লাইফ স্টাইল- জীবন যখন রোহিঙ্গাদের মতো ||lifestyle by @maksudakawsar ||

in hive-129948 •  last year  (edited)

আসসালামু আলাইকুম

আজকাল যেমন প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া মুশকিল তেমনি করে ভালো কোন বসবাস করার বাসাও ঢাকার শহরে খুুঁজে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। সবাই যেন কেমন হয়ে গেছে। ঢাকা শহরে যাদের একটি বাড়ি আছে তাদের যেন আর কিছু চাওয়ার নেই। আর আজকাল ঢাকার শহরে এত মানুষ বেড়েছে যে ঢাকায় ভালো মানের বসবাসযোগ্য বাসা পাওয়াটাই যেন অনেক কষ্টের একটি বিষয়। যাও আবার বাসা পাওয়া যায় তাও যেন পছন্দ হতে চায় না। আর বাসা ভাড়ার কথা নাই বা বললাম। যেন লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলেছে বাড়ি ভাড়া। তাও যেন দেখার মত কেউ নেই। বেশ খোঁজাখুঁজির পর পেয়ে গেলাম একটি বাড়ি। তাও আবার আম্মার বাসার কাছাকাছি। কিন্তু কি জানেন? বাসা পাল্টানো যে কি যন্ত্রণার তা কেবল যারা ঢাকা শহরে ভাড়া বাসায় থাকে তারাই বোঝে। যেমন এই তো গত কয়েকদিন যাবৎ আমার নিজেকেই মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা। আর আজ আপনাদের মাঝে আমার রোহিঙ্গা জীবন যাপন নিয়েই কিছু শেয়ার করার জন্য চলে আসলাম।

জীবন যখন রোহিঙ্গাদের মত

Add a heading (4).png

Banner credit --@maksudakawsar

প্রতিটি মানুষই চায় তার ঘরটি হোক খোলামেলা আর প্রাণবন্ত। কারন দিন শেষে কিন্তু ঘরের মধ্যেই তাকে বেশীর ভাগ সময় কাটাতে হয়। এই যেমন আমার কথাই বলি আমি ছেলেবেলা থেকেই একটু খোলামেলা এবং পরিপাটি পরিবেশ পছন্দ করি। যার কারনে বিয়ের পর পরই যে বাসাটায় উঠেছিলাম সেটা যথেষ্ট খোলামেলা দেখেই উঠা হয়েছিল। প্রায় পাচঁ বছর ছিলাম সেই বাসায়। অবশ্য সেই বাসায় একেবারে নিজেদের বাড়ীর মত করেই থাকতাম। আন্টি আর আঙ্কেল ও আমাকে মেয়ের মতই পছন্দ করতো। কিন্তু রপর বেশ তাড়াহুড়ায় উঠে গিয়েছিলাম এই বাসাতে। তবে বাসাটিতে উঠার আগে কিন্তু বাড়িওয়ালার একশত একটা শর্ত মেনেই উঠতে হয়েছিল।বাসাটা দেখতে সুন্দর হলেও বাসাটির ছিল মেলা সমস্যা।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

একে তো পিছনের সাইটের বাসা। আলো বাতাস নেই বললেই চলে। তার উপর আশে পাশে বাড়ী থাকার কারনে একটু জানালাও মেলা যায় না। আর অন্য দিকে সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করা। আর এই সিলেন্ডার গ্যাস নিয়ে আমাকে সারাক্ষনই থাকতে হয় বেশ চিন্তায়। তার উপর তো আছে পানির যন্ত্রণা। বাড়ীওয়ালী ম্যাডাম আবার সারারাত জেগে জেগে রান্না করেন আর দুপুর একটা পর্যন্ত ঘুমান। এরপর বিকেল হলেই ভদ্র মহিলা তাদের নিজেদের একটি লাইব্রেরী আছে সেখানে যেয়ে বসেন। তাই দিনে একবার পানি উঠানো হয় উপরের টাঙ্কিতে। যেহেতু আমার ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যায়, তাই প্রায় দিনই আমি পানি পাই না। এমন কি মাঝে মাঝে ভোরে ঘুম থেকে উঠেও দেখি পানি নেই। এ যে কি যন্ত্রণা। বুঝিনা মানুষ কি করে এতটা বিবেকহীন হয়। সে কারনেই দু মাস আগে বলে দিয়ে ছিলাম যে মনের মত বাসা পেলে চলে যাবো।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

বেশ খোঁজাখুজিঁ করে অবশেষে পেয়ে গেলাম একটি বাসা। অবশ্য ঢাকার শহরে সব মিলিয়ে মনের মত বাসা কখনও পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই কিছুটা ছাড় দিয়ে নিয়ে নিলাম সেই বাসাটি। অবশ্য সেই বাসাটির পজেটিভ সাইডের মধ্যে দুটো হলো সামনের সাইটের বাসা, খোলামেলা এবং আলো বাতাস পর্যাপ্ত। আরও একটি পজেটিভ দিক হলো বাসাটিতে লাইনের গ্যাস। সিলেন্ডার গ্যাসের কোন ভয় নেই। সব কিছু মিলিয়ে এই কয়েকটি দিক বিবেচনা করেই বাসাটি নিয়ে নিলাম। কিন্তু ঐ যে ঢাকা শহরের সব বাড়ীওয়ালারাই যে এক। তাই বেশ ভয়েই আছি যে, কি যেন কি হয়।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

