বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজলো আমার শহর

in writing •  2 years ago 

গত সোমবার । সকালবেলা হঠাৎ ঘুম থেকে উঠেই দেখি অন্ধকার । কী ব্যাপার ! এখন তো বেলা প্রায় সাড়ে ন'টা । অন্ধকার কেনো ঘর ? দ্রুত জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখি আকাশ ঘোর কালো আঁধারে ঢাকা। আসন্ন বৃষ্টির পূর্বাভাস । কিন্তু, মন খুব একটা নেচে উঠলো না । সেই শুক্রবার থেকেই এমনটা হচ্ছে । আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়, কিন্তু বৃষ্টি শেষমেশ আর পড়ে না ।

আশায় আশায় গেলো শুক্রবার, শনিবার, রবিবার । কিন্তু, হৃদয় শীতল করা সেই বৃষ্টির ধারায় ভিজলো না আমার শহর । অথচ এই তিনদিন ধরেই প্রত্যেকদিন আকাশ কালো করে মেঘের ঘনঘটা শুরু হয় আর শেষমেশ কোথায় যেন তারা উবে যায় মন্ত্রবলে । বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও হয় না ।

কিন্তু, এদিনের মেঘ অন্যান্য দিনের দিনের মতো ছিল না মোটেও । জলভরা ঘন কালো মেঘে পুরো দিগন্তরেখা ঢেকে আছে, চরাচর ছেয়ে গিয়েছে সন্ধ্যার মতো আঁধারে । মন বলতে লাগলো এবার বৃষ্টি আসবেই । বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজবো ভাবতেই নিমেষে মনটা নেচে উঠলো একরাশ খুশিতে । আমি বৃষ্টি ভালোবাসি । খুব বেশিই ভালোবাসি । বৃষ্টি আমার মন ভালো করে দেয়, বৃষ্টি আমাকে আনমনা করে তোলে । জানালা দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়া পড়তে দেখতে দেখতে স্মৃতি রোমন্থনে ভেসে যাই অতীতে ।

মনে পড়ে ছোটবেলার বর্ষার স্মৃতি । গ্রামে থাকতাম যখন তখন বর্ষার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত । শহরের ইঁট, কাঠ, পাথরে ঘেরা খাঁচায় বসে বৃষ্টির সৌন্দর্য তেমন একটা উপভোগ্য নয় । বর্ষাকালে আমাদের গ্রামের বাড়িতে টিনের চালার উপরে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দে মনটা নেচে উঠতো । অতীতের স্মৃতিচারণা করলাম নিচের কয়েকটা লাইনে -

"বর্ষাকাল, প্রায় সারাদিনই শ্রাবণের ধারা অঝোর ধারায় ঝরে চলেছে । এমন দিনেই তো তেলেভাজা জমে ভালো, সাথে সর্ষের তেল, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মুড়ি আর...... ভূতের গল্প । বাইরে এলোমেলো দমকা জোলো হাওয়া, থেকে থেকে কখনো ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে আবার কখনও বা মুষল ধারায় । সন্ধ্যার পরে ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকা আর বৃষ্টি পড়ার শব্দ , মাঝে মাঝে আকাশের এ মাথা থেকে ও মাথা অব্দি বিদ্যুতের ঝিলিক, মেঘের গুরু গুরু ডাক সব মিলিয়ে শ্রাবনের সন্ধ্যা একটা অদ্ভুত মায়াবী আশ্চর্য সন্ধ্যা । এই রকম সন্ধ্যে বেলায় কোনো কালেই ক্লাসের বই ছুঁতাম না । গ্রামের ছেলে, বিদ্যুৎ ছিল না, হ্যারিকেনের কাঁপা কাঁপা আলো, দেয়ালে অদ্ভুত আলো-ছায়ার খেলা, খোলা জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছাঁট- ভূতের গল্পের বই খুলে বসতাম । আর সাথে থাকতো কখনো আলুর চপ, কখনো পেঁয়াজী-বেগুনি, ডাল-পুরি, সিঙ্গাড়া, ফুলুরি আর অবশ্যই বড়ো একবাটি সর্ষের তেল আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মাখা মুড়ি ।"

আজকের দিনে পুরোনো কথা খুব বেশি করে মনে পড়তে লাগলো । এসব কথা ভাবতে ভাবতে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে এক ঝলক এলো হাওয়া এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার মুখে । আহঃ কি শীতল স্পর্শ ! মনটা এক নিমেষে সজীব হয়ে উঠলো । একটু পরে খেতে বসলাম । ক্রমশঃ বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখলাম । সেই সাথে আরো আঁধার হচ্ছে চরাচর । খাওয়া শেষ হতে না হতেই হঠাৎ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু করলো ।

আমার ছেলে টিনটিন "বৃষ্টি" "বৃষ্টি" বলে চেঁচাতে চেঁচাতে সারা বাড়ি মাথায় করে তুললো । এক লাফে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়েই অমনি টিনটিনকে কোলে তুলে নিয়ে ছুট দিলাম । আমার লক্ষ্য ছাদ । পিছনে তনুজা ছুটে এসে বার বার বারণ করতে লাগলো আমাকে । কিন্তু, কে শোনে কার কথা ! ততক্ষণে টিনটিনকে কাঁধে নিয়ে আমি ছাদে ।

বৃষ্টি ততক্ষণে আর ঝিরি ঝিরি নেই । বড় বড় করে ফোঁটা পড়া আরম্ভ হয়েছে । আর সেই সাথে তুমুল ঝোড়ো হাওয়া । অসম্ভব ঠান্ডা বৃষ্টির ফোঁটাগুলো । দু'হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মেখে নিতে লাগলাম সারা গায়ে, মুখে, চোখে, ঠোঁটে, চিবুকে সর্বত্র । টিনটিন নাচতে লাগলো বৃষ্টির মধ্যে । আহা ! সে কি এক অপূর্ব অনুভূতি ।

ভিজলো আমার শহর, ভিজলো আমার ছাদ, ভিজলো আমার শরীর, ভিজলো আমার হৃদয় । কী যে এক অপূর্ব প্রশান্তিতে মনটা ছেয়ে গেলো আমার তা বলে বোঝাতে পারবো না ।

------- ধন্যবাদ -------

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!