বরবটির গুনাগুন!!!

in vagitable •  7 years ago 

images (1).jpeg

পাঠ - ১

গ্রীষ্মের নানা সবজির মধ্যে বরবটি একটি অন্যতম সবজি যা এ মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করা যায়। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বরবটি চাষ বাড়িয়ে সবজির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।সবজি হিসেবে বরবটি খুবই উৎকৃষ্ট। এটি আমিষের অন্যতম উৎস। অফ সিজনের সবজি হিসেবে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর পুষ্টিমানও ভালো। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, শ্বেতসার, আঁশ, স্নেহ, ক্যালোরি, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে।যে কোনো মাটিতে বরবটি চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ মাটি অধিকতর উপযোগী। অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় এটি ভালো জন্মে। সাধারণত ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছের বাড়-বাড়তি খুব ভালো হয়। এ সবজি মূলত খরিপ মৌসুমের ফসল। শুষ্ক ও আর্দ্র উভয় আবহাওয়া বরবটির জন্য সমান উপযোগী। কিন্তু অতি বৃষ্টির সময় উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়।বরবটির বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত আছে। এর মধ্যে কেগরনাটকী, বারি বরবটি-১, লালবেনী, তকি, বনলতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বরবটির স্বাস্থ্য উপকারী গুণ

নুডুলস, রোল, ভাজি, ভর্তা অথবা সবজি হিসেবে বরবটির ব্যবহার চলে দারুণভাবে। খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের দেহে যোগান দেয় চমৎকার কিছু পুষ্টি। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম বরবটিতে রয়েছে জলীয় অংশ ৮৭.৫ গ্রাম, আমিষ ৩.০, শর্করা ৯.০, মোট খনিজ পদার্থ ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ৫.৯, ভিটামিন বি-১ ০.১৪, ভিটামিন বি-২ ০.৩০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি খুব অল্প, খাদ্যশক্তি ১৮ ক্যালরি। বরবটির জাত ও স্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে পুষ্টিমানের পরিবর্তন হতে পারে। আজ জেনে নেব বরবটির অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।

– বরবটিতে পাওয়া যায় ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উচ্চ ক্ষমতাশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই উপাদান ক্যানসার কোষ বৃদ্ধিরোধ করতে চমৎকার কাজ করে।

– ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করতেও বরবটির ভূমিকা অনেক।

– বরবটিতে থাকা ভিটামিন কে আপনার অস্টিওআর্থারাইটিস সমস্যা থেকে হাড়ের যত্ন নেয়। দেহে রক্ত জমাট বাঁধতেও ভিটামিন কে- এর ভূমিকা অনেক বেশি।

– বরবটিতে রয়েছে প্রচুর উপকারি খাদ্যআঁশ। খাদ্যআঁশ শরীরের ক্ষতিকারক এলডিএল কলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে দেয়। ফলে হার্টের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এছাড়াও এটি উচ্চ রক্তচাপ, বুক জ্বালাপোড়া প্রভৃতি সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।

– বরবটিতে থাকা সিলিকন হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। হাড় শক্ত করতে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় বরবটির বীজে।

– ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন পরিশোষণে ভূমিকা রাখে। সালাদে কাঁচা বরবটি খেলে তা থেকে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাছাড়া বরবটিতেও রয়েছে যথেষ্ট পরিমান আয়রন। যা আপনার শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।

– কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য ও ফ্যাট-কলেস্টেরল না থাকায় বরবটি পেট ভরে খাওয়া যায়। এতে ক্ষুধাভাব কম হয়। ওজন হ্রাসে সহায়তা করে।

– চুল পড়ে যাওয়া ঠেকাতেও বরবটির ভূমিকা রয়েছে।

পাঠ - ২

Vigna sesquipedalis

বরবটি আমিষ সমৃদ্ধ একটি সবজি। প্রায় সারা বছরই এটি ফলানো যায়। তবে খরিপ তথা গ্রীষ্মকালে ভাল হয়। খুব শীতে ভাল হয় না।

মাটিঃ
দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বরবটি চাষের জন্য উপযোগী।

জাতঃ
কেগরনাটকীই অনেকদিন পর্যন্ত বরবটি একটি উন্নত জাত হিসেবে চাষ হয়ে আসছে। এখন অবশ্য বেশ কয়েকটি জাত চলে এসেছে। লাল বেণী, তকি, ১০৭০, বনলতা, ঘৃতসুন্দরী, গ্রীন লং, গ্রীন ফলস এফ১, সামুরাই এফ১ ইত্যাদি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত। কেগরনাটকী জাতটি পৌষ-মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। মধ্য মাঘ থেকে মধ্য আশ্বিনে চাষ করা যায় ঘৃতসুন্দরী, গ্রীন লং। মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত চাষ করা যায় ১০৭০ জাতটি। উল্লেখিত জাতগুলোর রমধ্যে কেগরনাটকী ও লাল বেণী জাতের ফলন সবচেয়ে বেশি। তবে খেতে ভাল ঘৃতসুন্দরী।

সময়ঃ
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সাধারণতঃ বীজবপন করা হয়। তাছাড়া আশ্বিন-অগ্রাহায়ণ মাসেও বীপবপন কর হয়। অন্যান্য সময়ও বোনা যেতে পারে।

বীজের পরিমাণঃ
প্রতি শতকে ১০০-১২৫ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি।

জমি তৈরিঃ
৪ - ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হয়।

সারের মাত্রাঃ
সারের নাম সারের পরিমাণ

প্রতি শতকে প্রতি হেক্টরে

ইউরিয়া ১০০ গ্রাম ২৫০ কেজি
টি এস পি ৯০ গ্রাম ২২৫ কেজি
এমওপি ৭৫ গ্রাম ১৮৫ কেজি
গোবর ২০ কেজি ৫ টন

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
গোবর, টিএসপি সম্পূর্ণ পরিমাণ ও অর্ধেক এমওপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। পরে বীজ বোনার ২০ দিন পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

বীজ বপনঃ
২ মিটার দূরত্বে সারি করে ২৫-৩০ সেমি. দূরে দূরে বীজ বুনতে হয়। জাত হিসেবে সারির দূরত্ব ১ মিটার বাড়ানো বা কমানো যায়।

পারিচর্যাঃ
চারা বড় হলে মাচা বা বাউনি দিতে হবে। জমিতে পানির যাতে অভাব না হয় সে জন্য প্রয়োজন অনুসারে সবসময় সেচ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা শিমের মতই। জাব পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা ও মোজেইক রোগ বরবটি চাষের বড় সমস্যা।

ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ
বীজ বোনার ৫০ - ৬০ দিন পর থেকেই বরবটি সংগ্রহ করা যায়। শতক প্রতি ফলন ৩০ - ৬০ কেজি, হেক্টর প্রতি১০ - ১২ টন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!