হেলিকপ্টার প্যারেন্ট শব্দটা আমার কাছে একদমই নতুন। শব্দটা শুনে কিছুটা কৌতূহলী হয়ে বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য গুগল মামার সাহায্য নিয়ে যা জানতে পারলাম তাকে সংক্ষেপ করলে এটা দাঁড়ায় যে ,হেলিকপ্টার প্যারেন্ট বা অভিভাবক বলতে আসলে সেইসব মা-বাবাকে বোঝানো হয় যারা তাদের সন্তানদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন বা করার চেষ্টা কররেন যাতে তার সন্তানেরা জীবনে সফলতা পায়। এক কথায় তারা সন্তানের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাদের মাথার উপর হেলিকপ্টারের মতো ঘুরতে থাকেন।
ড. হাইম গিনট ১৯৬৯ সালে প্রথম এই ' হেলিকপ্টার প্যারেন্ট ' বিশ্লেষণটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এতটাই জনপ্রিয় হয় যে ২০১১ সালে এটা ডিকশনারিতে অন্তর্ভূক্ত হয়।
আমার নিজেরও দুইটা ছেলে আছে যার কারণে আমি খুব ভালো করেই জানি যে অভিভাবক হওয়া মোটেই সহজ কোনো কাজ না।তাদের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে ভালো-মন্দ প্রতিটি বিষয় বোঝানো, প্রত্যেক বাবা-মায়ের জন্য খুবই কঠিন কাজ।
অনেক সময়ই শিশু -কিশোররা জেনে বা না জেনে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে থাকে এর কারণে তারা নিজেরা এবং অনেক সময় অন্যেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। একারণে অভিভাবদের টেনশন করাটা খুবই স্বাভাবিক । যার কারণে বাবামা তাদের সন্তানদের প্রতি কড়া নজর রাখেন। তারা তাদের খাবার ও পানীয় থেকে শুরু করে ঘুম ও জাগা সবকিছুরই যত্ন নেয়।আমি নিজেও রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় এটা অনেকের ক্ষেত্রে খুবই অতিরিক্ত হয়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে ,হয়তো স্কুলে কোন বাচ্চার সাথে ঝগড়া হয়েচে যা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু বাচ্চা তার অভিভাবককে জানানোর পর তারা এতে হস্তক্ষেপ করলেন।বিষয়টা তখন আর ছোটদের হয়ে থাকল না।
কিংবা কোনো বাচ্চাকে হয়তো একটা অংক বার বার বোঝানোর পরও না বোঝায় মা বিরক্ত হয়ে নিজেই করে দিলেন। এর চেয়েও সবচাইতে যে জিনিসটা বেশি দেখা যায় সেটা হলো বেশিরভাগ বাবা-মা তার বাচ্চাকে ঘরের কোনো কাজই করতে দেন না।
তাদের কথা তাদের সন্তান শুধু পড়ালেখা করবে। বিছানা করা, রুম গোছানো, জুতো জায়গামতো রাখা এমনকি পানির বোতলটাও ভরে এনে দেন তার মা।এটা আমার খুব ঘনিষ্ঠ অনেক পরিবারেও দেখেছি যে পানি খেতে চাইলে গ্লাসটাও বাড়ির কাজের মানুষ বা অন্যেরা এনে দেন ।
বেশির ভাগ মা-বাবাই সন্তানকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চান, সব ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের সন্তানের সুরক্ষা, এমনকি সাফল্যও নিশ্চিত করতে চান ।বাবা-মায়ের তাদের সন্তাদের এই অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়ার এ মানসিকতাকেই হেলিকপ্টারের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
শিশুকিশোরদের বিষয়ে অভিভবাকের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে কিন্তু পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে প্রতিটি শিশুর বিকাশের একটি পরিমাপ থাকে।তারা যে বয়সে যে কাজ করতে সক্ষম, তাকে সেটি নিজ থেকে করতে দেওয়া উচিত।
অনেকসময় তারা সন্তানকে যে শুধু নিয়ন্ত্রণ করেন তা নয়, তাদের সামনের সব পথও বাধামুক্ত রাখতে চান। এ ধরনের অভিবকেরা তাদের সন্তান ভবিষ্যতে কি করবে বা না করবে সেটাও নিজেরাই নির্ধারণ করে সেভাবে সন্তানকে পরিচালনা করতে চান। অনেক সময় নিজেরা সাহায্য করে হলেও সন্তানকে সব সময় নিখুঁত বানানোর চেষ্টায় থাকেন।
তবে এর ফলাফল যে সবসময় ভালো হয় এমনটা কিন্তু না। এর প্ৰভাৱ শুধু সন্তানের উপরই পরে না বরং অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিভাবকদের উপরও পরে। এই বিষয়ে আমি পরবর্তী পর্বে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।