বাপের বাড়ি এবং শ্বশুর বাড়ি।

in hive-129948 •  13 hours ago 

কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17376993183371785478712976011715.jpg



সোর্স


বাপের বাড়ির নাম শুনলেই আমাদের আলাদাই অনুভূতি হয়, যেটা খুবই ভালো অনুভূতি। আর শ্বশুরবাড়ির নাম শুনলেই আমাদের চিন্তাভাবনা পুরোপুরি বদলে যায়। আর এই চিন্তা ভাবনার মধ্যে থাকে একটা অস্বস্তি ভাব। কারণ আমরা প্রত্যেকেই নিজের বাপের বাড়ি যতটা আরামে থাকি এবং রিলাক্সে কমফোর্টেবল থাকতে পারি। শ্বশুর বাড়িতে আমরা অতটাও রিলাক্সে বা কম্ফোর্টেবল থাকতে পারিনা। আর এই সমস্যাটা সবথেকে বেশি হয় পুরুষ মানুষের ক্ষেত্রে। প্রতিটা পুরুষ মানুষের শ্বশুরবাড়ি যখন তারা যায় তখন তাদের জন্য খুবই ভালো ভালো এবং পছন্দমত রান্না বান্না করা হয় এবং তাদের খুবই যত্ন সহকারে আপ্যায়ন করা হয়। তাছাড়াও যতটুকু সময় বা যে কয়দিন তারা শ্বশুরবাড়িতে থাকে তাদের সবসময় শ্বশুর বাড়ির লোক প্রতিনিয়ত যত্ন করতে থাকে, যেন তাদের কোন অসুবিধা না হয় এবং তারা যেন ভালোভাবে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে পারে। তবুও কেন জানিনা প্রত্যেকটা ছেলে তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে বেশিক্ষণ অথবা বেশি দিন থাকতেই চায় না। তাদের নাকি সেখানে অসুবিধা হয় এবং অস্বস্তি বোধ হয়।


কিন্তু কখনো শোনা যায়নি কোন মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে অসুবিধা হচ্ছে বা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে এমন কথা বলতে। কারণ প্রত্যেকটা মেয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মানিয়ে নেয়। এবং শ্বশুরবাড়ির যেমন পরিবেশ আর যেমন লোকজন তাদের সাথেই সেই ভাবে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করে। যদিও কোন মেয়েদের তার শ্বশুরবাড়িতে ছেলেদের মত যত্ন করা হয় না বা পছন্দ মত রান্নাবান্না করে তাদের আপ্যায়ন করা হয় না। প্রত্যেকটা মেয়ের তার শ্বশুরবাড়িতে নিজের কাজ নিজেই করে নিতে হয়। অনেক সময় তো শ্বশুরবাড়ির কোন ব্যক্তির সহযোগিতা থাকে না তাকে এ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। ছেলেরা যেমন তার শ্বশুরবাড়িতে আপ্যায়ন বা যত্ন পায় মেয়েরা তেমন কোন আপ্যায়ন বা যত্ন কিছুই শ্বশুরবাড়ি থেকে পায়না। তবুও একটা মেয়ে তার বাপের বাড়ি থেকে আসার পর শ্বশুরবাড়িতে সারা জীবন কাটিয়ে দেয় কিন্তু একটা ছেলে কিছুদিনের জন্য শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকতে চায় না। মেয়েরা যখন বাপের বাড়ি থাকে তখন তাদের নিজের হাতে করে কোন কাজই করতে হয় না তারা খুব যত্নে এবং আদরে তার নিজের বাবা-মায়ের কাছে থাকে।


বাপের বাড়িতে থাকা অবস্থায় কোন মেয়েরই সংসারের দায়িত্বভার নেওয়া লাগেনা যতক্ষণ তার মা-বাবা তার মাথার ওপরে ছাদ হয়ে থাকে। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি থাকা সত্ত্বেও পুরো সংসারের চাপ এসে পড়ে সেই বাড়ির বউয়ের ওপর। এমনকি শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে যায় তার ওপর। বাপের বাড়িতে যে মেয়েটি ইচ্ছা হলেই এদিক ওদিক ঘুরতে যেতে পারতো শ্বশুরবাড়িতে আসতেই তার গৃহবন্দী জীবন শুরু হয়ে যায়। যখন মেয়েরা বাপের বাড়ি থাকে তাদের অনেক বন্ধু বান্ধবী থাকে কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে আসার পরে আস্তে আস্তে সব বন্ধু-বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ কমে যেতে শুরু করে। সেই কারণে বন্ধু বান্ধবীদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায় এবং আস্তে আস্তে সব বন্ধু-বান্ধবী হারিয়ে যায়। এছাড়াও মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে সারাদিন কাজের চাপে এবং বিভিন্ন কারণে নিজেদেরকে একটু সময় দিতে পারে না বা নিজের একটু যত্ন নিতে পারে না। আর তাই তারা যখন একটু সুযোগ পেয়ে বাপের বাড়িতে আসে তখন তাদের মনে হয় তারা একটু ছুটি কাটাতে এসেছে। আর তখন দেখা যায় মেয়েরা বাপের বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমায় একটু রিলাক্স করে এবং একটু নিজের মত সময় কাটিয়ে নেয়।


আর বাপের বাড়িতে এসে তারা একটু নিজের যত্ন নিয়ে নেয়, কারণ বাপের বাড়িতে কোন মেয়েরই সেই ভাবে কাজ করতে হয় না। কারণ সে জানে তার মা আছে সে সব সামলে নেবে। তাই বাপের বাড়িতে মেয়েরা একটু আরাম করে এবং নিশ্চিন্তে সময় কাটাতে পারে। আসলে একটা ছেলের কাছে শ্বশুর বাড়ি আর বাপের বাড়ির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সেটা খুব একটা কষ্টের হয় না কারণ কোন ছেলেকে তার বাবা-মাকে ছেড়ে নতুন এক পরিবারে যেতে হয় না। কিন্তু একটা মেয়ের ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি আর বাপের বাড়ির মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য হয়ে থাকে। একটা মেয়ে তার নিজের পরিবার নিজের বাবা মাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে আসে নতুন একটা পরিবারে নতুন একজন বাবা মার কাছে। এবং সেই নতুন পরিবেশে তাকে অধিকাংশ সময় সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়। তাই মেয়েদের ক্ষেত্রে বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি আসাটা খুব কষ্টকর হয়ে থাকে। আর আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে যখন সে মেয়েটি বাবা-মায়ের একটিমাত্র সন্তান হয়। তাই ছেলেদের জীবনে শ্বশুর বাড়ি একটু মধুর হলেও মেয়েদের জীবনে শ্বশুরবাড়ি মানেই খুবই আতঙ্কের জায়গা।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

1000026859.jpg

1000026858.jpg

1000026857.jpg

1000026789.jpg

বাবার বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাবার বাড়িতে এমন বিষয়ে রয়েছে যেখানে আপনার দোষ ধরার লোক থাকবে না। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে অবশ্যই দোষ ধরার লোক থাকবে। শ্বশুরবাড়ি কে অনেক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মানিয়ে নিতে হবে এবং অনেক কিছু কাঁধে তুলে নিতে হয়। তাই এই দুইটা স্থানের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। সেখানে নিজেকে সকল কষ্টের মধ্য দিয়ে মানিয়ে নিতে হয়।

বাবার বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি'র একজন মেয়ের জীবন সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক আপনি চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আপনার লেখাগুলো নিঃসন্দেহে দারুন হয়েছে। যাহোক আমাদের মনে রাখতে হবে একটি মেয়ে যখন তার বাবার বাড়িতে থাকে তখন তার পরিচয় সে ওই বাড়ির একজন মেয়ে, কিন্তু একটি
মেয়ে যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন সে শ্বশুরবাড়ির পুত্রবধু এবং সে পরিবারের ভবিষ্যৎ গৃহিণী। তাই শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের কাজের চাপ কিংবা সংসারের চাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা অবশ্যই সহনীয় হওয়া উচিত।