ভূতের গল্প
অনেকদিন আগের ঘটনা। গল্পটি আমার এক দাদির মুখ থেকে শোনা। আগেকার সময় নাকি দৈত্য এর ভয় ছিল আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে। আর এই দৈত্যের ভয়ে মানুষজন রাতে চলাচল করতো না। মানুষজন আরো ভীত থাকতো মাছ জাতীয় বাজার করে সন্ধ্যার আগেই যেন বাড়িতে ফিরে, মাছ নিয়ে রাতে চলাচল যেন না করে। এলাকায় ঘন বন জঙ্গল
ঘরবাড়ির সংখ্যা খুবই কম। অনেক দূরে দূরে ঘরবাড়ি। এজন্য ভয়ের প্রবণতা আরো বেশি কাজ করতো। ঠিক এমনই একটা ঘটনা ছিল। একটি গ্রামের মোড়ল বা মাতব্বর বা জমিদার বাজারে গেলেই বড় মাছটা নিজে নিতো। বাজারে এভাবেই বলা ছিল, বাজারে সবচেয়ে বড় মাছটা তার জন্য যেন রাখা হয়। সে বা তার লোক বাজারের উপস্থিত না হলে তার বাড়িতে দিয়ে আসা হতো। তাই যেদিনই বাজারে হাট বসতো সে হাটে যে কোন মাছ বড় সাইজের হলে সেটা এই মোড়লের জন্য রাখা হতো। গায়ের মোড়ল যেমন প্রভাবশালী, তেমন জমি জায়গা সম্পন্ন এবং ছিল লাঠিয়াল বাহিনী। কিন্তু এলাকায় বেশি মানুষের বসবাস না থাকায় তার অধিপত্য একটু বেশি বিস্তার করেছিল। আর তারই প্রভাবে সে দৈত্য দানবের ভয় মনে করত না।
একদিন বাজারের হাটে বড় একটি ইলিশ জুটেছে। সবাই জানে বড় মাছটা সেই মোড়লের জন্য রাখতে হবে। হঠাৎ অচেনা এক ভয়ঙ্কর কুৎসিত চেহারার মানুষ সেই মাছটা দেখেই জেলেকে বলেছিল,মাছটা আমাকে দাও। কিন্তু সেই জেলে মাছটা দিতে রাজি হলো না। সে একাধিকবার বলেছিল এই মাছটা আমি মজা করে খাব, মাছটা আমাকে দাও। জেলে বলেছিল এই মাছটা যদি আমি আপনাকে দেই তাহলে এলাকার মোড়ল আমাকে বধ করতে পারে। বাজারে মাছটা ওঠার আগে যদি আপনি আমার কাছে নিতে চাইতেন, তাহলে দিতে পারতাম কিন্তু বাজারে এনে ফেলেছি সবাই দেখে ফেলেছে। সে বলল কোন কথা বুঝি না মাছটা আমাকে দাও। আজকে বাজারের বড় মাছটা আমি খেতে চাই। হাট বাজারের লোকজন কিছুতেই মাছটা সেই কুৎসিত চেহারার মানুষটিকে দিতে চাইলে না। সবাই অপমান করে তাকে বাজার থেকে তাড়িয়ে দিল।
বিকেল মুহূর্তে মোড়ল বাজারে গেল। এরপর সে বড় মাছটা নেওয়ার সময় জানতে পারলো অচেনা একজন মানুষ এসে এই মাছটা চেয়েছিল। কিন্তু জেলেরা তাকে দেয়নি। অচেনা কুৎসিত মানুষটাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে যাওয়ার আগে মানুষটা বলে গেছে, এর পরিণাম খারাপ হবে। সবকিছু শোনার পর মোড়ল বলল, সেই মানুষটাকে যেখানে পাবে ধরে এনে আমার হাতে দিবে। বাজারের লোকজন মোড়লের কথায় সাড়া দিল। অনেকেই অনুভব করল হয়তো মানুষটাকে যে ধরে দিতে পারবে মোড়ল তাকে বড় অংকের টাকা দেবে। তাই সবাই যে যার মত নজর রাখতে থাকলো সেই মানুষটাকে কোথায় পাওয়া যায়। এরপর মোড়ল সেই বড় মাছটা একজন শ্রমিকের হাতে দিয়ে একই সাথে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। বাড়ির দিকে যাওয়ার মুহূর্তে বিশাল এক বন জঙ্গল পাড়ি দিতে হয়। পাহাড়ি এলাকায় পথঘাট তেমন নেই। কোনরকম চলার পাওটা পথ। আর তারই মধ্য দিয়ে নিজ গ্রামে ফেরা। হঠাৎ বিশাল এক বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকার মুহূর্ত অতিক্রম করে চলছে তারা। মোড়ল তার শ্রমিকের বললো "বড় মাছের মাথা আমার ছেলেটা খুব পছন্দ করে। এই মাছ টা দেখে আমার ছেলে অনেক খুশি হবে। আজকে বাজারে অনেক বড় মাছ জুটেছে"। ঠিক এমনই গল্প করতে করতে আসছিল তারা।
