চলচিত্র রিভিউ : বালা

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

নমস্কার,

বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি ঈশ্বরের কৃপায় আপনারা সকলে ভালো আছেন। আপনাদের আশীর্বাদ ও ভালোবাসায় আমি ভালো আছি। আজ আপনাদের সামনে আমি একটি সিনেমার রিভিউ করতে চলেছি। আজকের সিনেমাটি হলো ৮-ই নভেম্বর ২০১৯ সালে রিলিজ হওয়া বালা। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।


প্রাপ্তি : YouTube


চলচিত্র
বালা
পরিচালক
অমর কৌশিক
অভিনয়
আয়ুষ্মান খুরানা, ভূমি পেন্ডেকার, য়ামি গৌতম
চিত্রনাট্য
নিরেন ভাট
মুক্তি
৮-ই নভেম্বর, ২০১৯
দেশ
ভারত
ভাষা
হিন্দি
সময়
১৩৩ মিনিট

পটভূমি

গল্পের সূত্রপাত হয় ২০০৫ সালের কানপুরের এক স্কুলে। যেখানে কিছু ছাত্ররা এক টাকওয়ালা শিক্ষককে উত্যক্ত করে আর তার নেতৃত্ব দেয় বালমুকুন্দ শুক্লা নামের এক ছাত্র। বালার ক্লাসেই পড়ে তার বান্ধবী লতিকা ত্রিবেদী যার গায়ের রং শ্যামলা বলে বালা তাকে নানা বাজে কথা শোনায়।

1.png

স্কিন শট নেওয়া হয়েছে : Hotstar


১৪ বছর পরের ঘটনা, বালার মাথার চুল প্রায় উঠে গিয়েছে। সে ফেয়ারনেস ক্রিমের সেলস ম্যানের কাজ করার পাশাপাশি কিছু রেস্টুরেন্টে গিয়ে কমেডি শো করে। বালা তার কোম্পানির ফেয়ারনেস ক্রিমের ওয়ার্কশপে গিয়ে শ্যামলা বর্ণের মেয়েদের তার কোম্পানির ক্রিম লাগিয়ে পাঁচ সপ্তাহে ফর্সা হওয়ার কথা বলে। সেখানে লতিকাও উপস্থিত থাকে। লতিকা নিজে উকিল হয়ে গেছে। লতিকা বালার কথা শেষ হওয়ার পর স্টেজের কাছে গিয়ে বালার টুপি উল্টিয়ে দিলে বালার টেকো হওয়ার কথা সর্ব সন্মুখে বেরিয়ে যায়। ফলে বালা কোনো ক্রিমের সেলস করতে পারে না। সেলস করতে না পারার কারনে বালাকে তার ম্যানেজার বকাবকি করে অফিসের কাজে লাগিয়ে দেয়।

2.png

স্কিন শট নেওয়া হয়েছে : Hotstar

বালা তারপর নাপিতের কাছে গেলে নাপিত তাকে উপায় হিসেবে পর চুলা পড়ার কথা বলে। সেখানে বচ্চন ভাইয়া নামে এক ব্যক্তি বালার চুল ফিরিয়ে আনার কথা দেয়। তারপর চুল ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় শুরু হয় নানান টোটকা। কিন্তু সবেতেই ব্যর্থতা আসে। ফের বালাকে তার বাবা একটা পরচুলা উপহার দেয়।


বালা পরচুলা মাথায় দিয়ে পুনরায় তার হারিয়ে যাওয়া সাহস ফিরে পায়। ঠিক তখনই বালার হাতে সুযোগ আসে তার ক্রাশের সাথে দেখা করার, যে কিনা তাদের কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বসাডর পরী মিশ্র। পরী মিশ্র বালার কোম্পানির হয়ে বিজ্ঞাপন তৈরীর সময় বালা তার সাথে পরিচয় করে।

3.png

স্কিন শট নেওয়া হয়েছে : Hotstar

পরিচয় হওয়ার পরে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। তারপর তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ের কিছু দিন আগে, বালা নিজের বিবেকের তাড়নায় পরীকে তার টাকের কথা জানিয়ে একটি মেসেজ পাঠায়। কিন্তু ভুলবশত মেসেজটি অন্য নাম্বারে চলে যায় এবং বালার টাকের কথা পরীর অজান্তে থেকে যায়। বালা বুঝতে পারে যে পরী তার টাকের বিষয়টা মেনে নিয়েছে এবং তারপর তারা বাড়ির সর্ব সম্মতিতে বিয়ে করে নেয়।

বিয়ের পরদিন সকালে বালার টেকো হওয়ার আসল সত্যটা বেরিয়ে আসে। যা দেখে পরীর কান্নাকাটি করে বালার বাড়ি ছেড়ে নিজের বাপের বাড়িতে ফেরত চলে যায়। তারপর বালা তার ডিভোর্সের কেস লড়ার জন্য লতিকার কাছে গেলে লতিকা কেস লড়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শেষমেষ বালা বুঝতে পেরে কেস না লড়ে পরীকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।