যাই হোক বাসা তো পাওয়া গেল। এখন যন্ত্রণা হলো গোছ গাছ করা। যেহেতু আমরা দুজনেই কর্মজীবি মানুষ তাই প্রতিদিন বাসায় ফিরে কিছু কিছু করে গোছ গাছ করে প্যাকিং শেষ করে রাখছি। যাতে করে শেষের দিকে এতটা চাপে না পড়ি। এই দিকে সমস্ত ঘরের জিনিস প্রতিদিনই আমি কিছু কিছু পরিস্কার করে নিয়ে কাটুন কাটুন করে রাখছি। আর এদিকে আলমারি আর ওয়াড্রবের সব কিছু নামিয়ে গুছিয়ে নিয়েছি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো দুজনের আর কয়টা জিনিস বলেন তো। তাও নাকি এক গলি থেকে আর এক গলিতে নিতে চায় ৮০০০/- টাকা। কি যে এক যন্ত্রণা। টেনশনে মাথায় কিছু ধরে না।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

এদিকে নতুন বাসায় উঠবো বলে এ মাসে আর সিলিন্ডার গ্যাস আনা হয়নি। আর লাস্ট কবে যে এনেছিলাম সিলেন্ডার গ্যাস সেটাও জানা নেই। শুধু এতটুকু জানি যে আমার একটি সিলেন্ডা আনলে প্রায় দেড় মাস যায়। তাই ভেবেছিলাম সিলেন্ডার গ্যাসটিই এই মাস পুরো শেষ হয়েও আরও থাকবে। কিন্তু ওমা গো মা। হুট করে গত কাল গ্যাস শেষ হয়ে গেল। কি আর করার । রোহিঙ্গা হয়ে গেলাম। এই ৮-১০ দিনের জন্য কি আর সিলেন্ডার আনা ঠিক হবে? আর তাই তো ভাবলাম যে কয়টাদিন না হয় রোহিঙ্গা হয়ে কাটিয়ে দেই। তাইতো গতকাল রাতে ছোট বোনকে দিয়ে তিন দিনের তরকারি রান্না করলাম। আর ভাতটা না হয় রাইস কুকারে করে নিবো। কিন্তু এমন যদি হতো এই কয়েকদিন কারও বাসার মেহমান হয়ে যদি থেকে যেতে পারতাম, তাহলে যে কি মজা হতো, তাই না? আর আপনাদের ভাইয়া তো আবার শ্বশুর বাড়ী যাবে না। আর তাই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সকালে হোটেলে। আর দুপুরে যে যার মত। মানে আমি আম্মার বাসায় আর আপনাদের ভাইয়া হোটেলে। আর রাতে আবার ঐ যে রান্না করা আছে না ফ্রিজে সেটা দিয়েই চালিয়ে নিবো। না হয় পার করলাম কয়টা দিন রোহিঙ্গা হয়ে। হি হি হি।

image.png

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

শেষ কথা

সব কথার শেষ কথা হলো ঢাকা শহরে একটি বাসা খুঁজে পাওয়া যেমন কষ্ট তেমনি কষ্ট হলো বাসা পাল্টানো। আর বাসা পাল্টানোর এই ঝামেলা আরও বেশী কষ্ট দায়ক হয়ে পড়ে চাকরিজীবি মানুষগুলোর জন্য। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের পোস্টটি। জানার অপেক্ষায় রইলাম।

image.png

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

আমার ব্লগটির সাথে থাকার জন্য এবং ধৈর্য সহকারে আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাই কে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সেই সাথে সবার প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

image.png

Screenshot_1.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

হাহাহা! ভাইয়াকে এভাবে হোটেল না ধরিয়ে দিলেও পারতেন। আপনার সাথেই নিয়ে নিতেন। তবে ঢাকা শহরে বাসা ম্যানেজ করা আসলেই কঠিন। তার উপর বাড়িওয়ালা ভালো না হলে উপায় নেই! আগের বাসার বাড়িওয়ালা ভালে ছিল না বুঝায় যাচ্ছে। এখন নতুনটাতে আশা করি মানায় নিতে পারবেন

চেষ্টা করবো। সমস্যা হলেও মানিয়ে নিয়েই থাকতে হবে বাসা পাল্টানো যে অনেক কষ্ট। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

আসলে আপু থাকার জায়গা যদি ঠিকঠাক না হয় তাহলে জীবন অনেকটাই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। সারাদিন কষ্ট করে এসে যদি রাতে একটু শান্তিতে ঘুমানো না যায় তার থেকে অশান্তি আর কিছু নেই। তবে যারা অফিস আদালতে কাজ করে তারা একদিন রান্না করে দুই তিন দিন খায় এটা আমাদের এখানে স্বাভাবিক। তারপরও মনে হচ্ছে আপনার বর্তমান জীবন যাপন এখন অনেকটাই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে, অনেক সমস্যার কারণে।

কি আর বলবো দিদি একেবারে রোহিঙ্গা হয়ে গেলাম গো দিদি। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।