লাইফ স্টাইল- ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খাওয়ার অনুভুতি ||lifestyle by @maksudakawsar ||

in hive-129948 •  11 months ago 

আসসালামু আলাইকুম

চারদিকে শীতের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে গ্রাম হতে শহর। আর তার সাথে তাল মিলিয়ে চারদিকের মানুষগুলোও মেতে উঠেছে শীতের আনন্দে। গ্রামের ঘরে ঘরে তো রং বেরং এর বাহারি পিঠার সমাহার চলছে। অনুষ্ঠান আর আচার আচরণে মুখরিত হচ্ছে গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবার। যদিও আমরা যারা শহরে বসবাস করি তাদের জন্য গ্রামের সেই স্বাদ আর আনন্দ উপভোগ করা হয়ে উঠে না। শহরে দালান কোঠার ভিড়ে সে সমস্ত আয়োজন একটু নেই বললেই চলে। কিন্তু ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে আজকাল কিন্তু হরহামেশাই পিঠা কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু শীতের পিঠা খাওয়ার যে এত সুন্দর অনুভূতি সেটা এমন করে আগে অনুভব করিনি। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে তেমনই একটি সুন্দর অনুভূতির কথা নিয়ে উপস্থিত হয়েছি।

ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খাওয়ার অনুভুতি

Add a heading (2).png

Banner credit --@maksudakawsar

image.png

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

কয়েকদিন হলো বেশ শীত জেঁকে বসেছে চারদিকে। তার সাথে আবার শীতের কুয়াশা ঢেকে দিচ্ছে গোটা শহরটাকে। তবুও কিন্তু জনজীবন থেমে নেই। ইট পাথরের এই শহরে শীতের এই সকালে কম্বলের নীচে থেকে একটু শান্তির ঘুম কল্পনা করাটাই যেন আজকাল অমাবস্যার চাঁদ। তাই তো সেই কাক ডাকা ভোরে জীবিকার তাগিদে ছুটে যেতে হয় কর্মস্থলে। তবে মাঝে মাঝে এর মাঝেই খুঁজে নিতে হয় কিছুটা ‍সুখ। তা না হলে তো জীবন হয়ে যাবে দূর্বিষহ। আর তাই তো সেদিন অফিসের সব কলিগরা মিলেই ভাগ করে নিলাম কিছুটা আনন্দ। তাও আবার শীতের ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খাওয়ার অনুভূতি। প্রতিদিন আমরা কিছু না কিছু নাস্তা করি। কিন্তু সেদিন শুনলাম অফিসের কাছেই নাকি এক ভদ্র মহিলা দারুন পিঠা বানায়, তা আর দেরি না করে কলিগদের নিয়ে চলে গেলাম সেই পিঠা ওয়ালী চাচীর দোকানে।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

হায় হায়! সেখানে গিয়ে তো আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। বেশ ভিড় হয় চাচীর সেই দোকানে। আর সেদিন তো ছিল কুয়াশা। তাই আশে পাশের অনেক অফিস থেকেই লোকজন দলে দলে চাচীর দোকানের পিঠা খাওয়ার জন্য ছুটে আসছে। তো আমরাও ছিলাম প্রায় ৬-৭ জন। বিল দেওয়ার দায়িত্ব পুরোটাই আমার। তো আমার আবার ভর্তায় একটু আলাদা দূর্বলতা কাজ করে। আর তা যদি হয় চ্যাপা শুটকী ভর্তা তাহলে তো কোন কথাই নেই। অনায়াসে ভাত খেতে পারি অনেক। তো আমি আগে দেখে নিলাম কি কি ভর্তা আছে চাচীর দোকানে। বাপরে বাপ কত পদের যে ভর্তা! এত রকমের ভর্তা খেতে খেতে তো একদিন পার হয়ে যাবে।

image.png

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

তবে চাচীর দোকান রাস্তায় হলেও বেশ চলে। আর দোকানে পিঠা খেতে হলে আগে টাকা জমা দিতে হয়। কোন ফাঁকি ঝুঁকি নেই। তাই আমরা আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম কে কি কি পিঠা খাবে, আর কয়টা খাবে? তো সবাই একটা করে ভাপা পিঠা এবং একটা করে চিতই পিঠা খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু আমি আবার মিষ্টি একটু কম খাই। তাই আমি দুটোই ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মোট ১৪০/- টাকা গুনে দিয়ে দিলাম। তারপর আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। যে ভিড় কখন যে পিঠা আসবে। এদিকে আবার শীতের বাতাসে তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

আর তার মধ্যেই আমাদের এক কলিগ বেশ কায়দা করে চাচীর সাথে ভাব জমিয়ে নিয়ে নিল তাদের ৬ জানের জন্য ছয়টি গরম গরম ভাপাপিঠা। ইস্ গরম পিঠা গুলো হতে যে কি দারুন ধোয়া বের হচ্ছিলো। কিন্তু আমি কিন্তু কোন পিঠা পেলাম না। কারন হলো তারা আগে ভাপা পিঠা খেয়ে শেষ করবে তারপর আমাকে তাদের সাথে চিতই পিঠা খেতে হবে। বলেন তো এ ও কি সয়? কিন্তু কি আর করার। ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে। অপেক্ষা করতে লাগলাম তাদের ভাপা পিঠা খাওয়ার দৃশ্য দেখে। কেউ কেউ তো আবার আমাকে লোভও লাগাচ্ছিলো ভাপা পিঠার স্বাদের। আমার যে লোভ জাগেনি তা কিন্তু নয়। আমারও লোভ জাগছিল একটি খেয়ে দেখতে। কিন্তু না খাবো না। তাহলে আমার ভর্তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে। কারন দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো যে চাচীর ভর্তা গুলো বেশ মজাদার ছিল।

image.png

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

এক সময়ে চলে আসলো সেই মহেন্দ্রক্ষন। গরম গরম চিতই পিঠা আর ঝাল ঝাল ভর্তা। হাতে পাওয়ার আগেই যেন মুখ কচুমুচু করছিল। তবে এখানের একটি বিষয় আমার ভালো লেগেছে যে ভর্তাটি নিজের পছন্দ ও ইচ্ছে মত খাওয়া যায়।আর আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম। কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে শীতের পিঠা খাবো কিন্তু ঝাল খাবো না তাকি হয় বলেন তো? তাই তো আমি বেছে বেছে ঝাল ঝাল ভর্তা গুলো খেয়ে নিলাম। কিন্তু ভর্তা খেয়ে তো আমার অবস্থা মার্ডার। ও হা ও হা করতে করতে জীবন শেষ। তবে মিথ্যে বলবো না। চাচীর বানানো ভর্তা গুলো কিন্তু সত্যি অসাধারণ ছিল। তবে এটা ঠিক যে সেদিন বেশীর ভাগ ঝাল ভর্তা গুলো আমিই খেয়ে ছিলাম। হি হি হি

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

তারপর আমরা সবাই সেইদিন শীতের ঘন কুয়াশার মধ্যে অফিস ফাঁকি দিয়ে ভর্তা খাওয়ার পর আমাদের মনে হলো একটু গরুর দুধের চা খেলে কিন্তু মন্দ হয় না। আমি ভাবলাম যে পিঠা আর ভর্তার বিল যেহেতু আমি দিয়েছি, তাহলে চায়ের বিল অন্য কেউ দিবে। ওমা সে তো আর হলো না। আমাকেই কুলুর বলদ বানানো হলো । আমার থেকেই আদায় করা হলো গরুর দুধের চায়ের বিল। কি আর করবো বলেন তো ? পিঠা খাওয়ার পর কি একটু ঘন চা না খেলে চলে? তাই তো নিজের স্বার্থে আমিই দিলাম।

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

শেষ কথা

তবে টাকা যা গেছে যাক। কোন সমস্যা নেই। আনন্দ তো পেলাম। এমন একটু আনন্দের জন্য ৩০০/- টাকা কেন, ৩০০০/- টাকা গেলেও কোন ক্ষতি নেই। কারন আমি আবার একটু আমোদ প্রিয় মানুষ। একা থাকা বা একাকিত্ব জীবন আমার কাছে বিষাদময়। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খাওয়ার আনন্দের সময়টুকু? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

image.png

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

Screenshot_1.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। আপনার ঝাল ঝাল চিতই পিঠা দেখে সত্যিই লোভ সামলানো মুশকিল। এখানে দেখছি বেশ অনেক ধরনের ভর্তা পাওয়া যায় চিতল পিঠার সাথে। আমিও সেদিন আমার কিছু কলিগ দের সাথে নিয়ে ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খেয়েছিলাম। আমিও সেই অনুভূতিটা খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে ভাগ করে নিব। অনেক ধন্যবাদ আপু চমৎকার অনুভূতি মেশানো পোস্ট করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া আপনার ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা গুলো শোনার জন্য।

এই পিঠাটা আমাদের এখানে সারা পিঠা নামে পরিচিত। তবে গরম দুধের সাথে ভিজিয়ে খাওয়া হয় চিনি মিশিয়ে। যাইহোক সুন্দরভাবে আপনি এই রেসিপি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন বেশ ভালো লাগলো শীতকালে কিন্তু এগুলো সবার প্রিয় খাবার। সুন্দর রেসিপি উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।

অবশ্য এক এক অঞ্চলে এক এক নাম বলে জানে এমন পিঠা ‍গুলোর। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

রাস্তার পাশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা এবং ঘন্ট দিয়ে এরকম ঝাল ঝাল চিতই পিঠা খেতে আমার খুব ভালো লাগে।
বিশেষ করে সরিষা ভর্তা এবং কচুশাক ঘন্ট একটু ঝাল হলে সেটা দিয়ে খেতে সব থেকে বেশি ভালো লাগে।

Posted using SteemPro Mobile

ভাইয়া আমরাও তো রাস্তার পাশে খেয়েছিলাম। ধন্যবাদ ‍সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

শীতকাল শুরু হলেই আমাদের কলকাতার রাস্তায় এরকম ছোট ছোট পিঠের দোকান বসে। তবে বাইরে থেকে কখনো কিনে খাওয়া হয়নি। সব থেকে বড় কথা এত প্রকার ভর্তা আমাদের এখানে পাওয়া যায় না এরকম পিঠের সাথে। আপনারা সবাই মিলে অনেক মজা করেছেন পিঠে খেতে খেতে এর থেকে ভালো কি হতে পারে আপু। সত্যি কথা বলতে আমার দেখে নিজেরই লোভ হচ্ছে। হা হা হা...

ধন্যবাদ দিদি আপনার মূ্ল্যবান মন্তব্যের জন্য।