কিছুদিন পরে বালা আবার সেই ফেয়ারনেস কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবে কাজে যোগ দেয়। তাদের এক ওয়ার্কশপে গিয়ে বালা শ্যামলা রঙের মেয়েদের আবার তাদের কোম্পানির ক্রিমের উপকারিতা এবং গায়ের রং ফর্সা হওয়ার উপকারিতা বোঝাতে থাকে। তখন বালার বিবেকে বাঁধে।। যায় ফলে সে নিজের পরচুলা খুলে সবার সামনে নিজের টাক বের করে দাঁড়িয়ে পড়ে। ওয়ার্কশপে আসা সবাই বালা টাক দেখে হাসাহাসি শুরু করে। বালা তখন বুঝতে পারে যে সে লতিকার প্রেমে পড়েছে। তারপর বালা তার চাকরি ছেড়ে লতিকার বাড়ি আসে। সেখানে সে দেখতে পায় লতিকার বিয়ের জন্য আশীর্বাদ চলছে।


বেশ কিছুদিন পরে বালা আবার একটা কমেডি শোতে উপস্থিত হয়। সে এখন তার টাক নিয়েও শান্তিতে আছে। বালা বুঝতে পেরেছে যে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য সবকিছু নয়।


স্কিন শট নেওয়া হয়েছে : Hotstar


আমার অভিমত

বালা সিনেমাটি আমাদের সমাজের দুটি অত্যন্ত খারাপ দিক নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যার একটি ছেলেদের টাক পড়ে যাওয়া। আরেকটি মেয়েদের গায়ের রং। দুটোই আমাদের সমাজের অভিশাপ। মেয়েদের গায়ের রং শ্যামলা হলে যেমন তাদের জন্য পাত্র খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল হয় তেমনি ছেলেদের মাথায় টাক পড়লে তাদের জন্য পাত্রী খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। সমাজ বাহ্যিক সৌন্দর্যকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। সিনেমার শেষটুকু তাই খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বালা যখন বুঝতে পারে জীবনের আসল অর্থ, যেটা হলো বাহ্যিক সৌন্দর্যই সবকিছু নয়।

বালা চরিত্রে আয়ুষ্মান খুরানার অভিনয় খুবই ভালো লেগেছে। আয়ুষ্মান খুরানাকে বরাবরই একটু ভিন্ন ধরনের সিনেমায় দেখতে পাওয়া যায়। তার পাশাপাশি ভূমি পেন্দেকারকে লতিকার চরিত্রে ভালো লেগেছে।


রেটিং

পরিচালনা
কাহিনী
অভিনয়



IMG_20220926_174120.png

Vote bangla.witness


Support @heroism by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join HEROISM ||

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

রাদি সান্ধুর "নাহ গোরিয়ে " গানটক শুনেছি অনেক কিন্তু মুভিটা দেখিনি।পুরোটা পড়ে বেশ ইইন্টারেস্টিং লাগলো।
আজ অব্দি আয়ুষ্মান খুরানার ড্রিম গার্ল মুভিটাই দেখেছি শুধু।রিভিউ ভালো লেগেছে।আশা করছি,সময় করে বালা দেখে ফেলবো

দারুণ ছিল মুভিটি।তবে এখন আর সময় করে দেখাই হয় না।পুরোটা পড়ে খুবই ভালো লেগেছে।আর এটা ঠিক আমাদের সমাজ কোথাও কোনো খুঁত দেখলেই উঠেপড়ে লাগে।কিন্তু তাদের মাঝেও যে খুঁত আছে সেটা তারা দেখে না।কেউই পারফেক্ট না, আর এটাই কেউ মানতে পারে না।সবসময় অন্যের বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে। খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন দাদা,অনেক ভালো লেগেছে পড়ে।

দাদা এই মুভিটি আমি দেখিনি কিন্তু পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। আগের মত সাধারণত এখন সময় পাইনা। তাই এখন আর এগুলো ঘাঁটাঘাটিও করা হয় না। আগে সব সার্চ করে বের করে খুঁজে দেখতাম। আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া মেয়েদের গায়ের কালো রং আর ছেলেদের টাক দুটি আমাদের সমাজে বিশাল বড় অভিশাপ। এ দুটি যে ছেলে মেয়ের মধ্যে আছে তারা সমাজে আতঙ্ক নিয়ে বড় হয়, তারা ছেলে পক্ষ এবং মেয়ে পক্ষের কাছে অবহেলিত হয়ে থাকে।

এই সিনেমাটা আমি দেখেছিলাম। আয়ুষ্মান খুরানার অভিনয় সব সময়ের মতনই একটা দাগ ফেলে গেছে মনে। এই সিনেমাতে এটাই বোঝানো হয়েছে যে তুমি যেমন তেমনই থাকো। তাতে যদি তুমি সমাজে গ্রহণযোগ্য হও আপনি গ্রহণযোগ্য হবে। আলাদা করে নিজেকে সাজানোর কোন প্রয়োজন নেই গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য।আসলে আমরা সেটা নিতেই পারি না। সবসময়ই চেষ্টা করি নিজেকে সমাজে ফিট করানোর জন্য। যদি এমন হয় যে আমি আমার মতো থাকি, সমাজ নিজেকে আমার মতো করে ফিট করে নেবে। তাহলে আজকে এত ডিপ্রেশন আসতো না। চুল একটু পেকে গেলেই আমরা সাথে সাথে রং করে চুলে, চুল উঠে গেলেই তাড়াতাড়ি উইগ পড়ি মাথায়। গায়ের রং কারও শ্যামলা হলে তাকে জোর করে ক্রিম মাখিয়ে ফর্সা বানানো হয়। এই সামাজিক ব্যাধিগুলোর দিকে বেশ ভালোভাবেই আঙ্গুল তুলে দেখিয়েছে সিনেমাটি।