খাদ্য যখন মাটিsteemCreated with Sketch.

in writingamarbanglablog •  last year 

images.jpeg

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের সেই লেখাটি আজ বড় মনে পড়ছে -

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়,
পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি ।

ক্ষুধার রাজ্যে আসলেই কবিতার প্রবেশ নিষেধ । তীব্র দারিদ্র্য যেখানে, কবিতা সেখানে বিলাসিতা । পেটে খিদের আগুন জ্বললে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে আর কবিত্বের ভাব উদয় হয় না, তখন চাঁদটাকেই মনে হয় বিশাল একটা রুটি । এই পৃথিবীতে জঠরাগ্নির মতো আগুন আর কোথাও পরিলক্ষিত হয় না । বেঁচে থাকার তীব্র জৈবিক তাড়নায় আজও পৃথিবীর একটা অংশের মানুষ পশুর মতো খাদ্যাভাস রপ্ত করেছে ।

যে জিনিস আমরা খাওয়া তো দূরে থাকুক, খাওয়ার কল্পনাই কখনো করতে পারি না তাই খেয়ে পেটের ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করছে নিদারুণ অর্থকষ্টে ভুগতে থাকা পৃথিবীর কয়েকটি দেশের জনগোষ্ঠী । আফ্রিকান কিছু দেশে দুর্ভিক্ষ তার কালো পাখা বিস্তার করে নিচ্ছে একটু একটু করে । তবে, আজ আমি আফ্রিকান কোনো দেশের কথা শোনাচ্ছি না । আমি আজ হাইতির কথা বলতে চাচ্ছি ।

হাইতি হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর অন্তর্গত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র । ক্যারিবীয় সাগরের একটি দ্বীপ হিস্পানিওলা, এই হিস্পানিওলা দ্বীপটির পশ্চিম দিকের তিন ভাগের এক ভাগ নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হাইতি । ১৮০৪ সালে দাসদের এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্স এর অধীনতা থেকে মুক্ত হয় । হাইতিই পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যেটি সম্পূর্ণ দাসদের (slaves) দ্বারা নির্মিত ।

হাইতির সব চাইতে বড় প্রব্লেম হলো এর দারিদ্রতা । সারা ল্যাটিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে সব চাইতে গরীব দেশ হলো এই হাইতি । তার ওপর হাইতিতে দুটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা দেশটিকে একদম চরম দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে । প্রথম সমস্যা হলো অরণ্য ধ্বংস ও প্রাকৃতিক সম্পদ পাচার করা । আর দ্বিতীয় সমস্যা হলো দেশটিতে প্রতিনিয়ত সহিংস রাজনৈতিক অস্থিরতা ।

এই দ্বিমুখী প্রব্লেমের কারণে দেশটি আজ চরম দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছে । দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী এত গরীব যে প্রতিদিন খিদের অন্ন জোগাড় করতে ব্যর্থ হয় । ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা । বাধ্য হয়ে তাই ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য তারা একদম নাম মাত্র মূল্যের কেক এবং বিস্কুট কিনে খায় । তবে, আসল কেক বিস্কুট নয় । কাদা দিয়ে তৈরী কেক বিস্কুট । কী ? চমকে গেলেন তো ? একদম সত্যি কথা বলছি আমি । এক বিন্দুও মিথ্যে নেই এই কথার মধ্যে ।

আগেই বলেছি খিদের জ্বালা বড় জ্বালা । এই জ্বালা জুড়োতে কত অখাদ্য কুখাদ্য খায় গরীব মানুষেরা । কিন্তু, তাই বলে মাটি খায় ! এটা সত্যিই অভাবনীয় । কিন্তু, হাইতির এক বিরাট জনগোষ্ঠী ক্ষুধার জ্বালা থেকে বাঁচতে মাটি খায় । মাটির কেক এবং বিস্কুট পাওয়া যায় প্রায় সব বস্তি সংলগ্ন দোকান গুলোতে ।

প্রথমে একদল ব্যবসায়ী শ্রেণীর মানুষ পাহাড়ের পাদদেশ খনন করে নরম লালচে পলিমাটি সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে । সেই মাটি কিনে নেয় এক শ্রেণীর মানুষ, যাদের পেশাই হলো মাটির কেক, বিস্কুট তৈরী করা । প্রথমে তারা এই শুকনো মাটিকে মিহি করে গুঁড়ো করে, এরপরে চালুনি দিয়ে কাঁকর, নুড়ি, বালুকণা ও পাথরকুচি ঝেড়ে বের করে ফেলে । তারপরে সেই গুঁড়ো মাটির সাথে খাওয়ার জল মিশিয়ে লেই তৈরী করে । তারপরে তার সাথে খাবার নুন, সোডা এবং মশলা মেশায় । এরপরে আঠালো হয়ে গেলে কেক ও বিস্কুটের আকৃতি দেয় সেগুলোকে । তারপরে কয়েকদিন ভালো করে রোদে শুকিয়ে এরপরে আগুনে সেঁকে নেয় । ব্যাস, এ ভাবেই তৈরী হয় মাটির কেক ও বিস্কুট ।

একেবারে প্রায় নামমাত্র মূল্যে বিকোয় এই সব মাটির তৈরী কেক ও বিস্কুট । হাইতির গরীব মানুষেরা গোগ্রাসে কিনে খায় এইসব কাদা দিয়ে গড়া খাবার তাদের উদরের আগুন নেভাতে । আর আমরা কি পরিমাণ খাবার নষ্ট করি প্রতিদিন ভাবুন একবার !

                                                                                                               ------- ধন্যবাদ -------
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Follow Me for Daily Crypto News Updates i will follow you back