেয়ারে জীপে যেতে পারবেন ।
আমরা দুপুর তিনটায় শিলিগুড়ি ত্যাগ করি এবং রুংপো চেকপোস্টে পৌছাই শন্ধা ৭ টায় । সেখান থেকে পার্মিশন নিয়ে গ্যাংটকে পৌছাই রাত ৮.৩০। গ্যাংটকে পৌঁছে হোটেল খুজে বের করি লাল বাজারের ফ্লাই ওভারের কাছে আমরা রিজেন্সি নামে একটি হোটেলে আমাদের ভাড়া পড়েছে ১ রুম ১৫০০ রুপি । এক রুমে তিনজন থাকার ব্যাবস্তা ছিলো । “আমবা রিজেন্সি” থ্রি-ষ্টার মানের হোটেল এবং খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন । সকাল ভোরে হোটেল থেকে কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার ক্লিয়ার ভিউ দেখা যায় । হোটেলের ছাদে সুসজ্জিত রুফটপ ডাইনিং এবং বার রয়েছে । এছাড়া রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই এবং বাথরুমে রয়েছে গিজার। এই হোটেলের ১টা সমস্যা হলো এখানকার খাবার ব্যাবস্তা ভেজিটেরিয়ানদের জন্য । আমরা রিজেন্সির নাম্বরঃ +৯১ ৮২০৯৭৩৭৩০৩।
২য় দিন সকালে উঠে নাস্তা করে ট্যুর অপারেটর থেকে গ্যাংটক সিটি সাইট সিয়িং এর একটি প্যাকেজ নিয়েছিলাম । এই প্যাকেজে ছিল ১০ টি সাইট সিয়িং এর জন্য ১ টি ৮ সিটের টাটা সিমো গাড়ি, যাতে আমরা ৮ জন গ্যাংটক ঘুরে বেড়িয়েছি। গাড়ির ভাড়া ছিল ২৬০০ রুপি।
ঘুরতে যাওয়ার আগে ১টি লোকাল ট্যুর অপারেটরের কাছে সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে যাই নর্থ সিকিমের ইউম্থাম ভ্যালি এবং জিরো পয়েন্ট যাওয়ার জন্য । ৩ কপি ছবি সহ সব ডকুমেণ্টের ৩ কপি করে দিয়ে ছিলাম । সন্ধ্যায় ফিরে আমরা রেসটিক্টেড এরিয়া পার্মিটের ফরমে সাইন করে আমাদের পাসপোর্ট ট্যুর অপারেটরের কাছে জমা দেই। আমরা নর্থ সিকিমের ইউম্থাম ভ্যালির জন্য ৮ জনের প্যাকেজ নিয়েছিলাম ১৩৫০০ রুপি দিয়ে। এর মধ্যে ছিল ১ টি টাটা সুমো গাড়ি(৮ জনের), ৩ বেলা লাঞ্ছ ও ডিনার, ১ বেলা নাস্তা , এবং রাতে হোটেলে থাকার সুবিধা।
সারাদিনের ভ্রমণ শেষে আমরা গোর্খা হোটেলে খাওয়ার খাই, যেখানে বাঙ্গালী খাবার পাওয়া যায়। আমরা ১৫০ রুপি(১৫০ রুপির পেট চুক্তি প্যাকেজ) দিয়ে পেট পুরে জনপ্রতি গরুর মাংশ, আনলিমিটেড ভাত, সবজি ও ডাল খাই। গোর্খা হোটেলের লোকেশন লাল বাজারের উপরে। আমাদের লাঞ্চ এবং ডিনার এই হোটেলেই সেরে ছিলাম।
৩য় দিন সকালে আমরা এমজি মার্গের চঞ্চল বাংলা হোটেলে খেয়েছিলাম । আলু পরাটা, সবজি ও চাটনি ৫০ রুপি। খাবারটা অসাধারণ ছিলো। তারপর ১১ টার দিকে ২ টি টাটা ইনোভা রিজার্ভ নিয়ে সাঙ্গু জীপ ষ্ট্যান্ড এ যাই রিজার্ভ ভাড়া ছিলো ২০০ টাকা এবং লাচুং এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পথে বাটারফ্লাই ওয়াটার ফলস, কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট ও অন্যান্য কিছু বিরতি দেই । দুপুর ২.৩০ টায় জীপ আমাদের একটি খাবার হোটেলে নিয়ে যায়, এটা আমাদের প্যাকেজ এর আওতার মধ্যে ছিল। এখানে বুফে খাবার ছিলো।