হঠাৎ বাঁশ বাগানের উপর থেকে হঠাৎ একটা শব্দ আসতে থাকলো "মাছটা আমাকে দিয়ে যা"। তারা এই বিষয়টা কানে নিচ্ছিল না। তারা জানে একটু সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন কিছুতে সমস্যা করে। কিন্তু মোড়ল লোকজন সাথে নিয়ে চলে তাই সাহস মনের মধ্যে সবসময়। আরো এগিয়ে যেতে জেনো বাঁশ বাগানে বিকট শব্দ হয়ে ভয়ংকর ভাবে বলতে থাকল 'মাছটা আমাকে দিয়ে যা'! এতে মোড়ল ভয় পেলেও বিষয়টা কানে করলো না। তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। পিছন থেকে বলতে থাকল মাছটা দিয়ে যা নাই পরিনাম খারাপ হবে। সেখানে তারা কোন মানুষের দেখা পেল না, অনুভব করল কোন আত্মা অথবা ভূত-পেত্নী এমনটা বলছে। কিন্তু তারা মাছটা কিছুতেই রেখে আসলো না। এরপর বাড়িতে এনে মোড়ল তার বিবির হাতে দিয়েছে মাছটা রান্না করতে। রান্নাবান্না হয়ে গেছে খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেছে। রাতে তারা যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, ঠিক ওই মুহূর্তে মোড়লো ঘুমিয়ে আছে। তার কানের কাছে একটাই শব্দ মাছটা কোথায় রেখেছিস, মাছটা আমাকে দে। মোড়ল ভয়ে চমকে উঠলো। গভীর রাত, রাত দুপুরে কিভাবে বলছি আবার। সন্ধ্যার মুহূর্তের সেই শব্দটা মনে পড়ে ভয় পাচ্ছে নাকি। এরপর মনে হল জানালার পাশ থেকে ভয়ংকর সুরে একই কথা বলছে কেউ। এই মুহূর্তে মোড়ল ভয় পেয়ে গেল। সে উত্তর দিল মাছ রান্না হয়ে গেছে। জানালার পাশ থেকে বলল তাহলে মাছের মাথাটা দে। তার বউকে বলল মাছের মাথা টা কোথায় রাখা হয়েছে। সে বলল রান্না করে খাওয়া হয়ে গেছে। প্রশ্ন করল মাথাটা কি করা হয়েছে। তার বউ বলল মাথাটা ছেলেকে দিয়ে খাওয়ানো হয়ে গেছে।
তখন মোড়ল বললো মাথা নেই। রান্না করে খাওয়া হয়ে গেছে। বাইরে থেকে প্রশ্ন আসলো 'মাথা কে খেলো'? তখন তারা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল তাদের ছেলেকে খেতে দেয়া হয়েছিল। বাইরে থেকে সেই কণ্ঠ রাগের আগে বলল তোকে বলেছিলাম না মাছটা আমাকে দিয়ে যা, মাছটা না দিয়ে গেলে তার পরিণতি খারাপ হবে। আর ঠিক এভাবেই ভয়ঙ্কর কণ্ঠস্বর ভয়ভৃতির কথা বলে থেমে গেল। এরপর মোড়ল ও তার স্ত্রী ভয়তে ভয়তে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে উঠে লক্ষ্য করছে অনেক বেলা হচ্ছে কিন্তু তার ছেলে ঘুম থেকে উঠছে না। তার ছেলের নাম ধরে ডাকা হচ্ছে কিন্তু ছেলে দরজা খুলছে না। তাদের মনের মধ্যে প্রথমে তেমন কোন চিন্তা না আসলেও পরবর্তীতে ভয় আসতে থাকলো, ছেলে কেন দরজা খুলছে না এত ঘুমাচ্ছে কেন? অনেক পর যখন এত ডাকার পরেও ছেলে ঘুম থেকে উঠছে না। তারা লোকজন দিয়ে দরজা ভাঙলো।
