লাইফ স্টাইল- আতঙ্ক আর ভালোবাসায় কাটানো কয়েকটি দিন || lifestyle by @maksudakawsar ||

in hive-129948 •  4 months ago 

আসসালামু আলাইকুম

আজকাল যেন কোন লেখা আর হাতে উঠতে চায় না। কি করে উঠবে বলেন? চারদিকের যে অবস্থা তাতে তো আর স্বস্তি পাচ্ছি না। কখন যে কি হয় সেই আতঙ্কেই থাকতে হচ্ছে সারাটিক্ষন। কখন যে কি হয়। তাই তো দিন কাটছে উৎকন্ঠা আর ভয়ের মধ্য দিয়ে। যে ভয় নিয়ে কাটাচ্ছি আজ বেশ কিছুদিন। আসলে চারদিকের এই অবস্থায় আমার মনে হয় কেউ শান্তিতে নেই। সবার মনেই কেমন যেন একটি ভয় কাজ করছে।

আমি @maksudakawsar, বাংলাদেশ হতে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। আমি আমার বাংলা ব্লগের একজন নিয়মিত ইউজার। আমি মনে করি এমন একটি কমিউনিটির একজন নিয়মিত ইউজার হয়ে থাকাটাও গর্বের বিষয়। হাজারও ব্যস্ততার মাঝেও আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে নতুন নতুন এবং ভিন্ন কিছু পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হতে। তাই তো আজ আবার একটি নতুন পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম।

বনের পাখিকে যদি খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয় তাহলে কিন্তু সেই পাখি ছটফট করতে করতে এক সময় শেষ হয়ে যায়। ঠিক তেমনই হয়েছিল আমাদের জীবনটা কয়েকদিন আগে। করোনার মধ্যে যেমন মানুষ ঘর বন্দী হয়ে মানসিক অস্থিরতায় দিন কাটিয়েছে। ঠিক একই ভাবে গত কয়েকদিন আগে আমি নিজেও দূর্বিসহ জীবন যাপন করেছি। দূর্বিসহ কেন বলছি সেই বিষয়টাই আমি আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করতে আসলাম। আশা করি আমার আজকের পোস্টের মধ্য দিয়ে আপনারা আপনাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবিও দেখতে পাবেন।

GridArt_20240728_200341286.jpg

আতঙ্ক আর ভালোবাসায়
কাটানো কয়েকটি দিন

Polish_20240728_194151329.jpg

Polish_20240728_194346609.jpg

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

২০২৪ সালের জুলাই মাস যেন সমস্ত বাঙালী জাতির জীবনটাকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। এই তো গত ১৮ই জুলাই এ দেশের ছাত্রছাত্রীরা কোটা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে। যার কারনে সমগ্র বাংলাদেশে ডাকা হয় শাট ডাউন। আর সেই শাট ডাউনের জন্য সারা দেশ জুড়ে নেমে আসে নিরব আর থমথমে ভাব। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় কোন কিছু উপলব্দি করতে না পারলেও বাসায় ফিরার মধ্যে ঠিকই উপলব্দি করতে পেরেছি। সমস্ত রাস্তায় রিক্সা ছাড়া আর সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই থমথম অবস্থায় যখন রিক্সা করে বাসায় আসতেছিলাম তখন তো দু তিন জায়গায় আন্দোলনের মুখে পড়েছিলাম। বাবা কি যে ভয়ানক অবস্থা। এর মাঝেই উপর ওয়ালাকে ডাকতে ডাকতে মৌচাক এসে নামলাম। আরে না নামিনি। নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারন ততক্ষনে মৌচাক হতে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত ছাত্ররা তাদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। ওমা এমন পরিস্থিতিতে কি করে বাসায় ফিরবো। যাই হোক বেশ কষ্টে বাসায় ফিরলাম।

Polish_20240726_225858113 (1).jpg

Polish_20240728_194039666.jpg

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

তারপর সারাদিন রাত কখনও ফেইস বুক , কখনও ইউটিউট , কখনও বা টিভিতে দেখতে লাগলাম দেশের অবস্থা। খুব খারাপ ছিল সেদিন দেশের অবস্থা। সারারাত ধরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ২৫ শে মার্চের মত গুলাগুলি এবং আগুন জ্বালানো হলো। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিলো যে আমরা মনে হয় ১৯৭১ সালে বসবাস করছি। এ যেন ১৯৭১ সালের বহাবহ কালরাত্রি। তারপর সারারাত আর ঘুমাতে পারিনি। এমন দৃশ্য দেখে। সমস্ত রাত টিভির দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে ছিলাম। পরদিন শুক্রবার আর কোন ইন্টারনেট পাইনি। যার জন্য মনটা আরও বেশী খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কারন আমার প্রিয় কমিউনিটি হতে বেশ দূরে সরে গিয়েছিলাম কটাদিন। আর ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় তো আর কোন সংবাদ পাচ্ছিলাম না। অবশেষে রাতে শুনলাম দেশে কারফিউ জারী করা হয়েছে। সেই সাথে সমগ্র বাংলাদেশে সারাধরন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। মনটা গেল একদম ভেঙ্গে। সব কিছু যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা বাঁচবো কি করে।

Polish_20240728_193850777.jpg

Polish_20240728_193718579.jpg

picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

শুরু হয়ে গেল কারফিউ। বাসা আনসার হেড কোয়াটারের পাশে হওয়ায় আনসার আর বিডিবির সরগোলে ভরে গেল এলাকা। আমার কাছে মনে হতে লাগলো দেশে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ চলছে। তাই আমরাও হয়ে গেলাম ঘর বন্দী। একদিকে নেই কোন ইন্টারনেট। নেই প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি। নেই নিজের মনের কথা শেয়ার করার জন্য প্রিয় কমিউনিটির ডিসকোর্ড। তাহলে কি করে কাটে আমার দিন। শুধু প্রিয় মানুষের সাথে রোমান্স করে কতটা সময় আর কাটানো যায়। আর এমন অবস্থায় কি আর রোমান্স আসে? সারাদিন ঘরের মধ্যে দিন। তার মধ্যে তো সকল বেসরকারি চ্যানেল গুলো হয়ে গেছে বিটিভি। কি যে যন্ত্রণার জীবন। শুধু রান্না বান্না আর ঘুম। মাঝে মাঝে ছাদে উঠে আর্মিদের রাস্তায় টহল দেওয়া দেখা। কত আর ভালো লাগে?তাই একটু সাহস করে আমরা নিচে নামলাম। দেখলাম খুব নিরাপত্তার মধ্যে আমাদের এলাকাকে রাখা হয়েছে। চারদিকে আর্মি, আনসার আর বিডিআর। আর এলাকার সবাই রাস্তায় হাটাহাটি করছে।

Polish_20240728_171304606.jpg
Polish_20240728_194452439.jpg

Polish_20240728_194701682.jpg
picture credit --@maksudakawsar
Camera-Vivo-Y22s

তাই কারফিউ চলাকালীন সেই সময়টায় প্রতি মন্ধ্যায় কপোত কপোতি দুজন মিলে কিছুটা সময় রাস্তায় হাটাহাটি করতাম। আর সাথে চলতো মাসালা রং চা এবং দু খিলি মসলা দেওয়া পান। কি রোমান্টিক মুডে ছিলাম বলেন তো আপনারা? বেশ ভালো কিছু সময় কাটালেও মনের মধ্যে সারাদিন শুধু অস্থিরতায় ভরা থাকতো। তাই খুব চেষ্টা করে যোগাড় করে নিলাম একটি হেড ফোন। আর সেই হেড ফোন কানে দিয়ে প্রতিদিন হারিয়ে যেতাম এফএম রেডিও এর গভীরে। কখনও বা পুরানো দিনের কোন প্রিয় গানে। কখনও বা কারও জীবনের রোমান্টিক কোন গল্পের মাঝে। আবার কখনও হয়তো বা ভয়ঙ্কর কোন ভূতের গল্পে। আর এমন করেই কেটে গেল আমার সাধারন ছুটি আর ইন্টারন্টে বিহীন সময় গুলো। তবে ভালো ছিলাম না প্রিয় কমিউনিটিকে ছেড়ে।

শেষ কথা

জানিনা এমন দূর্বিসহ সময়গুলো আপনারা কেমন করে কাটিয়েছেন। আশা করবো আপনারা সবাই আপনাদের অনুভূতি গুলো শেয়ার করবেন। সকলেই ভালো থাকবেন।

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

image.png

Screenshot_1.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

দেশের মানুষ টেনশনে অস্তির হয়ে যাচ্ছিল,আর আপনারা কপোত কপোতি মিলে চা কফি খান আর রোমান্টিক মুড এনজয় করেন। বাহ দারুন হয়েছে। এত টনশন করে কি হবে। যদি ঐদিন রাতে আর্মির হাতে ধরা পরতেন তাহলে রোমান্টিক মুড বের হয়ে যেতো,হা হা হা। ধন্যবাদ।

কি আর করবো ভাই।অবস্থা দেখে তো আর কিছু ভালো লাগছিল না। হি হি হি। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

সত্যই বড় ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেল বাংলাদেশ। হয়তো এখনো একই পরিস্থিতি চলছে। আমরা বাইরে থেকে সবটা বুঝে উঠতে পারছি না। তবে এই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ সময় বিভিন্নভাবে কাটিয়েছেন তা বুঝতে পারলাম। কিন্তু আতঙ্ক কোনভাবেই সঙ্গ ছাড়ে না। চোখের সামনে এই নৃশংসতা মেনে নেওয়া বড় কঠিন। সাবধানে থাকুন।

ধন্যবাদ ভাইয় মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

সেই যন্ত্রণার দিনগুলো আমরা কেউই ভালো কাটাইনি আপু। কিছুক্ষণ পর পর ছাদে যেতাম রাস্তার পরিস্থিতি দেখতে। আর একবার বাসা আর কিছুক্ষণ পর পর পাশের বাসায় খবর দেখতে যাওয়া ডিশ চ্যানেলে দেশের কি পরিস্থিতি খবরে দেখতে। আসলে এরকম পরিস্থিতি যেন দেশে আর কখন না আসে আপু এই দোয়া করি।

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহিত করার জন্য।