তার পর আমরা লাচুং পৌছাই সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। সেখানে প্যাকেজের আওতাভুক্ত একটি সাধারন মানের হোটেলে উঠি। রাতে হোটেলে নিজস্ব রেষ্টূরেণ্টে ভাত, মুরগীর, ডাল , সবজি দিয়ে ভর পেট খেয়ে নেই। পরদিন সকাল ৫ টায় উঠতে হবে তাই রাত ১১ টায় ঘুমিয়ে পড়ি।
৪র্থ দিন সকালে উঠেই আমরা ইউম্থাম ভ্যালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রাওনা দিলাম । আমরা ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ইউম্থাম ভ্যালিতে পৌছালাম। ইউম্থাম ভ্যালি যে কত সুন্দর সেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না । ইউম্থাম ভ্যালিতে পৌঁছে ৫০ রুপি করে স্নো-বুট ভাড়া করে ছিলাম আর প্যাকেজের আওতাভুক্ত ব্রেকফাষ্ট সেরে ছিলাম । প্রায় ২.৩০ - ৩ ঘন্টা ১২৮০০ ফুট উচ্চতার ইউম্থাম ভ্যালিতে ঝাপাঝাপি করে আমরা লাচুং এ ফিরে এসে ছিলাম দুপুর ১২ টায়। সেখানে প্যাকেজের আওতাভুক্ত লাঞ্চ করে আবার রওনা দিয়েছিলাম গ্যাংটকের ফেরার উদ্দেশ্যে। গ্যাংটকের পৌছালাম সন্ধ্যা ৭:৩০ টায়। গ্যাংটকে পৌঁছে সাঙ্গু লেক যাওয়ার জন্য ৮ জনের তিন কপি ছবি সহ সব ডকুমেন্টের তিন কপি করে ট্যুর অপারেটরকে দিয়ে দিলাম সাথে ফর্মে সাইন করে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলাম। আমাদের সাঙ্গু প্যাকেজ ছিলো ৫০০০ রুপিতে । রাতে আমরা একটি হোটেলে ২৫০ টাকা প্যাকেজে ডিনার করেছিলাম ।
৫ম দিন সকালে ইষ্ট সিকিমের সাঙ্গু লেক(সামগো লেকের)দিকে রওনা হলাম যেটি সমুদ্র পৃষ্ট হতে প্রায় ১২১০০ ফিট উপরে পাহাড় ঘেরা অসম্ভব সুন্দর একটি জায়গা । সেখানে পৌঁছে ১০০ রুপিতে স্নো-বুট এবং ২৫ রুপিতে হাতমোজা ভাড়া করেছিলাম। প্রায় ৩ ঘন্টা সেখানে ঘুরা ঘুরি করে দুপুরের লাঞ্চ করেছিলাম , জন প্রতি প্যাকেজ ছিলো ২০০ রুপি জন প্রতি । তারপর সেখানে ক্যাবল কারে ছড়ে ছিলাম , ক্যাবলকার এর ভাড়া জন প্রতি ৩২৫ রুপি । বিকেলে আমরা হোটেল থেকে আমাদের লাগেজ নিয়ে শিলিগুড়ি ষ্ট্যান্ডে চলে আসলাম। ২৫০০ টাকায় একটি টাটা সুমো গাড়ি রিজার্ভ করেছি শিলিগুড়ির মাল্লা-গুড়ি সেন্ট্রাল প্লাজা পর্যন্ত । রাতে সেন্ট্রাল প্লাজার পাশে হোটেল ভেঙ্কেটেশ রিজেন্সি তে রুম নিয়েছিলাম ভাড়া নিয়েছিলো ১৫০০ টাকা । রুমের মান খুব ভালো ছিলো । ভেঙ্কেটেশ রিজেন্সি এর নম্বরঃ +৯১
০৩৫৩ ২৫১৪৪২০।
৬ষ্ঠ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শিলিগুড়ি শহরের শপিং করে ২ টার দিকে হোটেন চেক আউট করে রওনা দিয়েছিলাম বর্ডারের দিকে। সেখান থেকে ২০০০ টাকায় গাড়ি নিয়ে চলে এলাম চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডারে । এবং রাতের বাসে করে আমরা ঢাকায় ফিরলাম।
সিকিম ভ্রমনে পরামর্শঃ
সিকিম একটি সংরক্ষিত এলাকা এখানে কিছু রেস্ট্রিকশন রয়েছে যেমন এখানে আপনি ধূমপান করতে পারবেন না, সিকিমে যেখানে সেখানে থুথু ফেলতে পারবেন না, এখানকার জীববৈচিত্রের ক্ষতি সাধিত হয় এমন কোন কাজ করতে পারবেন না । এছাড়া অবৈধ কোনো কিছু নিয়েই আপনি সিকিম প্রদেশের ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না। পাসপোর্ট, ভিসা , ছবির মিনিমাম ১০ কপি করে নিয়ে যাবেন, তা নাহলে সিকিমে প্রতি কপির জন্য আপনাকে প্রায় তিন গুন টাকা গুনতে হবে।
