তারিখ : ২৪.০৫.২৪ খ্রীস্টাব্দ।
সুপ্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ,
আপনাদের সবাইকে মহতী এই বাংলা ভাষায় নিবেদিত বিশেষ ব্লগটিতে স্বাগতম জানাই৷ সবাই সুস্থ, সুন্দর ও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের পোস্ট লেখা শুরু করছি।
মানুষের জীবনে কিছু বিষয় সবসময় নিজের হাতে থাকে না, এরকম ভাগ্য লেখা ছোটকাল থেকেই নিয়তির বিধানে বাঁধা থাকে। যেহেতু চারপাশের পরিবেশ, সময়ের পথচলা, সুবিধা অসুবিধা কিংবা ইচ্ছেমতে জীবনকে সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার উপকরণের অভাব থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে এসবই প্রকৃতির ইচ্ছা আর অনেকটা ভাগ্যের ওপর গড়ে তোলা থাকে।
আমি একটি বিষয় নিয়ে বেশ অনেকটা সময় ভাবছি আর কখনো আফসোস হয়েছে, তাদের প্রতি যারা জীবনে মূল জিনিসের সবকটি পায়নি। সুযোগের সমতা সব জায়গায় সমান নয়, আর সবার জন্য বেঁচে থাকা কিংবা উন্নতি করার লড়াইটা একরকম নয়। ধনী -দরিদ্রের বৈষম্য তো আছেই, এছাড়া পরিবেশ আর কখনো সমাজ - রাষ্ট্রীয় পরিসরের বৈরিতা তো জীবনকে বিষিয়ে তুলছেই।
কিছুদিন আগে যখন নদীর পাড়ের বেদে উপজাতিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, জীবন পরিচালনা ও নির্বাহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছিলাম, তখন দৃষ্টিগোচরে এলো অনেক কিছু যা আগে কখনো দেখি নি, হয়তো সেসব পর্যবেক্ষণ চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। হয়তোবা বোঝার শক্তি তেমন প্রবল ছিল না।
পৃথিবীর ঘটে যাওয়া কয়টা ঘটনাই বা আমাদের ভাবতে শেখায় ?
ভ্রমণের ছলে সেদিন দেখেছিলাম, কিভাবে জলের স্রোতের সাথে একাট্টা হয়ে তারা জটিলতায় দিন পার করার চেয়ে নদীবিধৌত এলাকাগুলো বেছে নিয়েছে। তাদের ভালোলাগা আর ভাবনার মধ্যে ছিল কিভাবে সহজ সরল উপায়ে বেঁচে থাকা যায়, প্রকৃতি তো নিজের মতো করে বেড়ে উঠছেই, তাতে জীবনকে একটি স্রোতশীল ক্যানভাসে ঠাঁই দিয়ে সুখ লাভ করা যায়।
তারপর যখন বাড়ি ফিরে এলাম তখন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চিন্তা করছি, কিভাবে সমাজ ও মূলধারার জীবনে সংস্কৃতিতে, সামগ্রিক জীবনাচরণে অন্ত্যজ এসব শ্রেণির মানুষের কথা উহ্য থেকে গেছে। বলা হয় নি তাদের সুখ দুঃখ আশা ভরসা, কিংবা কিভাবে তারা অনেক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছে।
শুধু কি বেদে উপজাতিরাই, রাস্তার পাশের যে জায়গাগুলো খালি থাকে, বাস টার্মিনাল কিংবা খেয়াঘাটের উন্মুক্ত স্থানে সরিয়ে নেয়া যায় এমন হালকা জিনিস দিয়ে কোনরকমে ছাউনি দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়ে নিদারুণ দুঃখবেদনায় দিনাতিপাত করছে।
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, খাবারদাবারের দিক দিয়ে অবহেলিত, একটি স্থির পরিবার নেই -- আরো কত কি !
সবচেয়ে বড় বিষয় একটি স্থির পরিবার থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আছে আর অর্থনৈতিক দিকটা ভঙ্গুর। যে শিশুটি ছেঁড়া জাজিমে শুয়ে থাকে, একটি বাটিতে করে ভাত, ছোটমাছ আর ডাল দিয়ে কোনমতে দুপুরের খাবারের দেখা পায় বেলা দুবেলা প্রতিদিন ; সে নিশ্চয়ই দামী খেলনা না পেয়ে মা -বাবার প্রতি রাগ করে বসা শিশুটার থেকে আলাদা, অন্তত ভাগ্যের অবহেলায় , তাই নয় কি ?
পরিশেষে, এটাই বলতে চাই, সবার ভাগ্য একটি নির্দিষ্ট নিয়মে গড়া নয়। পরিবেশ আলাদা, সাথে যে পারিপার্শ্বিকতার উপাদান যেটা অনেকটা সময় ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে দেয় না, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারও একটি ভূমিকা থাকে।
ছাদখোলা আকাশ আর দারিদ্র্যতা এসব শিশুদের জীবনকে খুব প্রকটভাবে বুঝতে শেখায়, কি করতে হবে আর যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয় তাহলে কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে, তা ভেবে উঠে যখন অনেকদিন পার হয়ে যায়।
দুমুঠো অন্নের জন্য সংগ্রাম আর অলসতায় ডুবে থেকে টম এন্ড জেরি কার্টুন দেখে সময় কাটানোর মধ্যে অনেৃ তফাত। যে শিশুগুলো বাস্তবতার কাছে হার মেনে রোদবৃষ্টিঝড় তেয়াক্কা না করে সংগ্রামে জয়ী হওয়ার বাসনা রাখে - তারা একদিন ঠিকই নিজেদের জীবনে উন্নতি নিয়ে আসে।
একটিতে আছে পূর্ণিমার চাঁদের আলো, অন্যটিতে থ্রিডি গেমস, এনিমেশন আর রিমোটকন্ট্রোল খেলনা। এভাবেই দুটি বিপরীতধর্মী জীবনপ্রবাহ এগিয়ে যায় আর বেড়ে ওঠে নানা অভিজ্ঞতায়। শেষের খেলায় ফেলে থাকে স্মৃতি যা যুগ থেকে যুগান্তরে বয়ে যায়....
ধন্যবাদ, ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য। ভালো থাকুন আর নিজের মতামত জানাতে পারেন কমেন্টস বক্সে। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।
💐💖✒️✅
বেশ দারুণ চিন্তাধারা নিয়ে আজকের পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। অনেক অনেক ভালো লাগলো আপনার সুন্দর এই চিন্তা ধারা দেখে। আসলে আমাদের সবার যদি মন মানসিকতা সুন্দর হয় তাহলে সহজে সমাজ বদলে দিতে পারি। আর এটা আপনি ঠিক বলেছেন সবার ভাগ্য কখনো এক নয় পরিবেশ যেমন এক নয়, তেমন পরিস্থিতি এক থাকে না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এমন গঠনমূলক প্রশংসা করার জন্য।
তবে এটা সত্য যে, সমাজের সবাই যদি তাদের ভাবনায় দুখী মানুষের এই সমস্যা নিয়ে আসতো, তাহলে বৈষম্য থাকতো না।
সামষ্টিকভাবে যদি দেশের মানুষ সচেতন হয়, বিত্তশালীরা এগিয়ে আসে, তাহলে ভালো কিছু হবে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit