"শৈশবে ক্ষেত থেকে আলু ও বেগুন চুরি করে পিকনিক খাওয়ার গল্প"

in hive-129948 •  2 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

শৈশবের দিনগুলো সবার জীবনেই যেন একরকম মধুর স্মৃতি হয়ে থাকে। আমি নিজেও সেই মধুর শৈশবের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকের ব্লগটি লিখছি, যা এখনো মনে পড়লে মুখে একচিলতে হাসি চলে আসে। গ্রাম বাংলার শিশুদের শৈশব কাটে মাঠে-ঘাটে, খাল-বিলের ধারে, আর ক্ষেতের মধ্যে। আর সেই দিনগুলোর কথা বললে চুরি করে পিকনিক করার গল্পগুলো ঠিক মনকাড়া হয়ে ওঠে।


1000029279.jpg

সোর্স

আমরা ছিলাম একদল দুরন্ত পোলাপান। গ্রামের স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে দুপুরে বাড়ি ফিরতেই আমাদের খেলাধুলার শুরু হতো। বিশেষ করে বর্ষার সময় বৃষ্টি হয়ে গেলে খেলার ধুম পড়ে যেত। গ্রামের পাশের বাগান বা ক্ষেত ছিল আমাদের প্রধান আকর্ষণ। একদিন দুপুরে ঠিক করলাম আমরা পিকনিক করব। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের পিকনিকে খাওয়ার মতো কোনো খাবার নেই। তখনই আমাদের মাথায় আসল, চলো না, ক্ষেত থেকে কিছু বেগুন আর আলু চুরি করে এনে রান্না করি!


আমাদের গ্রামের পাশেই ছিল বড় একটি বেগুন আর আলুর ক্ষেত। মালিক ছিলেন একটু কৃপণ স্বভাবের মানুষ, তাই তার ক্ষেত থেকে কিছু চুরি করা মানে ছিল খুব বড় অ্যাডভেঞ্চার। আমরা কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করে ফেললাম—দুজন থাকবে পাহারায়, আর বাকি চারজন গিয়ে বেগুন ও আলু তুলবে। বিকেলের দিকে, যখন ক্ষেতের মালিক বাড়িতে বিশ্রামে থাকতেন, আমরা সেই সুযোগটাই নিলাম।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, বাতাসে এক ধরনের উত্তেজনা। ছেলেবেলার সেই ছোট্ট হৃদয়ে যে কতটা ভয় আর রোমাঞ্চ মিশে ছিল, তা বলে বোঝানো যাবে না। সবাই দলে দলে ছুটলাম ক্ষেতের দিকে। খুবই সাবধানে পা ফেলে ফেলে, যেন কোনো শব্দ না হয়। মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর সব প্রাপ্তি তখন ওই বেগুন আর আলুর মধ্যে! আরেকজনের ক্ষেত থেকে আলু-বেগুন তোলার মজাই ছিল অন্যরকম। যেমন উত্তেজনা, তেমনি আনন্দ।

1000029280.jpg

সোর্স

আমরা বেগুন আর আলু তুলে সোজা চলে এলাম গ্রামের ধারে বড় বটগাছের নিচে। সেখানে ছিল আমাদের নির্ধারিত পিকনিক স্পট। আমাদের সাথেই ছিল একটি পুরনো পাতিল এবং কিছুরকম মশলা। আর গ্রামের পাশের খালের পানিতে নিয়ে এলাম রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় পানি। এবার শুরু হলো রান্নার পালা। সবাই মিলেমিশে একেকজন একেক কাজ ভাগ করে নিলাম—কেউ আলু- বেগুন কেটে ফেলছে, কেউ আগুন ধরাচ্ছে, কেউ বা পাতিল ধুচ্ছে।আগুন জ্বালানোর কাজটাই কিন্তু ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং! খোলা মাঠে বাতাসের মধ্যেই আগুন টিকিয়ে রাখা সহজ নয়। কিন্তু কোনো রকমে আমরা সেটা করে ফেললাম। পাতিল বসানো হলো, তাতে আলু-বেগুন পড়ল। এবার মশলা মিশিয়ে রান্না করার পালা। তখনকার দিনে আমাদের সবার ঘরেই মাটির চুলায় রান্না হতো, তাই এমন পিকনিক রান্না নিয়ে আমাদের কেউ চিন্তিত ছিল না। সবাই খুব দক্ষতার সাথে পুরো রান্নার কাজ করে ফেললাম।

পিকনিকের সেই মজাটা ছিল অমৃতের মতো। আমাদের জীবনের প্রথম চুরি করা আলু-বেগুন দিয়ে রান্না করা পিকনিক! মুখে তুলতেই মনে হলো, এত সুস্বাদু কিছু আর কখনো খাইনি। মাটির সোঁদা গন্ধ, খালের পানির টাটকা স্বাদ, আর আমাদের কিশোর হৃদয়ের সরলতা সবকিছু মিলে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছিল যে সেই পিকনিক আমাদের জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে চিরকাল।রান্না শেষে আমরা সবাই মিলে একেকজন লুটোপুটি খাচ্ছি, কেউ খেতে খেতে গল্প বলছি, কেউ গান গাইছি। আমাদের সেই আনন্দ আর হাসির শব্দ যেন আকাশে ছড়িয়ে পড়ছিল। মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তগুলোই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। কারো কোনো দায়িত্ব নেই, নেই কোনো ভবিষ্যতের চিন্তা। কেবল সেই মুহূর্তটা উপভোগ করা ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব নেই।

1000029278.jpg

সোর্স

তবে পিকনিকের শেষ দিকে, যখন আমাদের খাওয়া শেষ, হঠাৎ করেই দূর থেকে ক্ষেতের মালিক আসতে দেখলাম। তার চোখে জ্বলজ্বল করছে রাগ। আমরা ভয়ে সবাই পাতিল-পাতা নিয়ে পালাতে শুরু করলাম। কিন্তু বয়স্ক মানুষটি আমাদের পিছু না নিয়ে কেবল চিৎকার করতে থাকলেন। সেই চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজনও বেরিয়ে এল। আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে মনে মনে ভাবছিলাম, আর কোনোদিন ক্ষেত থেকে চুরি করব না!কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। আমরা সেই ঘটনার কিছুদিন পরই আবারও চুরি করে পিকনিক করার পরিকল্পনা করেছিলাম। শৈশবের সেই দিনগুলোতে আমরা বুঝতাম না যে, চুরি করা কতটা অন্যায়। আমাদের কাছে চুরি করা মানেই ছিল অ্যাডভেঞ্চার, আর পিকনিক ছিল আনন্দের চূড়ান্ত মুহূর্ত।

আজকের এই লেখাটি লিখতে গিয়ে ভাবছি, সেই দিনগুলো আর কোনোদিন ফিরবে না। তবে স্মৃতিগুলো আজও আমার হৃদয়ের এক কোণে সতেজ হয়ে আছে। হয়তো সেই পিকনিকের আনন্দ কখনো ফিরে আসবে না, তবে শৈশবের এই গল্পগুলোই আমাদের বড় হওয়ার পথে বিশেষ কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়। এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে সেই মাটির গন্ধ, সেই আলু-বেগুনের স্বাদ, আর সেই দুষ্টুমিতে ভরা দিনগুলোর কথা।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাইয়া মনে হয় চুরি করা জিনিসের স্বাদটা একটু বেশি হয়। অনেক জন মিলে চুরি করতে গিয়েছিলেন আবার কয়েকজনকে পাহারাদার রেখে দিয়েছিলেন। ভীষণ ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার এই শৈশবের স্মৃতি টা জানতে পেরে।যখন এই ধরনের স্মৃতি গুলো বেশি মনে পড়ে তখন খুবই ভালো লাগে।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ‌ভাইয়া।

শৈশবের সেই স্মৃতিগুলো আজও মনে পড়লে শৈশবে বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে।কত সুন্দর সুন্দর সময় কাটাতাম সে সময়।গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

এমন অতীতের ঘটনাগুলো চোখের সামনে আসলে বেশ ভালো লাগে। আসলে ছেলেরা অনেক বিষয় নিয়ে আনন্দ করতে পারে। আর এমনটা ছোটবেলায় অনেক দেখেছি শুনেছি। যাইহোক ভালো লাগলো ভাইয়া ক্ষেত থেকে বিভিন্ন জিনিস সংরক্ষণ করে পিকনিক করেছেন জেনে।

অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়।যাইহোক এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু।