ছোটবেলার একটি বৃষ্টির রাত ও ইলিশ মাছ।

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজ আমি ইলিশ মাছ নিয়ে কিছু কথা শেয়ার করতে আসলাম আপনাদের সাথে। ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ কিন্তু খুবই কম। আমারও দারুন লাগে খেতে কিন্তু অতিরিক্ত কাটার জন্য বিরক্ত ও লাগে। আর ইলিশ মাছ কচু মুখি দিয়ে রান্না করা এবং জাল দিয়ে খাওয়া। এই দুইটাই আমার কাছে সবচেয়ে সেরা লাগে। ইলিশ মাছ জাল দিয়ে খাওয়াকে অন্যান্য এলাকায় কি বলে আমার জানা নেই সঠিক তবে ছোটবেলা থেকে আমাদের এখানে এটাই বলে। কোন প্রকার সবজি না দিয়ে শুধুমাত্র মাছ রান্না করা হয়। একদম মাছের 'র' ফ্লেভারটা পাওয়া যায়।

এখন প্রতিটা ঘরে ঘরে ফ্রিজ। ফ্রিজে মাছ কিনে এনে অনেকদিন ধরে রেখে খাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু আমি যখন ছোট ছিলাম আমার মনে আছে আব্বু বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনে আনতো আর আম্মু তখনই রান্না করে ফেলত। আব্বু অফিস থেকে বাসায় ফিরতো রাত করে। আর আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ ও ছিল না। হারিকেনের আলোতে পড়তে বসতাম। এখন যেমন ওয়েদার, বৃষ্টি ভেজা। ঠিক এরকম সারাদিন বৃষ্টি ভেজা পরিবেশ থাকলে সন্ধ্যার সময়ে সব জানলা দরজা আটকায়ে দিয়ে আমরা রুমের মধ্যেই থাকতাম। বাড়িতে আলোর উৎস বলতে ছিল হারিকেন আর দু-একটা কেরোসিনের বাতি। রাত্রে বাইরে হালকা বৃষ্টির আওয়াজ আর মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া। আমি হারিকেন জ্বালিয়ে টেবিলে বসে পড়াশোনা করতাম আর আব্বুর জন্য অপেক্ষা করতাম কখন অফিস থেকে বাসায় ফিরবে।

কোন কোন দিন আব্বুর আসতে অনেক লেট হতো। রাত আটটা নটার দিকে যখন আব্বু বাসায় এসে বাহির থেকে আমাদের ডাক দিত তখন খুবই আনন্দ লাগত । এমন একটা দিন যেদিন আমি পড়ছিলাম আর আব্বু অফিস থেকে আসার সময় একটা বিশাল বড় ইলিশ মাছ কিনে এনেছিল। ওই সময় তো বিদ্যুৎ ছিল না, ফ্রিজ তো দূরের কথা। আম্মু তখনই ইলিশ মাছটা নিয়ে গিয়ে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলেছিলেন। আমাদের রান্নাঘর ছিল আমাদের ঘর থেকে আলাদা। রান্নার আয়োজন শেষ করে আম্মু তখনই ওই পুরো মাছটাই রান্না করে ফেলেছিলেন। আমাদের রান্নাঘরে আলো বলতে ছিল একটা কেরোসেনের বাতি।

এদিকে রান্না শেষ না হতেই যখন নাকে গন্ধ আসছিল তখন আর পড়ার টেবিলে একেবারে মন বসছিল না। খিদে তে পেট চো চো করছিল। অবশেষে রান্না শেষ হওয়ার পর আমরা সবাই একসাথে খেতে বসেছিলাম। আমরা মেঝেতে বসে খেতাম। আম্মু যখন কড়াইয়ের ঢাকনাটা উপর করেছিলো তখন নাকে দারুণ একটা ঘ্রাণ আসছিল। আর আমার এখনো মনে আছে কড়াই ভর্তি মাছ রান্না ছিল সেদিন। কড়াইটাও ছিল বেশ বড়। পাত পেড়ে সবাই পেটভরে খেয়ে ছিলাম সেদিন। ওরকম তৃপ্তি কিনতে পাওয়া গেলে বড়লোকেরা হয়তো লাখ টাকা দিয়েও কিনে আনতো।

