পর্ব ১
জান্নাতঃ আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছো? (গল্পের নায়িকা )
আম্মুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস রে মা?
জান্নাতঃ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আম্মুঃ অনেক দিন পর আমাদের বাসায় আসলি। বস আমি চা বানিয়ে আনছি।
জান্নাতঃ না আন্টি এখন এই সব কিছুই করতে হবে না। আনি হনুমানটাকে কলেজে নিয়ে যেতে এসেছি।
আম্মুঃ ও তো এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
জান্নাতঃ দাঁড়াও আমি ওর ঘুম বের করছি।
তারপর জান্নাত এক দৌড়ে আমার ঘরে চলে আসলো।
জান্নাতঃ এই নাসিম উঠ। ( গল্পের নায়ক )
আমিঃ …………….
জান্নাতঃ তুই উঠবি নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো?
আমিঃ আম্মু যাও তো আর একটু ঘুমিয়ে উঠছি।
জান্নাতঃ দাড়া তোর ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছি।
এই কথা বলে জান্নাত এক মগ পানি নিয়ে এসে আমার ( নাসিমের ) গায়ে ঢেলে দিলো। আমি পানি চোখে পড়াতে ধরফর করে উঠে বসে পড়লাম।
আমিঃ আম্মু আমাদের সাদ ফেটে গেছে।
জান্নাতঃ ঐ চুপ।
আমিঃ ………….( আমি তো জান্নাতের এক ধমকে চুপ হয়ে গেলাম। )
জান্নাতঃ তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেন?
আমিঃ…………….
জান্নাতঃ ঐ কথা বলছিস না কেন? তুই বোবার মত বসে আছিস কেন?
আমিঃ তুই তো কথা বলতে নিষেধ করলি।
জান্নাতঃ তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। ( তেড়ে মারতে আসতে লাগলো। )
আমিঃ বোন তুই থাক আমি গেলাম।
এক দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে আসলাম। ওর সামনে থাকলে নিশ্চিত মার খেতে হবে। ও যেই পরিমাণ রাগী।
ওর মত রাগী মেয়ে সচরাচর দেখা যায় না।
ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়ায় হয়নি। আমি নাসিম আরাফাত।
বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তান। বুঝলেন না তো, আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। আমি আর আমার একটা ছোট বোন আছে তার নাম হলো মিমি। আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি আর ও ক্লাস এইটে পড়ে। আর আব্বু ব্যবসার কাজে সিংগাপুরে আছে।
আর একটু আগে যার সাথে আমার ঝগড়া হলো সে আমার ফ্রেন্ড থুক্কু বেষ্ট দুশমন জান্নাত। ও আমার ছোট বেলার বন্ধু। ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আর আমরা একই সাথে পড়াশোনা করি।
জান্নাতঃ ঐ সালা পিচাস বাথরুমে ঢুকে কি ঘুমিয়ে গেছিস?
এই রে আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে মনেই নেই।
জান্নাতঃ তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আয়। আমি নিচে গেলাম।
যাক বাবা বাঁচা গেল। একটু আরামছে কাম সারা যাবে। তারপর ফ্রেস হয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে আসলাম।
আমিঃ আম্মু খুব খুধা লাগছে। তাড়াতাড়ি নাস্তা দেও তো।
আম্মুঃ আচ্ছা বস আমি দিচ্ছি।
জান্নাতঃ না তোর খাওয়া লাগবে না। চল আজ না খেয়ে থাকতে হবে।
আমিঃ আম্মু ……
আম্মুঃ জান্নাত যখন নিষেধ করেছে তখন আমার কিছুই করার নেই।
আমিঃ ধুর কিছুই ভালো লাগে না। এই তুই আমার বাসায় আসবি না তো।
জান্নাতঃ ১০০ বার আসবো পারলে ঠেকিয়ে দেখাস। এখন চলে কলেজে পৌঁছাতে দেরি হবে।
আমিঃ চল।
কি আর করার জান্নাতের জন্য না খেয়েই কলেজে যেতে হবে। বাইক নিয়ে গেটের বাইরে আসলাম।
আমিঃ ওঠ।
জান্নাতঃ যদি ফাউ ফাউ ব্রেক ধরিস তোর খবর আছে।
আমিঃ তোর প্রতি আমার কোন ফিলিংস আসে না। তাহলে ব। ব্রেক ধরবো কেন?
জান্নাতঃ মনে হচ্ছে তুই কোনো যুবরাজ যে, তোর প্রতি আমার আকর্ষণ আছে। আর তুই কেমন লুচু আমার জানা আছে।
আমিঃ ধুর তোর সাথে বকবক করা আর পেতনির সাথে বকফক করা একি কথা।
জান্নাতঃ দেখ তুই যদি আর একবার আমাকে পেতনি বলিস আমি কিন্তু তোকে কি করবো নিজেও বলতে পারছি না।
আমিঃ ওকে আমার ভুল হয়েছে এখন তুই ভালো করে ধরে বস। আমি গাড়ি চালাব।
জান্নাতঃ হুম টান।
তারপর আর কথা না বাড়িয়ে বাইক নিয়ে টান দিলাম। হঠাৎ জান্নাত বলে উঠলো।
জান্নাতঃ নাসিম দাঁড়া দাঁড়া।
আমিঃ কেন?
জান্নাতঃ তোকে দাড়াতে বলছি দাঁড়া।
আমিঃ হুম গাড়ি ব্রেক করলাম। এবার বল কি করবি?
জান্নাতঃ পিছনে একটা রেস্টুরেন্ট ফেলে এসেছি ওখানে নিয়ে চল।
আমিঃ তুই যে, কখন কি করিস আমি নিজেও বুঝতে পারি না। ( বাইক ঘুরিয়ে )
রেস্টুরেন্টের সামনে এসে বাইক থামালাম।
আমিঃ এবার নাম তোর কাজ সেরে তাড়াতাড়ি আয়।
জান্নাতঃ তুই নামছিস না কেন?
আমিঃ আমি নেমে কি করবো?
জান্নাতঃ তোর কি পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় খাওয়ার খুব শখ হয়েছে?
আমিঃ না।
জান্নাতঃ তাহলে কোন কথা না বলে চুপ করে আমার সাথে সাথে আয়।
আমিঃ হুম।
জান্নাতের উপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই। কখন কোথায় কী করবে ও নিজেই জানে না। কি জন্য যে, এর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে গিয়েছিলাম আল্লাহ ভালো জানেন।
কোন কথা না বলে চুপ করে জান্নাতের পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেল আমিও ঢুকে গেলাম। তারপর জান্নাত আমার পছন্দের কিছু খাবার অডার করলো। ওয়েটার কিছুক্ষণ পর খাবার দিয়ে গেল। আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছি।
জান্নাতঃ হ্যবলার মত আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
আমিঃ তা আমি কি করবো?
জান্নাতঃ এই খাবার গুলো অডার করলাম কার জন্য? তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু কর।
আমিঃ তুই খাবি না?
জান্নাতঃ না আমি বাসা থেকে খেয়ে এসেছি।
কি আর করার জান্নাতকে এখন হাজার বার বললেও আর খাবে না। আমি খাওয়া শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি জান্নাত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ কি হলো তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
জান্নাতঃ ক কই কিছু না। তুই খা।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেতে লাগলাম। আমার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে জান্নাত বিল দিয়ে দিলো।
আমিঃ তোর দেওয়া লাগবে না। আমি দিয়ে দিচ্ছি।
জান্নাতঃ তোর দেওয়া লাগবে না। আমি দিচ্ছি।
আমিঃ ওকে। তোর বাপের এত টাকা খাবে কে? যাহ তোর বিয়ের সময় তোর বড়কে একটা ঘরি গিফট দিয়ে দেবো।
জান্নাতঃ আমার বাপের টাকা কে খাবে না খাবে তোর এত ভাবা লাগবে না।
তারপর জান্নাতের বিল দেওয়া শেষ হলে আমরা আবার বাইকে করে কলেজে চলে আসলাম। আমি বাইক পার্কিং করে এসে আমি আর জান্নাত ক্যনটিনের দিকে যাচ্ছিলাম এমন সময় একটা ছেলে আমাকে ডাকলো।
ছেলেঃ ভাই একটু শুনবেন প্লিজ।
আমিঃ জি ভাই বলেন।
ছেলেঃ একটু এদিকে আসেন।
আমিঃ জান্নাত তুই একটু দাঁড়া আমি আসছি।
তারপর একটু সরে আসলাম।
আমিঃ হুম বলেন কি বলবেন?
ছেলেঃ আপনার সাথে যে আছে তার নাম তো জান্নাত তাই না?
আমিঃ তো?
ছেলেঃ আসলে আমি জাননাতকে পছন্দ করি। আর আমি এটাও খোঁজ নিয়েছি যে, জান্নাত আপনার বেষ্ট ফ্রেন্ড gf না।
আমিঃ ……..( তোর মনে হচ্ছে মার খাওয়ার শখ হয়েছে )
ছেলেঃ কি হলো ভাই কথা বলছেন না কেন?
আমিঃ আপনি জান্নাতকে পছন্দ করেন তাহলে আমাকে বলেছেন কেন? যান গিয়ে জান্নাতকে প্রপোজ করেন।
ছেলেঃ ওকে আপনি দাড়ান আমি এক্ষুনি প্রপোজ করবো।
আমিঃ বেস্ট অফ লাক ব্র।
ছেলেঃ হুম।