। সিকিমে সব জায়গায় ট্রাভেল এজেন্সি এর থ্রু তে আলাদা কার/জিপ রিজার্ভ করে যেতে হয়। তাই খরচ কমাতে চাইলে গ্রুপ মেম্বার ৮ জন অথবা ৪ জন হলে সব চেয়ে ভালো হয় । সিকিমে প্রচুর ঠাণ্ডা তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতের পোশাক নিয়ে যেতে হবে । বাংলাদেশ ভারত সীমান্তেই টাকা থেকে রূপি একচেঞ্জ করে নেওয়া ভালো। কারণ শিলিগুড়ি বা গ্যাংটকে একচেঞ্জ রেট কম।
সিকিম ট্যুরের ক্ষেত্রে গ্রুপ করে যাওয়াটা ভালো, এতে আপনার গাড়ি ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ কম পড়বে । গ্রুপের সাইজ ৪ জন অথবা ৮ জন হলে ভালো হয়। ৪ জন হলে টাটা ইনোভা টাইপ ছোট গাড়িতে ট্যুর করতে পারবেন । আর ৮ জন হলে টাটা সুমো গাড়ীতে ভ্রমন করতে পারবেন। তবে যেহেতু পাহাড়ি পথ, তাই ছোট গাড়ি অপেক্ষা টাটা সুমো অথবা বলেরো এসইউভি গাড়ীতে ভ্রমন করা অনেক নিরাপদ হবে।
ট্র্যাভেল বাংলাদেশ টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের মেইল করুন [email protected]। আমরা ঠিক করে নিবো ।
দৃষ্টি আকর্ষণ : আমাদের পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের পরিচয় বহন করে এবং এইসব পর্যটন স্পট গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। আর ভ্রমনে গেলে কোথাও ময়লা ফেলবেন না । দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ট্র্যাভেল বাংলাদেশে প্রকাশিত তথ্য বর্তমান সময়ের সাথে মিল নাও পেতে পারেন। তাই অনুগ্রহ করে আপনি ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে পরিকল্পনা সাজাবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহনের জন্য যোগাযোগের নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে ভালো ভাবে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন প্রকার আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ট্র্যাভেল বাংলাদেশ দায়ী থাকবে না।
HI @arvi8
hope you doing well . We have some restrictive rules on our Steemit platform. You must follow those rules. Copying this post of yours from somewhere else is a violation of our Steemit platform rules. To be a real blogger you must use your creativity . Your content is totally copied from another source . You have to mention or give the link from where you copied content .Otherwise it will be considered as plagiarism .Hope you will try to follow our steemits rules from now on.
Thank you .
Your post are written from this source link .
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit