"সুস্থতার অপেক্ষায় দিন গোনা"

in hive-120823 •  5 hours ago 
IMG_20241121_231737.jpg
"কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

দুপুরের পর সিদ্ধান্ত হলো দাদাকে দেখতে আজ হসপিটালে যাবো। অপারেশনের পর আর দেখতে যাওয়া হয়নি। যদিও ঠিকঠাক জ্ঞান ফিরে এসেছে, সকলকে চিনতে পারছে, তবে এতো বড় একটা অপারেশনের পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও অনেকটা সময় প্রয়োজন। তবে দিদির কাছে সকালে যখন শুনলাম দাদার চোখ অনেক ফুলে গেছে। তখন খুব ইচ্ছে হলো বিকেলে গিয়ে একবার দেখে আসি।

IMG_20241121_152117.jpg
"ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে দাড়িয়ে ছিলাম।পড়ন্ত রোদের আলো তখনও কিছুটা বাকি ছিলো"

দুপুরবেলায় খাওয়া দাওয়ার পর রওনা করলাম। বাইরে তখন হালকা রোদের আলো থাকলেও, হালকা শীতের অনুভূতি হচ্ছিলো। আমি, দিদি, মামা, আর একটা দিদি একসাথে রওনা করলাম। লোকাল ট্রেন থেকে নেমে মেট্রো করে গেলে সময় অনেকটাই কম লাগে, তাই আমরা সবাই মেট্রো ধরেই পৌঁছে গেলাম। আমাদের আগে দাদার বোন ও বোনের হাজব্যান্ড দেখা করে গেছে। এরপর এক এক করে আমরা গেলাম।

IMG_20241121_213006.jpg
"দাদার পরিস্থিতি- দিদির ফোন থেকে ছবিটি নিয়েছি"

আমি যখন রুমে ঢুকেছি, তখন দাদা উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে ছিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছে, তবে দিদি ডাকতেই যখন দাদা উঠে বসলো, হঠাৎ করে চমকে উঠলাম। মুখের বাম পাশ এতোটাই ফুলে আছে যে, সামনে থেকে দেখে আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছি।

হয়তো দিদি এই প্রফেশনে আছে বলে এই বিষয়টা ওর কাছে তেমন ভয়ঙ্কর না হলেও, খারাপ লাগা তো নিশ্চয়ই আছে। কারণ আমরা আমাদের কাছের মানুষদেরকে কখনোই কষ্ট পেতে দেখতে অভ্যস্ত নই। আর দাদার ক্ষেত্রে দিদি অনেক বেশি সহ্য করেছে।

দাদা আমার সাথে নরমাল কথাই বলছিলো। কিন্তু আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো উত্তর করতে পারিনি। কারণ ওনার চোখের দিকে তাকালেই আমার খারাপ লাগা, ভয় সবটাই হয়তো বুঝতে পেরে যেতো। খুব বেশিক্ষণ আমি ভিতরে থাকতে পারিনি। দিদি আমাকে নামিয়ে দিয়ে সাথে করে আবার মামাকে নিয়ে গিয়েছিলো। কারণ ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে অন্য কাউকে যেতে দেবে না।

IMG_20241121_175724.jpg
"দিদির বিল্ডিং এ ঢোকার মেইন গেট"

এরপর আরেক জন দিদি তাকেও দাদার সাথে দেখা করিয়ে নিচে নামিয়ে দিলো। আমি আর ঐ দিদিটা হসপিটালে চত্বর একটু ঘুরে দেখলাম। আমার দিদি কোন বিল্ডিং এ ডিউটি করে সেই বিল্ডিংটা দিদিকে দেখালাম। তার পাশাপাশি গত বছর দাদার অপারেশন কোথায় হয়েছিল সেই বিল্ডিংটাও দেখিয়েছি। ততক্ষণ সময় দিদি দাদার সাথে ছিল। ওনাকে খাবার, ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছিলো।

ভিজিটিং আওয়ার শেষ হতেই দিদি নিচে নেমে দাদার জন্য আরও কিছু ওষুধ, ইনজেকশন কিনে ওপরে পাঠিয়ে দিলো। এরপর মামা, ও দুই দিদি চা খাবে বলে আমরা হসপিটালে পাশেই একটা ছোট্ট একটা দোকানে বসলাম।

IMG_20241121_174032.jpg
"হসপিটালের পাশেই ছোট্ট চায়ের দোকান"

সেই দোকানে মধ্যে চায়ের পাশাপাশি কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, কলা সব কিছুই বিক্রি হচ্ছিলো। দিদি আমাকে খেতে বলেছিল তবে আমি কিছুই খাইনি, কারণ আমার ভিতরে তখন একটা অদ্ভুত রকমের অনুভূতি চলছিল দাদাকে দেখে।

রাস্তায় বড় বড় অ্যাক্সিডেন্ট হলেও অনেক সময় মানুষের এমন অবস্থা হয় না, আর সেখানে ঘরের মেঝেতে পড়ে গিয়ে একজন মানুষের এই অবস্থা হতে পারে, এটা ভাবতেই অবাক লাগছিলো। তবে পরে গিয়ে ততখানি ক্ষতি হয়নি, যতটা ক্ষতি সেই সময় দাদার ডেঙ্গু জ্বরের কারণে হয়েছিলো। আমরা হয়তো অনেক সময় ছোট ছোট বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দিই না, কিন্তু এই ছোট ছোট বিষয়গুলি আমাদের জীবনকে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে দেয়।

IMG_20241121_174249.jpg
"এই বিল্ডিং এর কেবিন নং-২ এ দাদা ভর্তি"

তবে দাদা নিজে ভিতর থেকে অনেক বেশি সাহসী। এই কারণেই বোধহয় এই পরিস্থিতি গুলো, এত শারীরিক কষ্ট, সহ্য করতে পারে। দিদির কাছে শুনেছি প্রথম অপারেশনের পরে দাদার যে অবস্থা হয়েছিলো, তাতে আমাদের মতো যে কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়।

তবে দাদা একজন আর্মি ছিলেন বলেই কোথাও না কোথাও নিজের ভিতরে এতো বেশি পজেটিভ এনার্জি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। আর তাই এতো তাড়াতাড়ি রিকভার করতে পেরেছেন। আর এই অপারেশনেও যে তীব্র ব্যথা, তা দাদা চুপচাপ সহ্য করছে। আর চেষ্টা করছে কিভাবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নিজের বাড়িতে, আপনজনদের কাছে ফিরবে।

সকলে হয়তো ঠিকই বলে, আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটেছে, যা কিছু ঘটছে, বা আগামীতে যা কিছু ঘটবে, সবটাই পূর্বনির্ধারিত। আমরা সেগুলো চাইলেও পরিবর্তন করতে পারি না। তা না হলে যে এক্সিডেন্টের ভয়ে দিদি কখনো দাদাকে বাইক কেনার পারমিশন দেয়নি, সেই এক্সিডেন্ট ঘরে বসে হয়ে গেলো।

IMG_20241121_183250.jpg
"ফিরতি পথে দেখলাম গুরুদুয়ারা শিখ মন্দির"

দাদাকে দেখে অনেকখানি মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম প্রায় নটা নাগাদ। ফেরার পথে একটি গুরুদুয়ারা শিখ মন্দির দেখলাম। মেট্রো ধরার তাড়া ছিলো, তাই সময়ের অভাবে ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে পরে সুযোগ হলে একবার অবশ্যই যাবো। কি সুন্দর লাগলো বাইরে থেকে। ভিতরটা নিশ্চয়ই আরও সুন্দর, আরও স্নিগ্ধ। রাস্তার অপরপ্রান্তে দাড়িয়ে ছবি তুললাম একটি।

যাইহোক বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে তারপর বুমিং এর কাজ শেষ করে নিজের পোস্ট লিখতে বসলাম। আশা করি আপনাদের দিনটা সকলের ভালো কেটেছে। আমার দাদার জন্যে সকলে একটু প্রার্থনা করবেন। সকলে ভালো থাকুন, সাবধানে থাকুন, আর ঈশ্বরকে ডাকুন, তিনি যেন সকলকে সুস্থ রাখেন। ভালো থাকবেন সকলে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

@tipu curate

;) Holisss...

--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.

Loading...

1000024150.png

Thank you so much for your support @shiftitamanna. 🙏