জাপানি উপকথা : "বীর মোমোতারো" - পর্ব ১০

in hive-129948 •  6 months ago 


YNK1071784_Momotaro-at-the-gates-of-the-state-of-Onigashima-devils-board-2-from-the-series-Tales-of-Momotaro-Momotaro-monogatari.jpg

Copyright Free Image


পরের দিন । অতি প্রত্যুষে সূর্যোদয়ের কিছু পূর্বে মোমোতারোরা তাদের অভিযান শুরু করলো । ছোট্ট ডিঙি নৌকো, তাতে ঠাসাঠাসি করে মোমোতারো আর তার তিন সঙ্গী উঠে পড়লো। নৌকোয় চড়েই কিন্তু মোমোতারো মাঝিকে দেওয়া তার কথা রাখলো । স্বর্ণমুদ্রার থলিটি সে মাঝিকে দিয়ে দিলো । স্বর্ণমুদ্রায় বোঝাই থলিটি পেয়ে মাঝির ভয় ডর সব কোথায় সব উবে গেলো ! দারুন উৎসাহে সে তখন নৌকো বাইতে লাগলো ওনিদের দ্বীপের উদ্দেশ্যে ।

বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে নৌকো চললো মাঝ সমুদ্রের সেই রহস্যময় ভয়াল দ্বীপের উদ্দেশ্যে । এখানকার সমুদ্র তুলনামূলক কিছুটা শান্ত । তার ওপর অনুকূল হাওয়া আর স্রোতের কারণে নৌকো খুব তাড়াতাড়ি ভেসে চললো দ্বীপের দিকে । অবশেষে দূর থেকে অনিগাশিমা নামক ওনি দস্যুদের সেই দ্বীপ দৃষ্টিগোচর হলো । পাতলা কুয়াশায় মোড়া, তাই দূর থেকে খুব স্পষ্ট করে কিছুই দেখা গেলো না । ক্রমে বেলা বাড়তে কুয়াশা কেটে যেতে লাগলো ।

দ্বীপের কাছাকাছি সমুদ্র বেশ বিক্ষুব্ধ । মাঝি বেশ কায়দা করে নৌকো তীরে ভেড়ালো । এখান থেকেই ওনি দস্যুদের সর্দারের প্রাসাদের ঝকঝকে সাদা চুড়োটা বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । বহুকাল রাজার সৈন্যরা আর আক্রমণে আসেনি, আর তাই দস্যুদের এখন পোয়াবারো । ভীষণ বেপরোয়া ভাব এসে গিয়েছে তাই তাদের মধ্যে । কাউকে বড় একটা তোয়াক্কা করে না তারা । তাদের দ্বীপে চুপিসাড়ে কেউ যে হানা দিতে পারে তা তাদের কল্পনার বাইরে ।

দ্বীপের উত্তর দিকে বেশ বড় আর উঁচু একটা টাওয়ার নির্মাণ করেছে দস্যুরা । এই টাওয়ার থেকেই চলে বার সমুদ্রে নজরদারির কাজ । দূর থেকে রাজার যুদ্ধজাহাজের মাস্তুল দেখা মাত্রই দস্যুরা সতর্ক হয়ে যায় । কিন্তু, মোমোতারোদের ক্ষুদ্র ডিঙি নৌকো দস্যুদের দৃষ্টিগোচর হলো না । হওয়ার কথাও নয় । এত ক্ষুদ্র নৌকো দূর থেকে দেখার প্রশ্নই ওঠে না । ফলে একদম বিনা বাধায় দস্যুদের দ্বীপে পৌঁছলো মোমোতারো ।

মোমোতারো সঙ্গীসাথীদের নিয়ে দ্বীপের মাটিতে পা রাখা মাত্রই মাঝি নৌকো ঘুরিয়ে ফেরবার পথ ধরলো । তার তখন হাতে পায়ে কাঁপুনি ধরে গিয়েছে, বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে ।

মোমোতারো কিন্তু একটুও তাড়াহুড়ো করলো না । সে বড় বড় পাথরের খন্ড, টিলা আর ঝোপ-ঝাড়ের আড়ালে আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে দস্যু সর্দারের প্রাসাদের একদম কাছাকাছি চলে এলো । তাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করলো তার তিন ভয়াল সঙ্গী । কুকুরটা তৃণভূমি আর ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে সেঁধিয়ে রইলো । বাঁদরটা খুব উঁচু একটা গাছের মগডালে চড়ে প্রাসাদের দিকে নজর রাখলো । আর মোমোতারোর কথা মতো হাঙরমুখো পাখিটি নিঃশব্দে উড়ে গিয়ে প্রাসাদের অনেকটা উপরে উঁচু থেকে চক্কর দিতে লাগলো ।

লড়াইয়ে নামার আগে প্রাসাদের হালহকিকত, সৈনিকদের অবস্থান, কতজন প্রহরায় রয়েছে, নিরাপত্তার কোথায় ফাঁক আছে - এসব সম্পর্কে জানা অতীব জরুরি । তা না হলে নিখুঁত সামরিক অভিযানের প্ল্যান করা যাবে না । যেহেতু তারা মাত্র সংখ্যায় চার জন তাই ঝটিতি আর নিঃশব্দ আক্রমণ করে দস্যু সর্দারকে বন্দী করার চেষ্টা করতে হবে ।

[ক্রমশঃ]

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অতঃপর তাহলে মোমোতারো ওনিদের দ্বীপে পৌঁছাতে পারলো এবং তাদের পরিকল্পনা মত, কাজ করার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো। বেশ দারুণ উত্তেজনা করছে পরের পর্বের অংশটুকু জানার জন্য। অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।

মোমোতারো অবশেষে তার তিন সঙ্গীকে নিয়ে ওনি দস্যুদের দ্বীপে পৌঁছাতে পারলো তাহলে। দেখা যাক এবার মোমোতারো প্ল্যান মোতাবেক কিভাবে এগিয়ে যায়। তবে আমার বিশ্বাস মোমোতারো এই যুদ্ধে অবশ্যই জিতবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মোমোতারো এই যুদ্ধে জয়ী হবে। তারপরও দেখি মোমোতারোর প্লান অনুযায়ী কতটুকু তারা এগোতে পারে, পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।