একটি রেডিও ও ঝড়ের দিনের ভেলায়.. |স্মৃতিচারণমূলক গল্প|{১০%সাই-ফক্স, ৫% এবিবি স্কুল বেনিফিশিয়ারি }

in hive-129948 •  3 months ago 

তারিখ: ১৯.০৬.২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার।

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।
ধন্যবাদ।

ভীষণ ঝড় শুরু হলো সেদিন। কোনো পূর্বাভাস নেই, সতর্কতা নেই আর আগের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রেডিও বার্তা শুনছিলাম। টানা টানা কন্ঠস্বরে একটি সংবাদ পাঠক হালকা মাঝারি বৃষ্টির কথা বলছিলেন, সর্বশেষ সংবাদ ও মোবাইল স্ক্রিনে দেখতে পেয়েছিলাম বৃষ্টিহীন একটি উজ্জ্বল দিনের সম্ভাবনা।

pexels-photo-5211569.jpeg
Src

সেই ছোটবেলায় যখন এখনকার মতো এন্ড্রয়েড টেকনোলজির প্রতুলতা ছিল না, দ্বিতীয় জেনারেশনের মোবাইল ল্যান্ড টেলিফোনের সেকেলে আমলকে পাশ কাটিয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করেছে - তখন রেডিও বেতারে কান পেতেই চোখ বুজে নানা বিনোদন, সংবাদ, দেশ বিদেশের খবরাখবর, রাজনীতি - সমাজনীতি, অর্থনীতি, গ্রাম -শহরের খোঁজখবর শোনার দিকে পূর্ণ মনোযোগ বজায় থাকতো।

ছোটবেলায় মফস্বলি পরিবেশ আর ইট-পাথরের ঢাকা ব্যস্তসচল আঙিনায় বেড়ে না ওঠার পারিপার্শ্বিকতায় ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দিনের কার্য শুরু হতো আর বেশি রাত্তিরে সময় গড়ানোর সুযোগ পেত না। বাড়ির চৌহদ্দি পেরোতে শুরু করলেই দেখা যেত ঝোপঝাড়ের হালকা তরুলতায় ঘেরা অরণ্যের নিশ্চুপ নীরবতা বিরাজ করছে, সন্ধ্যা নামার সাথে সেথায় অন্ধকার নেমে আসতো।

সন্ধ্যার পরে নানা হাটে ঘাটে মাঠে মানুষের কাজকর্ম শেষ হতে শুরু করলে তারা কাঁচাপাকা রাস্তার পাশ ধরে হেঁটে,বা মোটর যানবাহনে করে বাড়ি ফিরতে শুরু করতো। রাতের বেলা ঘরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত, অল্পেই তুষ্ট মানুষগুলো রাতকে উপভোগ করার সুযোগ পেত। ইলেক্ট্রিসিটি আর বিজলী বাতি সবখানে ছেয়ে গেলেও কুপিবাতির চল তখনো উঠে যায় নি আর সলতে পাকানো হ্যারিকেনের আলোর অভ্যাস আর ভালোলাগা বিলীন হয়ে যেতে শুরু করে নি।

সে দিনগুলোতে রাত্তির আটটা বাজা শুরু করা মানেই হলো নিশুতি রাতের আর বেশি দেরি নেই, সবাই নিজেদের কাজকম্ম সেরে খাবার দাবারের এন্তেজাম চুকিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার উদ্যোগ নিত। আমার লেখাপড়ার আর পাঠশালার দিন গুছিয়ে বিকেলবেলা প্রকৃতিঘেরা রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়ে, পাড়ার বাকি ছেলেদের সাথে জামগাছ, বটগাছ, চালতেফুল, লিচুফলের সন্ধান করার মধ্য দিয়েই সময় কেটে যেত।

রাতের বেলা যে বেতার যন্ত্রটি ছিল তার বয়েস এক যুগ হয়েছিল তখন। মনে পড়ে সে সময়ে পুরো গ্রামগুলোর মধ্যে প্রথম আধুনিক রেডিও নিজ বাড়িতে নিয়ে আনা হলো আর আমার ওপর তার দেখভালের ভার পড়তো। পাড়ার ছেলে বুড়োরা আমার নিজ বৈঠকখানায় আসতো, নানা কথাবার্তা, চা মুড়ি পানের ফুরসতের মধ্যে রেডিও বার্তায় প্রতি ঘন্টার শেষের সংবাদে নিজেদের কৌতূহল মিটাতো।

pexels-photo-11175774.jpeg
Src

রাতের বেলা আমার কল্পনার রাজ্যে বিরাজ করতো সেই রেডিওটায় পরিবেশিত সাময়িকী যা নানা বিনোদনপর্বে শেষ হতে থাকতো। কখনো দেখতাম গল্পের আসর আবার পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ, ধারাবিবরণী আর নাটকীয়তার পুরোটা জুড়ে যে সমাজ জীবন বয়ে চলেছে তার প্রতিফলন - এসব কল্পনার রাজ্যে দারুণভাবে বিমোহিত করে চলতো।

যেহেতু রেডিও এসেছিল টেলিভিশনের আগে, সে মাধ্যমটায় কোন ছবি বা দৃশ্যমান উপস্থিতি ছিল না - তার বিপরীতে চোখ বন্ধ করে কন্ঠস্বরের বা সাউন্ডের মাধ্যমে শুনতে পারার মধ্যে একটা কল্পনার মিশেল ছিল। সময়েট সাথে যা এখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে ; সে দিন এখন আর নেই তবে তার স্মৃতির ধুয়া রয়ে গেছে।

সে রাতের পর সকালের ঝড় বেশ কয়েক ঘন্টা চললো। দুপুরের দিকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করলো আর তখনো পুরো জেলায় কিংবা দেশে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানতে পারার কোন সুযোগই অবশিষ্ট ছিল না। কারণ আবার রাতে একটি পূর্ণাঙ্গ সংবাদ পরিবেশিত হবে।

সেই রেডিওটি চার্জ দিয়ে রাখার সুযোগ থাকতো, ব্যাটারির ক্যাপাসিটি অনুসারে কখনো ভরা এক চার্জে পুরো সপ্তাহ চলতে পারতো। আবার কখনো তিন -চারদিনের মাথায় অত্যধিক বাজানোর ফলে শূন্যে নেমে আসতো। দুপুরের পর বিকেলের দিকে বাইরে বেড়িয়ে পড়লাম দুর্যোগ পরবর্তী অবস্থা দেখার জন্য।

কিছু গাছ উপড়ে পড়ে আছে আবার টিনের ছাউনি আস্ত নেই, ফসলের মাঠ আর নদীতে অতিরিক্ত পানি আর মাছেদের ঝোঁকে মনে হলো হঠাৎ কোন এক পরীরাজ্যের ঢল নামতে শুরু করেছে যার থেকে রেহাই নেই। এদিকে নৌকায় মানুষের পারাপারের সুযোগ বাড়লো আর নানা দুর্যোগ, জনজীবনে ভোগান্তির মাঝেও আমার তৎকালীন দূরন্ত মনে পুলক জেগে উঠলো।

free-photo-of-dramatic-sky-at-dusk.jpeg
Src

সেই যে এডভেঞ্চার আর নৌকায় করে ভেসে যেতে পারার একটি ছল, এই সুযোগো মাঝি ভাইদের সাথে সখ্যতা গড়ে সালতি বা একটি ডিঙিতে করে নিজেই বেরিয়ে পড়লাম। কখনো গাছের সারি বিলে, ঝিলে মাছরাঙার পাল উদয় হয়েছে আর কয়েকটা রুই প্রজাতির মাছ আমদানী হয়েছে যা দেখেই বুঝতে পারলাম, সামনে আরো নতুন রোমাঞ্চ অপেক্ষায় আছে।

অন্তত কিছুদিন যতক্ষণ পানি না নেমে যেতে শুরু করে।

[চলবে]....

নিজের সম্পর্কে কিছু কথা


Blue Abstract Watercolor Blank Template Instagram Story_20240516_152026_0000.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!