বড় বড় সাইজের ইলিশ মাছ পাতে নিয়ে তৃপ্তি সহকারে মন প্রাণ ভরে খেয়ে বৃষ্টির রাতে নিশ্চিতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ায় এক অন্যরকম শান্তি ছিলো। চিন্তা বলতে শুধুমাত্র ওই লেখাপড়াই। তাছাড়া আর কোন টেনশন ছিল না মাথায়। যাইহোক এই গল্পটা বললাম এর কারণ হচ্ছে আজকের মত এই বৃষ্টি বাদলের রাতে ইলিশ মাছের কথা মাথায় আসলে ওই দিনটার কথা-ই কেন জানিনা মনে পড়ে। ওই তৃপ্তিটা এখন আর পাইনা। অনেক করে মাছ কিনে এনে ফ্রিজে রেখে একটু একটু করে খাওয়া, আর ওই পুরনো দিনগুলোর মতো কড়াই ভর্তি মাছ রান্না করে টাটকা মাছ খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বিশাল।

আজ বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হয়েছিল । বাইরের পরিবেশটাও ভিজে ভিজে। ওই দিনটার কথা মনে পড়ল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করে ফেললাম। আমার ছোটবেলার সেই আমি যেন আমাকে ফিরে যেতে বলছে সেই দিনগুলোতে। ইন্টারনেট নেই, বিদ্যুৎ নেই - প্রকৃতিই যেন ছিল সব বিনোদনের একমাত্র উৎস। এখন প্রকৃতি থেকে আমরা অনেক দূরে। এজন্যই হয়তো প্রকৃতির আসল স্বাদ আমাদের আর অনুভব করতে দেয় না।

যাই হোক আমি আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। মাঝে মধ্যে এরকম কিছু স্মৃতিচারণ করতে ভালোই লাগে আপনাদের সাথে। এ কথাগুলো অব্যক্তই ছিল, আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম অনেকটাই ভালো লাগলো। দেখা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে ইনশা আল্লাহ্। আল্লাহ্ হাফেজ।

fish-5520132_1280.jpg
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY



IMG_20220926_174120.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abbVD.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

বর্তমানে আমরাই প্রকৃতিকে আস্তে আস্তে দূরে ঠেলে দিচ্ছি। আর সেজন্যই শৈশবের সেই আনন্দ বিজরিত দিনগুলো হারিয়ে ফেলেছি। সারাদিন অপেক্ষার পর রাতে বাবাকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতিটা সত্যি অনন্য। হয়তো আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না সেই শৈশবের টাটকা ইলিশ মাছ রান্না করে পরিবারের সবাই মিলে পেট পুরে খাওয়ার সুখ। সুখ যদি হাটে বাজারে কিনতে পাওয়া যেত তাহলে ধনীরা ফকির হয়ে যেত কারণ ধনীরা সেই সুখ কেনার নেশায় মত্ত হয়ে যেত। আপনার শৈশবের বৃষ্টির রাত ও ইলিশ মাছ খাওয়ার স্মৃতিচারণ টি খুবই সুন্দর হয়েছে।

আমাদের এখানেও কোন কিছু ছাড়া ইলিশ মাছ রান্না করতে আম্মাকে দেখেছি। সেটা শুধু পানি দিয়ে রান্না করা হতো। সাথে কিছু মসলা দেওয়া হতো। সেটাকে আমাদের এখানে পানিখোলা বলা হতো।অবশ্য ভাইয়া কি সেটাকে বুঝাতে চেয়েছেন, কিনা জানি না।সেই রান্নায় ইলিশ মাছের পুরোপুরি ফ্লেভার পাওয়া যেত।অবশ্য এখন এত বড় মাছ খুব একটা দেখা যায় না। যা কিছু একটা মাঝে মধ্যে দেখা যায়।তা আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকদের কেনার সামর্থ্যের বাইরে। অবশ্য এটা ও ঠিক আগের মত রান্নার স্বাদও খুব একটা পাওয়া যায় না।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর ও চমৎকারভাবে ছোটবেলার বৃষ্টির রাত ও ইলিশ মাছের গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আসলে ভাই এখন তো ফ্রিজ হয়েছে মাছ কিনে ফ্রিজে রাখা যায়। কিন্ত আগে ফ্রিজ ছিলনা তখন বাজার থেকে মাছ কানে আনলেই জ্বাল বা রান্না করতো। আপনার বাবা অফিসে থেকে রাতে আসতো আপনার অপেক্ষা করতেন, বিদ্যুৎ ছিল না তাই হারিকেনের আলোতে পড়তেন। আসলে হারিকেনের আলোতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ছিল। মোমবাতি ছিল। আপনার বাবা একটু দেরিতে অফিস থেকে বাড়িতে এসে আপনাদের ডাকত তখন খুবই আনন্দ হতো, সেই দিন গুলো খুবই আনন্দের ছিল।

ওরকম তৃপ্তি কিনতে পাওয়া গেলে বড়লোকেরা হয়তো লাখ টাকা দিয়েও কিনে আনতো।

দারুণ লিখেছেন তো দাদা,সত্যিই আগে খুবই মজা হতো হ্যারিকেন আলো ছিল একটি স্মৃতি আর সঙ্গে গ্রাম্য পরিবেশ।এখন সবকিছুরই হাওয়া বদলে গেছে আগে ছোট ইলিশের গন্ধ ছিল।একটি ইলিশ মাছ রান্না করলে কয়েক বাড়ি তা টের পেত।কিন্তু এখন সেই গন্ধ আর নেই ইলিশ মাছের।ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে,ধন্যবাদ আপনাকে।

ইলিশ মাছ জাল দিয়ে খাওয়াকে অন্যান্য এলাকায় কি বলে আমার জানা নেই সঠিক তবে ছোটবেলা থেকে আমাদের এখানে এটাই বলে।

আগেকার সময় যখন ফ্রিজ ছিল না তখন সবাই এভাবেই মাছ কেটে জাল দিয়ে রাখত। আসলে সেই মাছ খেতে বেশ ভালো লাগতো। কড়াই ভর্তি মাছ থাকত। একটু একটু করে খাওয়া হত আবার গরম করে রাখা হতো। আসলে সেই অতীত স্মৃতিগুলো হারিয়ে গেছে। এখন সবার মাছ ফ্রিজে ঢুকে যায়। আর ফ্রিজ থেকে বের করে সেই মাছগুলো খেতে খুব একটা ভালো লাগে না। সত্যি ভাইয়া আপনার অতীতের স্মৃতিগুলো জেনে অনেক ভালো লাগলো। লাখ টাকা দিয়েও সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো কিংবা অনুভূতিগুলো কিনতে পাওয়া যাবে না।

আমি বোধহয় যখন ক্লাস ১ এ পড়ি তখন এই বর্তমানের এই বিল্ডিং এ উঠেছিলাম।তখন আইপিএস আনা হয়নি,তখন এমন মোমবাতি,হারিকেন নিয়ে পড়তাম।যদিও কারেন্ট চলে গেলে আর পড়া হতোনা।আপনার আজকের পোস্ট পড়ে তা মনে পরে গেলো।ইলিশ মাছ প্রিয় তবে এলার্জীর জন্যে বেশি খেতে পারিনা।

আমি বহুদিন পর কালকে মন মতন খেয়েছি। এতদিন ভয়েই মাছের কাছে যেতাম না।

আমার ও একই অবস্থা ভাই,আপনার মতো খেয়ে ফেলি প্রায়।😛😛

ভাইয়া আপনার ইলিশ মাছের পোস্টে আপনার অতিতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। সত্যি ভাইয়া আমার বড় ভাই বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনে আনতো, মা সেই ইলিশ মাছ একটা কড়াইতে শুধু জ্বাল দিয়ে রাখতো কিন্তু সেই মাছে যে পানিটা ছিল সেটার স্বাদ এখনকার ইলিশ মাছে পাওয়া যায় না। তখন ইলিশ মাছে যে ঘ্রাণ ছিলো, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। ধন্যবাদ ভাই, এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

ইলিশ মাছ নিয়ে অসাধারণ পোস্ট করেছেন দাদা। আপনার পোষ্টটি পড়ার সময় আমিও ক্ষনিকের জন্য সেই ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। আহ্ কি ঘ্রাণ ছিল সেই ইলিশ ভাজার! প্রতিবেশীদের বাসায়ও যদি ইলিশ ভাজা হতো সেই ঘ্রাণ নাকে চলে আসতো। আসলে প্রযুক্তি যত এগিয়ে যাচ্ছে আনন্দগুলো তত ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

ঠিক বলেছেন ভাই , আমরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে রয়েছি। সত্যি সেই ছোটবেলার ইলিশ খাওয়ার কথা মনে পড়লে আমারও জিভে জল এসে পড়ে। কি স্বাদ সেই ইলিশের। এখন কেন জানি ইলিশ মাসেও আগের স্বাদ বুঝিনা। বাজার থেকে যে সকল লিস নিয়ে আসি সে আগের মত আর স্বাদ পাইনা। শুনেছি এখন ইলিশও পুকুরে চাষ হচ্ছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।