বন্ধুত্বের ১৫ বছর: এক স্বপ্নের মত🫂

in hive-129948 •  5 days ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক, যা সময়ের সাথে আরও মজবুত হয় এবং আমাদের জীবনে এক গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই সম্পর্ক আমাদের শুধু সুখী মুহূর্ত দেয় না, বরং চ্যালেঞ্জের সময়ে সঙ্গ দেয়, সাহস দেয়, এবং জীবনের নানা বাঁকে আমাদের সঠিক পথ দেখায়। বন্ধুত্বের মাধুর্য উপভোগ করার সৌভাগ্য আমাদের মতো কম লোকই পায়। আমাদের বন্ধুত্বের আজ ১৫ বছর পূর্ণ হলো, যা আমাদের জীবনের একটি অসাধারণ অধ্যায়।শিমুল, মারুফ, হামজা, খালিদ, জিহাদ, ইয়াকুব, শিহাব এবং আমি—আমরা সবাই সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত একসাথে পড়েছি। আমাদের বন্ধুত্বের এই যাত্রা ছিল চমৎকার ও সুন্দর। স্কুলের সেই দিনগুলো এখনো আমাদের স্মৃতির পাতায় সোনালি হয়ে আছে। সেই দিনগুলোর হাসি, আনন্দ, দুষ্টুমি এবং একে অপরের পাশে থাকার মুহূর্তগুলো সবসময়ই হৃদয়ে থেকে যাবে।

1000019980.jpg

শুরুর দিন

বন্ধুত্বের শুরুটা অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই হয়। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার পরপরই আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হই। তখন আমাদের বয়স কম ছিল, কিন্তু ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কৌতূহল ছিল অসীম। শিমুলের সাথে আমার প্রথম আলাপ হয়েছিল এক টিফিন বিরতির সময়। সে একদিন নিজের খাবার ভাগ করে নিয়েছিল আমার সাথে। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল আমাদের বন্ধুত্বের যাত্রা। মারুফ, হামজা, খালিদ, জিহাদ, ইয়াকুব ও শিহাব—তাদের সাথেও একইভাবে ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তর্ক করা, খেলাধুলায় মেতে ওঠা, কিংবা ক্লাসে শিক্ষকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় একসাথে দাঁড়ানো—সবই বন্ধুত্বের সেই প্রথম দিকের দারুণ স্মৃতিগুলো।

স্কুলের দিনগুলো

সবুজ কানন স্কুল এন্ড কলেজ আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বিদ্যালয়ে আমরা একসাথে বেড়ে উঠেছি, শেখা আর খেলার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছি আমাদের ছেলেবেলা। স্কুলের মাঠ, ক্লাসরুম, বারান্দা, আর খেলার মাঠ—সবকিছুই আমাদের কাছে বিশেষ ছিল। খেলার মাঠে ফুটবল খেলার উত্তেজনা, ক্রিকেটের ব্যাট-বল নিয়ে ছুটোছুটি, আর স্কুলের ক্যান্টিনের খাবারের প্রতি আমাদের আকর্ষণ—এসব সবই আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছি। প্রতিদিন স্কুলে এসে একে অপরের সাথে দেখা করা, হাসিঠাট্টা করা, একসাথে ক্লাসের পড়া নিয়ে আলোচনা করা—এগুলো আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও তা সবসময়ই ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই চেয়েছি একে অপরের ভালো করতে, আর সেজন্য একে অপরকে সাহায্য করতেও পিছপা হইনি।স্কুল জীবনের নানা স্মৃতি আমাদের মনে সবসময় গেঁথে থাকবে। শিক্ষকদের বকুনি, পরীক্ষার চাপ, আর পরীক্ষার পর পরই সেই চাপের মুক্তি—এসব কিছুতেই আমাদের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আমরা একসাথে দুষ্টুমি করেছি, আবার একসাথে দায়িত্বও পালন করেছি। ক্লাসের মধ্যে অনেক সময় পড়া শেষ না করে আমরা বাইরে যাওয়ার ছুতো খুঁজতাম, আর সেই সময়গুলোতে আমরা একসাথে আমাদের পছন্দের কাজগুলো করতাম।

জীবনের পরিবর্তন ও নতুন দিক

স্কুল জীবন শেষ হওয়ার পর আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন পথে চলতে শুরু করি। কেউ ঢাকায় চলে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য, কেউবা দেশের অন্য প্রান্তে। জীবনের গতিপথে একে অপরের থেকে দূরে সরে গেলেও আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন কখনও আলগা হয়নি। এখন আমরা কেউ কেউ চাকরিতে, কেউবা ব্যবসায়িক জীবনে পা রেখেছি। সময় ও দূরত্ব আমাদের শারীরিকভাবে আলাদা করেছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের মনের বন্ধন আগের মতোই রয়ে গেছে।শিমুল এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে, সে একজন সমাজবিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। মারুফ তার পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত হয়েছে এবং নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলছে। হামজা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথে পা বাড়িয়েছে এবং বর্তমানে ঢাকার একটি নামী প্রতিষ্ঠান থেকে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। খালিদ দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়ে এখন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। জিহাদ মেডিকেল পড়াশোনা করছে, সে একদিন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। ইয়াকুব বর্তমানে সরকারি চাকরিতে রয়েছে, তার লক্ষ্য দেশকে সেবা করা। আর শিহাব নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলেছে।

1000019978.jpg

একে অপরের পাশে থাকা

আমাদের জীবনের যাত্রা যতই পরিবর্তন হোক না কেন, আমরা সবসময় একে অপরের পাশে থাকার চেষ্টা করি। জীবনের কঠিন সময়গুলোতে বন্ধুরা সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে পাশে থাকে। যখনই কোনো একজনের সমস্যার কথা শুনি, আমরা সবাই মিলে তার পাশে দাঁড়াই। কারো পরীক্ষার চাপ, কারো ব্যক্তিগত সমস্যার সময়—আমরা সবসময় একে অপরকে সমর্থন করেছি।মারুফ যখন তার বাবাকে হারায়, আমরা সবাই মিলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।শিহাবের ব্যবসায়িক সমস্যার সময়ও আমরা তাকে মানসিক সমর্থন দিয়েছি। হামজার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনার চাপের সময় তাকে আমরা উৎসাহ দিয়েছি, যাতে সে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

পুনর্মিলন ও স্মৃতিচারণা

প্রতিবছর অন্তত একবার আমরা সবাই মিলে একত্রিত হই, যেন আমাদের পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি আবারও মনে করতে পারি। সেই পুনর্মিলনগুলো আমাদের জীবনের বিশেষ মুহূর্ত। আমরা একসাথে সময় কাটাই, আমাদের স্কুল জীবনের দুষ্টুমি আর মজার ঘটনা নিয়ে হাসি।সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন স্কুলের মাঠে বসে আমরা আমাদের ছেলেবেলার কথা মনে করি। কিভাবে আমরা একসাথে খেলতাম, কিভাবে আমাদের মধ্যে তর্ক হতো, আবার কীভাবে সেই তর্ক মিটিয়ে একসাথে খেলতে যেতাম—এসব স্মৃতিই আমাদের বন্ধুত্বের শক্তি। এই পুনর্মিলনগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের জীবনের যাত্রা যতই আলাদা হোক না কেন, আমরা সবাই একই বন্ধনে বাঁধা।

বন্ধুত্বের মূল্য

আমাদের বন্ধুত্ব শুধু মজার জন্য নয়, এটা আমাদের জীবনের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করেছে। বন্ধুত্বের এই ১৫ বছরের যাত্রায় আমরা অনেক কিছু শিখেছি—সহানুভূতি, সহমর্মিতা, পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একে অপরকে শ্রদ্ধা করা।বন্ধুত্ব মানে শুধু ভালো সময় ভাগাভাগি করা নয়, বরং খারাপ সময়েও একে অপরের পাশে থাকা। জীবনের উত্থান-পতনগুলোতে আমরা একে অপরকে সমর্থন করেছি, যা আমাদের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছে। বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা সময়ের সাথে আরও মূল্যবান হয়ে উঠেছে।

১৫ বছর—a journey that has been filled with countless memories, shared experiences, and unbreakable bonds. Each of us may now be in different corners of the world, pursuing different careers, living different lives, but the thread of friendship ties us together like an unspoken promise.

আমাদের জীবনে বন্ধুত্বের এই বিশেষ অধ্যায় কখনো শেষ হবে না। এই ১৫ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদেরকে জীবনের পথে চলতে সাহায্য করে। বন্ধুত্বের এই মাধুর্য আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে সঙ্গী হবে, এবং আমরা সবসময়ই জানি যে, কোনো কিছুর জন্য হলেও আমরা একে অপরের পাশে থাকবো।আশা করি, আগামী বছরগুলোতে আমাদের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে, এবং আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি সুখ-দুঃখের মুহূর্ত একসাথে ভাগ করে নিতে পারবো।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung S23 Ultra
ধরণ"বন্ধুত্বের ১৫ বছর: এক স্বপ্নের মত"
ক্যমেরা মডেলS23 Ultra
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার বন্ধুত্বের গল্প শুনে ভালো লাগলো। এখন প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন বন্ধু রয়েছে।ধন্যবাদ আপনার বন্ধুত্বের কথা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

ভাইয়া আপনাদের বন্ধুত্বের এই মধুর সম্পর্কের কথা শুনে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। আমার জীবনেও অনেক বন্ধু ছিল। কিন্তু জীবনের বাস্তবতায় সবাইকে হারিয়ে ফেলেছি। যে যার মত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আপনাদের বন্ধুত্বের বন্ধন যেন এরকমই থাকে এই দোয়াই করছি ভাইয়া।