দরজা ভেঙে রুমে প্রবেশ করে দেখলো বিছানার উপর ছেলেটা ঘাড় ভাঙ্গা অবস্থায় রক্ত বের হয়ে মরে পড়ে আছে। এরপর তারা বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করে বুঝতে পারল হয়তো কোন দৈত্য দানব অথবা জিন ভূত তাদের পিছু লেগেছিল এবং এই ক্ষতি করল।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | শোনা গল্প |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
যখন বারবার বলা হয়েছিল মাছের মাথাটা দিয়ে যা, না হলে তোর ক্ষতি হবে। তখন মাছের মাথাটা দেওয়া উচিত ছিল। বাড়িতে আসার সময় যখন বলেছিল তখনও যদি দিত তাহলে আজকে সকালে উঠে তার ছেলের এত বড় সর্বনাশটা তা দেখতে হতো না। আমি পরে যতটুকু বুঝলাম এটা হয়তোবা কোন ভয়ংকর জিন ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাইয়া, তবে মানুষ তো ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তার মাশুল যে এত বড় হবে কে জানত।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে খুবই সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন। আসলে ভূতের গল্প সেই ভয়ঙ্কর। আপনার এই গল্প পড়ে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় যখন দাদির কাছে ভূতের গল্প শুনতাম সত্যি খুব ভয় লাগতো। তবে আপনার এই গল্প পরে জানতে পেলাম সেই বড় মাছের মাথা চেয়েছিল। বারবার চেয়েছিল তাই না দেওয়ায় তার এমন দুর্দশা সত্যি ভয়ংকার গল্প।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় এমন ভয়ংকর গল্প আমিও নানার মুখে নানীর মুখে দাদার মুখে দাদীর মুখে শুনেছি। আগেকার সময়ে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটতো যে সমস্ত বিষয়গুলো এখনো হয় না। কারণ আগে এই সমস্ত জিনিসের ভয় বেশি ছিল। তবে কতটা বাস্তব জানা নেই কিন্তু এমনটা হতো এটা বিশ্বাস করি। কারণ তখন জনসংখ্যা কম ছিল আর এই সমস্ত ভয় ভীতি বেশি ছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আমি এটা এমনটাই শুনেছি
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কি ভয়ংকর গল্প আপু পড়তে গিয়ে আমি তো ভয়ে অস্থির। ভূতের কাছে যদি মোরল মাছটি দিয়ে দিতো তাহলে আর তার ছেলের এই পরিনতি হতো না।আগের দিনে এই রকম ভূতের উপদ্রব ছিলো অনেক।ভালো কিছু বাজার থেকে রাতে আনলেই নাকি পিছু নিতো ভুত।আর ভুতেরা না কি মানুষের ঘার মটকে দিতো বেশি ভাগ। ধন্যবাদ ভয়ংকর গল্পটি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আপু এই ঘটনাটা ঠিক তেমনি
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আজ আপনি খুব ভয়ংকার একটি ভূতের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার শেয়ার করে বলবো যে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ছোটবেলায় আমিও এমন ভয়ংকর গল্প আমার নানা নানির মুখ থেকে শুনেছি। আগেরকার দিনে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটতো যেগুলা এখন আর হয় না। ধন্যবাদ ভয়ংকর গল্পটি উপস্থাপন করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ আগে এমন ঘটনা ঘটত
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জ্বি আমিও কমবেশি শুনেছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit